নয়াদিল্লি: দীর্ঘ ৪৫ বছর পর সোমবার রাতে ভারত-চিন সীমান্তে সেনা সংঘর্ষে মৃত্যু হয় ২০ জন ভারতীয় জওয়ানের৷ পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় শুরু হয় ভারত-চিন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ৷ ১৯৭৫ সালে অরুণাচল প্রদেশের চিন টুলুং লায় অসম রাইফেলসের টহলদার বাহিনীর উপর হামলা চালিয়েছিল চিনা ফৌজ। এই হামলায় মৃত্যু হয়েছিল চার ভারতীয় জওয়ানের৷ এর আগে ১৯৬৭ সালে সিকিমের নাথু লা এবং চো লায় ভারতীয় ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশকারী লালফৌজকে এলাকা ছাড়া করেছিল ভারতীয় সেনা।
সোমবার রাতে গালওয়ানে টহল দেওয়ার সময় মুখোমুখি হয় ভারত ও চিন সেনা৷ শুরু হয় সংঘর্ষ৷ তবে এই দিন কোনও গোলাগুলি চলেনি৷ হাতাহাতি, পাথর ছোড়াছুড়ি এবং লোহার রড দিয়েই ভারত ও চিন সেনার মধ্যে মারামারি হয়৷ এই ঘটনায় ২০ জন ভারতীয় সেনার মৃত্যু হয়েছে৷ প্রথমে বলা হয়েছিল এক কর্নেল-সহ তিন ভারতীয় সেনা প্রাণ হারিয়েছেন৷ পরে মঙ্গলবার রাতে ভারতীয় সেনার তরফে আরও এক বিবৃতিতে জানানো হয়, গুরুতর আহত অবস্থায় আরও ১৭ জন সেনা প্রবল ঠান্ডার কারণে মারা গিয়েছেন। এই সংঘর্ষে চিনেরও একাধিক সেনার মৃত্যু হয়েছে বলে সেনা সূত্রে খবর৷ তবে ঠিক কতজন চিনা সেনা মারা গিয়েছে, তা নিয়ে কোনও বিবৃতি দেয়নি চিন৷
গত এপ্রিলের শেষ থেকেই গন্ডোগোলের সূত্রপাত৷ প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার উপর বিতর্কিত এলাকায় হাজার হাজার সেনা পাঠাতে শুরু করে চিন৷ এই এলাকায় বিল্ডিং বানানোর উদ্যোগ নেয় তারা৷ রীতিমতো ঘাঁটি গাড়তে শুরু করে৷ এই বিতর্কিত এলাকা ছাড়তে নারাজ চিনা ফৌজ৷
চিনের মূল আপত্তি ছিল, দারবুক থেকে দৌলত বেগ ওল্ডি বায়ুসেনা ঘাঁটি পর্যন্ত প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ভারতের রাস্তা তৈরি নিয়ে৷ পেট্রোলিং পয়েন্ট ১৪-এ শাইয়োক নদীর উপরে সেতু তৈরি রুখতে পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকা, নাকু লা এবং প্যাংগং লেকের উত্তর প্রান্তে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ডের কয়েক কিলোমিটার ভিতরে ঢুকে আসে চিনা ফৌজ। তার পর থেকে সীমান্তে মাঝেমধ্যেই সংঘাতে জড়াচ্ছে দুই দেশ৷ মে মাসেও প্যাংগং হ্রদের কাছে ভারতীয় ও চিনা সেনার ধস্তাধস্তি হয়৷ তবে এই সংঘর্ষে কোনও হতাহতের খবর নেই৷ এর পর থেকেই দফায় দফায় বৈঠক করেছে দুই দেশের সেনা আধিকারিকরা৷ কিন্তু সীমান্তে উত্তেজনা কমেনি৷ মেলেনি সমাধানসূত্র৷ সোমবার তা আরও ভয়াবহ রূপ নেয়৷
১৯৬২ সালে হিমালয়ে দু’দেশের সীমান্তে প্রথম ভারত চিন যুদ্ধ হয়৷ প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা তৈরির মধ্যে দিয়ে দু’দেশের সেনারা সংঘর্ষ বিরতি ঘোষণা করে৷ প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা দিয়ে চিন ও ভারত সীমান্তকে ভাগ করা হয়েছে৷ তবে লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল নিয়ে বিতর্ক রয়েই গিয়েছে৷ বিশেষত পশ্চিম লাদাখ অঞ্চলে এলএসি নিয়ে রয়েছে বিতর্ক৷ দুই দেশই এই অঞ্চলে তাদের আধিপত্য বিস্তার করতে চাইছে৷ দুই দেশই এই অঞ্চলে গড়ে তুলেছে সড়ক, বিমান ঘাঁটি৷ পূর্ব হিমালয়ের প্রায় ৯০ হাজার স্কোয়ার কিলোমিটার এবং পশ্চিম হিমালয়ের ৩৮ হাজার স্কোয়ার কিলোমিটার এলাকা নিজেদের বলে দাবি জানিয়েছে চিন৷ যা মেনে নেয়নি ভারত৷