নয়াদিল্লি: দেশ থেকে অনুপ্রবেশকারীদের তাড়াতে বদ্ধপরিকর মোদি সরকার৷ সেই লক্ষ্যে পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান থেকে আসা অ-মুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব প্রদানের উদ্দেশ্যে আনা নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে অনুমোদন দিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা৷ এই বিলে নির্বাচিত ৬টি ক্ষেত্রে অবৈধ অভিবাসীদের ছাড় দেওয়ার জন্য যে আইনগুলি ছিল মূলত সেই আইনেই সংশোধন করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর৷ বিলটি আগামী সপ্তাহে সংসদে গৃহীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে৷
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে নির্বাচিত বিভাগগুলিতে অবৈধ অভিবাসীদের, মূলত হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ ও পার্সী এই ৬টি সম্প্রদায়কে ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদান করার কথা উল্লেখ করা হলেও প্রতিবেশী দেশ থেকে আসা মুসলিমদের বিষয়ে কোনও উল্লেখ করা হয়নি৷ বিলে বলা হয়েছে, আফগানিস্তান পাকিস্তান, বাংলাদেশ থেকে যে অমুসলিমেরা অর্থাৎ হিন্দু, পার্সি, শিখ, খ্রিস্টানরা ধর্মীয় পীড়নের কারণে এদেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন, তাঁদেরকেই নাগরিকত্ব দেবে সরকার৷ স্বভাবতই সেক্ষেত্রে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ নীতির প্রশ্নে সরকারের ভূমিকা নিয়ে বিরোধীদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে বিলটি৷
যদিও জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা বাতিলের সিদ্ধান্তের মতোই এই ভিডিও সংসদে গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার পাবে বলে মঙ্গলবারই দলীয় সাংসদদের উদ্দেশ্যে জানিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং৷ অন্যদিকে মঙ্গলবারই রাঁচিতে এক নির্বাচনী সভায় গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, ২০২৪ সালের আগে গোটা দেশে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি তৈরি করে অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করবে সরকার৷
তবে লোকসভা অনুমোদন পেলেও রাজ্যসভাতে, যেখানে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই, সেখানে এই বিল পাস করানো কঠিন হবে বলেই মনে করা হচ্ছে৷ কংগ্রেস, তৃণমূল, ডিএমকে, সমাজবাদী পার্টি, বাম এবং রাষ্ট্রীয় জনতা দল ইতিমধ্যেইএই বিলের বিরোধিতা করেছে৷ “প্রতিবেশী ধর্মান্ধ দেশগুলিতে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে, তাঁরা বারবার নির্যাতনের শিকার হয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন৷ ৬ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নাগরিকত্ব প্রদানের লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ যা দেশের সর্বধর্ম সমন্বয়কে প্রমাণ করে”, বলেন রাজনাথ সিং৷
এদিকে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল সংসদ অধিবেশনে সীলমোহর পাবে বলে যখন আশাবাদী দেশের শাসক দল, তখন বিলটি মন্ত্রিসভায় ছাড়পত্র পেয়েছে এই খবর পাওয়ার পরই জ্বলে উঠলো আসাম৷ বিলে সংখ্যালঘুদের কথা উল্লেখ করা হয়নি মূলত এই খবর থেকেই বুধবার অসমের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করে অসমের সংখ্যালঘু সংগ্রাম পরিষদ৷ একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনওয়ালের কুশপুতুল দাহ করেন সংগঠনের সদস্যরা৷ পাশাপাশি বিলের প্রতিলিপিও দাহ করে তারা৷ গোটা অসমের পাশাপাশি দেশজুড়ে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে সংগঠনের তরফ থেকে৷
লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরোধিতা করে লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল জোট সঙ্গী অসম গণ পরিষদ,এমনকি এই বিলের বিরোধিতা করে নাটকীয় ভাবে ক্ষমতাসীন জোট সরকার থেকেও বেরিয়ে এসেছিল তারা তাঁরা৷ তবে বিলটি তখনকার মতো বাতিল হয়ে যাওয়ার পরে ফের জোটে ফেরে অগপ৷ তবে নাগরিকত্ব বিলের প্রশ্নে অবস্থানে অনড় থাকবেন বলেও জানিয়েছিলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল৷