নয়াদিল্লি: নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতায় যখন তোলপাড় গোটা ভারতবর্ষ৷ তখন নাগরিকত্ব বিষয়ে অস্বচ্ছতা রেখেই দেশের নাগরিকদের পরিবারভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ এবং একইসঙ্গে জনগণনার কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হল কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভায়৷ যদিও এই বিষয়টিকে ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার (এনপিআর) আপডেশন বা জাতীয় জনসংখ্যাপঞ্জী পুনর্নবীকরণ বলেই উল্লেখ করা হয়েছে কেন্দ্রীয় বিবৃতিতে৷ কারণ এনপিআর-এর অর্থ দেশের নাগরিকদের একটি সুষ্ঠু তালিকা তৈরি করা৷ তার আগে এবিষয়ে কোনো সংশোধন বা সংযুক্তিকরণ করার থাকলে সরকার নিযুক্ত প্রতিনিধিরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে নাগরিকদের সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করেন এবং সেইসব তথ্য অনুসারে জাতীয় জনসংখ্যাপঞ্জী তৈরী হয়৷ সেক্ষেত্রে ২০২১- এর জাতীয় জনসংখ্যাপঞ্জী তৈরীর আগে ২০২০ সালেই এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে চাইছে কেন্দ্র৷ তবে এবার একইসঙ্গে জনগণনার কাজটিও সেরে ফেলতে চাইছে কেন্দ্র৷
জনগণনা কমিশন জানিয়েছে, দেশের প্রত্যেকটি স্বাভাবিক বাসিন্দার পরিচিতি সম্পর্কে তথ্য রাখতেই জাতীয় জনসংখ্যাপঞ্জী তৈরি করা হয়৷ তাই ভারতের বসবাসকারী প্রত্যেক বাসিন্দার জাতীয় জনসংখ্যাপঞ্জীতে নাম তোলা বাধ্যতামূলক৷
এক্ষেত্রে সরকারি প্রতিনিধিরা প্রত্যেক বাসিন্দাকে নিজেদের তথ্য জানাতে হবে, যেমন, নিজের নাম,দেশ,জন্মস্থান, বাবা-মায়ের নাম,বাড়ির কর্তার সঙ্গে সম্পর্ক, স্বামী বা স্ত্রীর নাম (বিবাহিত হলে), বর্তমান ঠিকানা, বর্তমান ঠিকানায় বসবাসের মেয়াদ, স্থায়ী ঠিকানা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা৷ কাজ শুরু হবে ২০২০-র ১ এপ্রিল, চলবে ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০ পর্যন্ত৷ দেশের স্বীকৃত সাধারণ নাগরিকদের তালিকা তৈরির জন্য জাতীয় জনসংখ্যাপঞ্জীর এই কাজ গ্রাম, শহর, উপজেলা, জেলা বা সামগ্রিক ভাবে দেশের প্রত্যেকটি রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত৷
এনপিআর-এ এখানকার সমস্ত বাসিন্দাদের একটি তালিকা রয়েছে, যারা কমপক্ষে ৬ মাস ধরে কোনও এলাকায় বাস করেছেন এবং আগামী ৬ মাস বা তারও বেশি সময় সেই অঞ্চলে থাকার পরিকল্পনা করছেন৷ যদিও রেজিস্ট্রার জেনারেল এবং সেন্সাস কমিশনারের ওয়েবসাইট অনুসারে দেশের মধ্যে শুধুমাত্র অসমকেই ছাড় দেওয়া হচ্ছে৷ বাকি সব রাজ্যেই এনপিআর বাধ্যতামূলক বলেই জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷ জাতীয় জনসংখ্যাপঞ্জী (এনপিআর)-র জন্য ৩৯৪১ কোটি এবং জনগণনার জন্য ৮৭৫০ কোটি টাকা মিলিয়ে মোট প্রায় ১৩০০০ কোটি বরাদ্দ করা হয়েছে৷
১০ বছর অন্তর দেশে জনগণনা হয়৷ তার আগে সরকারের প্রতিনিধিরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে নাগরিকদের পরিচয় সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেন৷ তবে তার জন্য কোনও পরিচয়পত্র বা নথির প্রয়োজন হয় না, শুধুমাত্র মৌখিক তথ্যের উপর ভিত্তি করেই তৈরি হয় এনপিআর৷ ২০১১ সালে জনগণনার আগে ২০১০ সালে প্রথম এনপিআর-তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল৷ তার পর ২০১৫ সালে সেই তথ্য ডিজিটাইজেশনের কাজও সম্পূর্ণ হয়েছে বলে জানিয়েছে জনগণনা কমিশন৷ এবার ২০২১ সালের জনগণনার আগের বছরেই ২০২০-তেই এনপিআর তথ্য আপডেট করার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা৷
পুরো বিষয়টি জানার পর এনপিআর এবং এন আর সি নিয়ে বিভ্রান্তি হতেই পারে৷ কিন্তু দুটি প্রক্রিয়া আলাদা৷ তবে দুটি ক্ষেত্রেই সাধারণ বিষয় একটাই যে প্রত্যেক বাসিন্দার আবশ্যিকভাবে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে প্রমাণ থাকতে হবে৷ এনপিআর মৌখিক হলেও সরকারি প্রতিনিধিরা পারিবারিক খোঁজখবর নিতে এসে কোনোভাবে সন্দেহ প্রকাশ করলে সেবিষয়ে কিকি পদক্ষেপ হতে পারে সেটা শেষপর্যন্ত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের আওতায় পড়তে বাধ্য৷ তাই হয়তো পশ্চিমবঙ্গ সহ কেরল, পাঞ্জাব এন আর সি এবং সিএএ ইস্যু সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এনটিআর স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ এক্ষেত্রে মঙ্গলবারই অভয় দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ৷ তিনি তিনি বিষয়টি বোঝাতে না পারলেও এন আর সি-র মত করেই অভয় দিয়েছেন যে এর ফলে কোন নাগরিককে কোন রকম অসুবিধে সম্মুখীন হতে হবে না৷ এমনকি এনআরসির মত এন পি আর নিয়েও বিরোধীরা দেশের মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে বলেও দুঃখ প্রকাশ করেছেন তিনি৷