কলকাতা: করোনার তৃতীয় ঢেউ আসার আগেই চোখ রাঙাচ্ছে ‘ডেল্টা ভেরিয়েন্ট’! করোনা আক্রান্তদের জিন বিশ্লেষণে উদ্বেগের ছবি! পরীক্ষা হওয়া ৯০% রোগীর শরীরেই মিলেছে ‘ডেল্টা ভেরিয়েন্ট’! নয়া এই স্ট্রেন অনেক বেশি সংক্রামক! উদ্বেগ বাড়াচ্ছে কেন্দ্রের নয়া রিপোর্ট!
কেন্দ্রের তরফ থেকে শুক্রবার জানানো হয়েছে, ৪৫০০০ করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির নমুনার মধ্যে ৪৮ জনের শরীরে ডেল্টা প্লাসের উপস্থিতি মিলেছে। এর মধ্যে মহারাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যা সর্বাধিক। ৪৮ টির মধ্যে মহারাষ্ট্রে ২০টি, তামিলনাড়ুতে ৯ টি, মধ্যপ্রদেশে ৭ টি, কেরালায় ৩ টি, পাঞ্জাব ও গুজরাটে ২টি করে এবং অন্ধ্রপ্রদেশ, রাজস্থান, ওড়িশা, জম্মু ও কর্ণাটকে ১টি করে ডেল্টা প্লাস আক্রান্তের নমুনা মিলেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, ভারতে করোনা সংক্রমণের ৯০% ঘটনাই করোনার ডেল্টা প্রজাতি দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে।
কী এই ডেল্টা প্লাস? ভারতে ‘ডেল্টা প্লাস’ নামে পরিচিত এই রূপটির বিষয়ে প্রথমবার উল্লেখ করা হয় ‘পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড’ বুলেটিনে। ডেল্টা বা B.1.617.2 প্রজাতি রূপ পাল্টে নতুন ডেল্টা প্লাসে পরিবর্তিত হয়েছে। ডেল্টার এই রূপ পরিবর্তনের ফলে স্পাইক প্রোটিন মিউটেশন K417N অর্জন করে, যা বৈজ্ঞানিক ভাবে AY.1 নামে পরিচিত। Sars-Cov-2 এর এই পরিবর্তনের ফলে ভাইরাস সরাসরি মানব কোষের ভিতরে প্রবেশ করে সংক্রমণ ছড়ায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ডেল্টা প্লাস প্রজাতি একস্থান থেকে অন্যস্থানে আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তবে অন্যান্য রূপের তুলনায় এই নতুন স্ট্রেনটি কতখানি মারাত্মক তা এখনও স্পষ্ট নয়।
প্রথম কোথায় দেখা মেলে? মার্চে ডেল্টা প্লাসে সংক্রমিত ব্যক্তির প্রথম সন্ধান মেলে ইউরোপে। তবে এই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে চলতি মাসে। পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ডের ৭ জুনের একটি রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, ৬৩ জনের জিনোমে K417N এ পরিবর্তিত হওয়া ডেল্টা রূপের সন্ধান মিলেছে GISAID এর সমীক্ষায়।
বিজ্ঞানীরা ইউরোপ, আমেরিকা এবং এশিয়ার ১২৭ টি ঘটনার সাথে সাথেই মার্চে ইউরোপে পাওয়া সংক্রণকেই এজন্য দায়ী করেছেন বলে জানিয়েছেন DIGIB এর ক্লিনিক্যান এবং কম্পিউটাশানাল বায়োলজিস্ট ডা. বিনোদ সাকারিয়া। তিনি আরও জানান, বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন জিনোমে AY.1 অথবা B.1.617.21 এর বংশের অংশ মিলেছে। এর মধ্যে বেশীরভাগই পাওয়া গিয়েছে এশিয়া, ইউরোপ এবং আমেরিকা থেকে। পাশাপাশি, বিটা বা B.1351 প্রজাতিরও K417N এ পরিবর্তিত হওয়ার ঘটনা দেখা গিয়েছে, যা অনেকখানি উদ্বেগের বলেই মনে করছে বিজ্ঞানীমহল।
আরও কোথায় করেনার এই প্রজাতির সন্ধান পাওয়া যায়? করোনার এই নতুন প্রজাতির কথা পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড প্রথম ১১ জুনের একটি বুলেটিনে প্রকাশ করে। যদিও বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করেন, ৭ জুনেই ভারতে ৬ জনের জিনোমে ডেল্টা প্লাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়। যদিও ভারত সরকার জানিয়েছে, পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ডের বুলেটিন প্রকাশ্যে আসার পর ৫ এপ্রিলের সংগ্রহ করা নমুনায় বিশেষজ্ঞরা ডেল্টা প্লাস প্রজাতির সন্ধান পায়। ভারতের পাশাপাশি করোনার এই নতুন প্রজাতি ছড়িয়ে পড়েছে আমেরিকা, ইংল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, নেপাল, চিন, জাপান, পর্তুগাল, পোল্যান্ড এবং রাশিয়াতেও।
এই ধরনের রূপ পরিবর্তন উদ্বেগের কিনা তা বোঝা যায় তা কতখানি সহজে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে , অ্যান্টিবোডির ক্ষমতা কতখানি কমছে এবং ভ্যাকসিনের প্রভাবশালীত্বের উপর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রয়টার্স কে পাঠানো একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ডেল্টা প্লাস প্রজাতিকে ডেল্টা প্রজাতির অংশ হিসাবেই ধরা হচ্ছে এবং অন্যান্য প্রজাতি গুলি ও তাদের পরিবর্তনের সাথে সাথেই এটিকে নিয়েও গবেষণা চলছে। এই ধরনের সংক্রমণ কতখানি উদ্বেগের? ভারত সরকার করোনার এই প্রজাতিকে যথেষ্ট উদ্বেগের বলেই মনে করছে। সরকারের তরফ থেকে সকলকে করোনা সংক্রান্ত সমস্ত নিয়মকানুন মেনে চলতে বলা হয়েছে। কনটেইনমেন্ট জোন তৈরির সাথে সাথেই আরও বেশি করোনা টেস্ট এবং ভ্যাকসিন দেওয়ার উপর জোর দিচ্ছে সরকার।
এর বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন কতখানি কার্যকর? সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, কোভিশিল্ড এবং কোভ্যাক্সিন উভয়ই করোনার আলফা,বিটা, গামা এবং ডেলটা প্রজাতির ক্ষেত্রে কার্যকর। যদিও ডেল্টা প্লাসের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কতখানি তা এখনও স্পষ্ট করে জানাতে পারেননি গবেষকরা।