নয়াদিল্লি ও কলকাতা: অযোধ্যার রায় নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, মসজিদ তৈরির পর থেকে ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত তার ভিতরে মুসলমানরা নামাজ পড়ত তা কেন প্রমাণ দিতে হবে? ওই জমিতেই যে ভগবান শ্রী রামের জন্ম হয়েছিল, সেই প্রমাণ হিন্দুরা কী দিতে পেরেছে? যদি না পারে, তবে কীসের ভিত্তিতে রামলালা বিরাজমান বিতর্কিত ২.৭৭ একর জমির মন্দির তৈরি’র জন্য পেলেন?
৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট যে ১০৪৫ পাতার রায় দিয়েছে, সেই রায় পড়ে আইন বিশেষজ্ঞরা অনেকেই বলেছেন, রায়ে বলা রয়েছে, অযোধ্যার ওই জমিকে হিন্দুরা যে ভগবান শ্রী রাম চন্দ্রের জন্মভূমি বলে দাবি করেছে, তা একটি বিশ্বাস৷ এই বিশ্বাসের মধ্যে কোনও ভণ্ডামি নেই৷ মুসলমানরাও এই বিশ্বাস নিয়ে কোনও প্রশ্ন তোলেনি৷ এই বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করেই সুপ্রিম কোর্ট রামলাল বিরাজমানের পক্ষে রায় দিয়েছে৷
অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়াতে বলেছেন, বিশ্বাসে মিলায়ে বিচার৷ কিন্তু, আইনের পেশার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বারবার বলেছেন, এই রায় দেশের সাংবিধানিক সার্বভৌমত্বকে অটুট রেখেই দেওয়া হয়েছে৷
তবে প্রশ্ন থামেনি, অনেকেই বলেছেন, কোর্ট রায়ে বলেছে, আদালত বিশ্বাস বা আস্থার ভিত্তিতে জমির মালিকানা ঠিক করে না৷ তাহলে, একটি বিশ্বাসের ভিত্তিতে কীভাবে এই রায় দেওয়া হল?
রায়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, বাবরি মসজিদের ভিতরের চত্বর যে শুধু মুসলমানদের দখলেই ছিল তা প্রমাণ করতে পারা যায়নি৷ কিন্তু হিন্দুরা মসজিদের বাইরের জমিতে পুজো করত, তার প্রমাণ রয়েছে৷
সেই ক্ষেত্রে অনেকেই বলছেন, জমির দাবিতে হিন্দু পক্ষের মত সঙ্গত বলেছে কোর্ট৷ কারণ হিন্দুরা ওই এলাকায় আগে থেকে এসেছে৷ কিন্তু, মসজিদের নীচে রামমন্দির ছিল, ওটাই রাম জন্মভূমি, তার কি কিছু প্রমাণ রয়েছে? উত্তর, না৷ কোর্ট এএসআই-এর রিপোর্ট নিয়ে যা বলেছে তা হল, মন্দিরের নিচে কিছু স্থাপত্য ছিল তা পরিষ্কার৷ কিন্তু তার সঙ্গে ইসলামিক স্থাপত্যের কোনও কোনও মিল নেই৷ তবে তা যে ম9নদীর তাও স্পষ্ট বলা যায় না৷
এখানেই আবার প্রশ্ন, তাহলে কিসের ভিত্তিতে রামলাল জমি পেলেন? উত্তর, এটি শুধুমাত্র জমির বিবাদ৷ হিন্দুদের বিশ্বাস এটি রাম জন্মভূমি৷ তা সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডেরও মেনে নিতে আপত্তি নেই৷ সুতরাং দেশের একটা বজায় রাখতে এই রায়৷ বাবরি মসজিদ ভেঙে বা সেখানে রামলালার মূর্তি বসিয়ে যা ক9রা হয়েছে তা অন্যায়৷ সেই কারণেই মুসলমানদের ন্যায় দিতে মসজিদ তৈরির জন্য ৫ একর জমি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ বাবরি মসজিদের লাগোয়া ৬৭ একর জমি বা অযোধ্যার অন্য কোনও জায়গায় সরকারকে মসজিদের জন্য জমি দিতেই হবে৷
প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ১৮৫৭ থেকে ১৯৪৯ পর্যন্ত ওই জায়গায় মুসলমানরা নামাজ পড়তেন তা কোর্ট মেনে নিয়েছে, কিন্তু তবুও এই রায় কেন? আবার অনেকে এএসআই এর সার্ভে নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন৷