নয়াদিল্লি: চেন্নাই স্কাইলাইনের ১১ তলা বিল্ডিং৷ জনা ২০ ছেলেমেয়ে সেখানে মিখ গুঁজে কাজ করে চলেছেন৷ বেশির ভাগই ডেস্কে বসে৷ বাকিরা ল্যাপটপে৷ কেউ আবার বিন ব্যাগের উপর বসে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন৷ এক কোন থেকে ভেসে আসছে হালকা গানের সুর৷ এটা কোনও সাধারণ স্টার্ট-আপ নয়৷ এই ইয়ংস্টাররা ইন্ডিয়ান পলিটিক্যাল অ্যাকসন কমিটি বা I-PAC এর কর্মী৷ যাঁর প্রতিষ্ঠাতা রাজনৈতিক মহলের অন্যতম চর্চিত ব্যক্তিত্ব ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর বা পিকে৷
আরও পড়ুন- চিনের চিন্তা বাড়িয়ে আগামীকালই ভারতে আসছে আরও ৩ রাফায়েল
যাঁর বড়সড় কৃতিত্ব রয়েছে ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদীর বিপুল জয়ের পিছনে৷ এর পর বিহারের নীতীশ কুমার, পঞ্জাবের অমরিন্দর সিং, অন্ধ্রপ্রদেশের জগন মোহন রেড্ডি এবং দিল্লিতে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের জয়ের কুশীলব তিনি৷ আপাতত পিকে’র কৌশলী টিম কাজ করছে পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তামিলনাড়ুতে ডিএমকে’র হয়ে৷ এর জন্য বিরোধী এআইএডিএমকে’র নিশানাতেও পড়তে হয়েছে I-PAC-কে৷ কিন্তু প্রশ্ন হল সমালোচক থেকে দলের সমর্থক এবং পর্যবেক্ষক- এই ভোট কুশলীরা ঠিক কী কাজ করেন?
I-PAC-এর এক সূত্রের কথায়, অনেকেই মনে করে থাকেন আমরা হয়তো অন্যান্য এজেন্সির মতোই কাজ করে থাকি৷ কিন্তু তেমনটা নয়৷ আমরা বিজ্ঞাপনের নকশা তৈরি করার সংস্থা নই৷ এটা খুবই ছোট্ট কিন্তু অত্যন্ত কার্যকরী একটা বিষয়৷ তিনি আরও বলেন, I-PAC কেবল ডাটা ক্রাঞ্চিং, বিশ্লেষণ বা ডিজিটাল প্রচারের বিষয় নয়৷ মানুষ মনে করে থাকেন, ময়দানে যদি তাঁদের ৫০০ জন লোক থাকে, তাহলে তাঁরা ভালো কাজ করবে৷ হোয়াটঅ্যাপে শক্তিশালী গ্রুপ থাকলে তাঁরা ভোটেও জিতবে। কিন্তু বিষয়টা সেটুকু নয়৷
তাঁর কথায়, অর্ধেক কাজ হল নেতাদের জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া৷ যাতে তাঁরা নেতাদের কথা শোনেন৷ বাকি অর্ধেক কাজ হল প্রতিটি সমস্যাকে অনুধাবন করা৷ প্রতিটি রাজ্যের সমস্যাও আলাদা৷ সেই বুঝে সমাধানের পথ খুঁজে বার করা৷ নেতারা তাঁদের কাছ থেকে ৫০ শতাংশ ধারণা আমদানি করে নেয়৷
আরও পড়ুন- ‘দেশের জন্য বিপজ্জনক!’ মেহবুবা মুফতিকে দেওয়া হচ্ছে না পাসপোর্ট
তিনি আরও জানান, তাঁদের টিমের গঠন মোটামুটি এক৷ তবে শাসক দল ও বিরোধী দলের ক্ষেত্রে রণকৌশল নিশ্চিত ভাবেই পৃথক৷ পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তামিলনাড়ুতে স্তালিনের জন্য রণকৌশল সম্পূর্ণ ভিন্ন৷ কারণ বঙ্গে ক্ষমতায় রয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ কিন্তু তামিলনাড়ুতে বিরোধীর আসনে রয়েছে ডিএমকে৷ ক্ষমতাসীন সরকারকে আরও মানুষের কাছে পৌঁছে দিতেই এ রাজ্যে শুরু হয়েছে দুয়ারে সরকারের মতো প্রকল্প৷ স্তালিনও তামিলনাড়ুতে একই কাজ করছেন কিন্তু ভিন্ন ভাবে৷ তিনি বলেছেন, ক্ষমতায় এলে তিনি উঙ্গাল থোগুথিল স্তালিন চালু করবেন৷ যেখানে প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রে থাকবে একটি করে ড্রপবক্স৷ এখানে সাধারণ মানুষ তাঁদের সমস্যা কথা জানিয়ে ওই বক্সে জমা করবে৷ মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথম ১০০ দিনে সেই সমস্যাগুলি সমাধান করাই হবে তাঁর প্রধান লক্ষ্য৷
তবে I-PAC কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের হয়েই চিরদিন কাজ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নয়৷ তারা ভবিষ্যতে অন্য কোনও রাজনৈতিক দলের হয়েও কাজ করতে পারে৷ এটাই তাঁদের মডেল৷