করোনাকে অবহেলা নয়! উৎসবে সংক্রমণ আশঙ্কায় বার্তা প্রধানমন্ত্রী মোদীর

করোনাকে অবহেলা নয়! উৎসবে সংক্রমণ আশঙ্কায় বার্তা প্রধানমন্ত্রী মোদীর

নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি:  দুর্গাপুজো, দীপাবলি সহ উৎসবের মরশুমে যাতে করোনা ভাইরাসের সতর্কতা মাথায় রেখে উৎসবে সামিল হওয়া যায়, তা নিয়ে জাতীর উদ্দ্যেশে ভাষণে সতর্কবার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ তিনি বলেন, ভুলে গেলে চলবে না যে, লকডাউন শেষ হলেও, ভাইরাস এখনও রয়েছে গিয়েছে৷ ফলে যতক্ষণ না টিকা আসছে কোনও অবহেলা করা যাবে না৷

মঙ্গলবার সকালেই জানানো হয়েছিল জাতীর উদ্দ্যেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ সেই খবর পাওয়ার পর থেকেই কৌতুহলের পাশাপাশি উদ্বেগ শুরু হয় দেশবাসীর, যে কী বলবেন দেশের সর্বোচ্চ প্রশাসক৷ নতুন করে লকডাউন ঘোষণা করা হবে কি না, তা নিয়েও গুঞ্জন শুরু হয়৷ এদিন সন্ধ্যায় জাতীর উদ্দ্যেশে ভাষণে স্পষ্টতই উৎসবের মরশুমে দেশবাসীকে সতর্ক করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷

সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এখন অবহেলা করার সময় নয়৷ এখনও সেই সময় আসেনি যে আমরা ভাবতে পারি, করোনা ভাইরাস চলে গিয়েছে এবং বিপদ কেটেছে৷ একে একে আনলক পর্ব যতই পেরিয়েছে, লকডাউন কাটিয়ে এবং করোনাকে উপেক্ষা করে রাস্তায় সাধারণ মানুষের ঢল নেমেছে। করোনার আগের পরিস্থিতি প্রায় ফিরে এসেছে বেশিরভাগ শহরগুলিতেই। দিল্লিও তার অন্যথা নয়। কলকাতার বাজার এবং বিভিন্ন রাস্তাগুলিতে উৎসবের মুরশুমে ভিড়ের ছবি এবং ভিডিও আতঙ্কিত করে তুলেছে স্বাস্থ্যকর্মীদের। আর তা নিয়েই এদিন সতর্কবার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী৷

তিনি বলেন, ‘‘এমনটা করে আপনারা আপনার পরিবার, শিশু এবং বয়স্কদের বিপদে ফেলছেন৷’’  পাশাপাশি মাস্ক ছাড়া কোনও মানুষ যাতে বাইরে না বেরিয়ে পড়েন, সে বিষয়েও সতর্ক করে দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী৷  লকডাউন থেকে শুরু করে এদিনের সপ্তমবার জাতীর উদ্দ্যেশে ভাষণে নরেন্দ্র মোদী জানান, অন্যান্য দেশের তুলনায় করোনা মোকাবিলায় ভাল জায়গায় রয়েছে ভারত এবং সেই জায়গা হারালে চলবে না৷ পাশাপাশি এদিন তিনি স্পষ্ট করে দেন, সামান্যতম অবহেলাও অনেক ক্ষতি করে দিতে পারে৷ করোনা মোকাবিলায় সামনের সারিতে থাকা যোদ্ধা অর্থাৎ চিকিৎসক, নার্স সহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের ভুয়শী প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিঃস্বার্থভাবে এত সংখ্যক মানুষের সেবা করে চলেছেন তাঁরা, যদিও অবহেলা করার সময় এখনও আসেনি। স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি করোনা নিয়ে সংবাদমাধ্যম সহ অন্যান্য সোশ্যাল সাইট গুলিকেও প্রচারের কাজে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি৷ প্রধানমন্ত্রী জানান, ‘‘এখনও পর্যন্ত ১০ কোটি মানুষের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে, কাজ চলছে ২,০০০ এর বেশি গবেষণাগারে, ৯০ লক্ষ শয্যা রয়েছে হাসপাতালগুলিতে এবং দেশজুড়ে রয়েছে ১২,০০০ কোয়ারান্টাইন সেন্টার৷’’

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতীর উদ্দ্যেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী মোদী জানান, টিকা এলেই তা যাতে দ্রুত দেশের মানুষের হাতে পৌঁছায় তারজন্য তৎপর তাঁর সরকার। করোনা নিয়ে পরিসংখ্যান তুলে ধরে এদিন প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ‘‘ভারতে প্রতি ১০ লক্ষ মানুষে মৃত্যুর সংখ্যা ৮৩ জন অন্যদিকে আমেরিকা, ব্রাজিল, স্পেন এবং ব্রিটেনের মতো দেশগুলিতে এই সংখ্যাটা প্রায় ৬০০ এর বেশি৷’’ তিনি বলেন, ‘‘প্রতি ১০ লক্ষ জনসংখ্যায় আক্রান্তের হার ৫.৫০০ জন। অন্যদিকে আমেরিকা বা ব্রাজিলের মতো দেশে এই সংখ্যা প্রায় ২৫,০০০ জন৷’’ প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, দেশে এখন করোনা থেকে আরোগ্যের সংখ্যা বাড়ছে এবং মৃতের হারও অত্যন্ত কম। নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘‘টিকার জন্য কঠোর পরিশ্রম করছেন আমাদের বিজ্ঞানীরা। ভারতে একাধিক টিকা নিয়ে কাজ চলছে, তারমধ্যে কয়েকটি অ্যাডভান্স স্টেজে রয়েছে৷’’ করোনার বিরুদ্ধে সবাইকে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী মোদী৷ কয়েকদিন আগেই সরকারি প্যানেল জানিয়েছে, সব নিয়ম ঠিকঠাক মেনে চললে, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমতে থাকবে এবং ধীরে ধীরে তা নিয়ন্ত্রণে আসবে। তবে এখন কোনও ঢিলেঢালা মানসিকতা আনা যাবে না বলে স্পষ্ট জানিয়েছে ১০ সদস্যের প্যানেল। এদিন সেই সতর্কবার্তাই আরও একবার মনে করিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × three =