লখনউ: যত দিন যাচ্ছে ততই রাজনীতিতে বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ছেন সাধারণ মানুষ৷ কিন্তু সব কিছু যে একেবারে শেষ হয়ে যায়নি, তার ব্যতিক্রমী প্রমাণও কিছু রয়েছে রাজনীতির ময়দানে৷ সবচেয়ে বড় আশার আলো হল, রাজনীতিতে তরুণ প্রজন্মের নজরকাড়া উঠে আসা৷ এমনিতে ছাত্র রাজনীতিই গড়ে তোলে ভবিষ্যতের নেতা৷ কিন্তু কেরিয়ার গড়ার ইঁদুর দৌড়ে রাজনীতির মূলস্রোতে তরুণ তুর্কিদের নাম লেখানো যেমন কমে যাচ্ছে, তেমনই কঠিন হয়ে যাচ্ছে প্রবীণকে সরিয়ে নবীনের উঠে আসা৷
বর্তমানে সামান্য হলেও সেই ছবিটা যেন বদলাচ্ছে৷ মাত্র ২১ বছর বয়সেই কেরলের তিরুঅনন্তপুরমের মেয়র হয়েছেন আর্য রাজেন্দ্রন৷ পশ্চিমবঙ্গের ভোটে বামেদের হয়েও লড়াই করেছেন বেশ কিছু তরুণ-তরুণী৷ শেষ পর্যন্ত তাঁরা জিততে পারেননি ঠিকই, তবে নজর কেড়েছে তাঁদের লড়াই৷ তাঁদের মধ্যে মানুষ দেখতে পেয়েছেন আগামীর মুখ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা৷ তারুণ্যের সেই পতাকা উত্তরপ্রদেশেও বহন করেছেন মাত্র ২১ বছরের এক তরুণী আরুশি সিং৷ রীতিমতো অসাধ্যসাধন করে নিজের গ্রাম গোন্দার গ্রামসভা প্রধানের পদে আসীন হয়েছেন তিনি।
এদেশের আইন মোতাবেক, গ্রামসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে প্রার্থীর বয়স হতে হবে ন্যূনতম ২১ বছর। সেই হিসেবে আরুশি এবারই সেই যোগ্যতামান অর্জন করেছেন৷ কিন্তু ২১ বছর বয়সেই গ্রামসভা নির্বাচনে অংশ নেওয়া এবং লড়তে নেমেই বিপুল ভোটে জিতে যাওয়ার ছবি বড় একটা দেখা যায় না৷ কিন্তু অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন আরুশি৷ এবার গোন্দার ওয়াজিরগঞ্জ ব্লকের সেহরিয়া গ্রামের সভা নির্বাচনে অংশ মোট চার প্রার্থীর মধ্যে বাকি তিন জনকে অনায়াসে হারিয়ে ৩৮৪ ভোটে জিতে গিয়েছেন তিনি৷
আরুশির মা গরিমা সিং সিভিল কোর্টের ডিস্ট্রিক্ট জজ হিসেবে কর্মরতা৷ বাবা ধর্মেন্দ্র সিং লখনউয়ের পুলিশ কমিশনারের অফিসে স্টেনোগ্রাফার৷ আর আরুশি নিজেও এখন আইন নিয়ে পড়াশোনা করছেন লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ সিটি ল’ কলেজে। সেহরিয়া থেকে তাঁর কলেজের দূরত্ব ১৫০ কিলেমিটার, তাই পড়াশোনা করেন লখনউয়ে থেকেই৷ তবে ভোটে লড়ার জন্য গত ২ মার্চ থেকে গ্রামের বাড়িতেই রয়েছেন আরুশি৷ করোনা পরিস্থিতিতে গ্রামবাসীদের বোঝাচ্ছেন পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব৷ জোর দিচ্ছেন গ্রামবাসীদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে৷ যদিও এই গ্রামসভার বৃত্তেই আটকে থাকতে চান না আরুশি৷ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত দেখতে চান দেশের রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ পদেও৷ নতুন ভারত গড়ার স্বপ্ন দেখা আরুশি আপাতত কাজটা শুরু করতে চান গ্রাম থেকেই৷ ইন্টারনেটের হাত ধরে গ্রামের সামনে খুলে দিতে চান দুনিয়ার দরজা৷