শিলঙ: মেঘালয়ের বেআইনি খনি থেকে উদ্ধার হলো দুজন খনি শ্রমিকের দেহ। বেআইনি এই খনিতে ধস নামায় মৃত্যু হয়েছে এই দুই শ্রমিকের বলে সোমবার পুলিশ জানিয়েছে। প্রায় একমাস আগে একইভাবে বেআইনি খনিতে ধস নেমে আটকে পড়েন শ্রমিকরা। সেই শ্রমিকদের এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। যত দিন যাচ্ছে আটকে পড়া ওই ১৫খনি শ্রমিকের বেঁচে থাকার সম্ভাবনাও শেষ হয়ে যাচ্ছে।
এদিন অবশ্য কেন্দ্র এবং রাজ্য দুই সরকারই সুপ্রিম কোর্টে দাবি করেছে, এই শ্রমিকদের উদ্ধার করার জন্য সবরকম চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। বিচারপতি এ কে সিকরি এবং বিচারপতি এস আব্দুল নাজেরকে নিয়ে গঠিত বেঞ্চকে দুই সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, খনিটি দুর্গম এলাকায়। উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে।
উদ্ধারের কাজে নৌবাহিনী, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, ওডিশার দমকল বাহিনী এবং কোল ইন্ডিয়ার উদ্ধারকারী দল রয়েছে ওই শ্রমিকদের উদ্ধারের কাজে। কিন্তু ঘটনার প্রায় ২৫দিন পরেও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি ওই শ্রমিকদের। এক জনস্বার্থে দায়ের করা মামলার ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্র এবং রাজ্যকে নির্দেশ দেয়, আটকে পড়া অধিকাংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এই শ্রমিকদের দ্রুত উদ্ধার করতে হবে। দুই সরকারের আচরণে ক্ষুব্ধ বিচারপতিরা নির্দেশ দেন, অত্যন্ত দ্রুত, অবিলম্বে এবং কার্যকরী পদক্ষেপ রাজ্য সরকারকে নিতে হবে। এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের আরেক বেআইনি খনি দুর্ঘটনা। এদিন পুলিশ জানিয়েছে, রাজ্যের পূর্ব জয়ন্তিয়া জেলার প্রত্যন্ত একটি গ্রামের কয়লাখনিতে ধস নেমে মৃত্যু হয়েছে দুই খনি শ্রমিকের। বেআইনি এই খনি দুটির দূরত্ব হলো মাত্র ৪০কিমি। পুলিশ জানিয়েছে, জলভিয়া গ্রামে ওই খনিটি। মৃতেরা হলেন, এলাদ বারে ও মনোজ বসুমাতারি। জয়ন্তিয়া পাহাড়ের কোলে জালভিয়া গ্রামের এই কয়লা খনিটিও আগের দুর্ঘটনাকবলিত খনিটির মতোই অবৈধ। পূর্ব জয়ন্তিয়া হিলস জেলার পুলিশসুপার সিলভেস্টার নঙ্গটিনজের জানিয়েছেন, ঘটনাটি শুক্রবার ঘটেছে। জেলা সদরের কয়েক কিলোমিটার দূরে এই অবৈধ খনিতে দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর তল্লাশি শুরু হয়। শুক্রবারই মৃত এলাদ বারের আত্মীয় ফিলিপ বারে নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের করেন। কয়লা খনির কাছে এলাদ বারের দেহ শনিবার গভীর রাতে খুঁজে পায় পুলিশ। এরপর আরও কিছুটা তল্লাশির পর তাঁরা মনোজ বসুমাতারির দেহও খুঁজে পান বলে জানিয়েছে পুলিশ।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ওই দুই কর্মী হঠাৎ ধস নামায় আর বেরিয়ে আসার সুযোগ পাননি। তাঁদের মতে, কয়লা বের করার জন্য খনির দেওয়ালে আঘাত করতেই হুড়মুড়িয়ে নেমে আসে বড় বড় চাঙড়। তার নিচে চাপা পড়ে মৃত্যু হয় ওই দু’জনের। গত ১৩ ডিসেম্বর পূর্ব জয়ন্তিয়া জেলার কিষান গ্রামের একটি বেআইনি কয়লাখনিতে কাজ করার সময় আটকে পড়ছিলেন ১৫জন কর্মী। সেই ঘটনার পর প্রায় ১মাস হতে এলেও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি আটকে পড়া খনিকর্মীদের। ৩৭০ ফুট গভীর খনির ভিতরে জল ভরে যাওয়ায় সমস্যাটা আরও বড় আকার ধারণ করে। পাম্প লাগিয়ে জল বার করে উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়েও কোনও লাভ হয়নি। যত সময় গড়িয়েছে ওই খনিকর্মীদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ততই ক্ষীণ হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট ১১জানুয়ারি আবার শুনানির দিন ধার্য করেছে।