মাধ্যমিকে ৯৫% নম্বর পেয়ে রেকর্ড গড়ল আদিবাসী কন্যা

মাধ্যমিকে ৯৫% নম্বর পেয়ে রেকর্ড গড়ল আদিবাসী কন্যা

 

চেন্নাই: জাতি-বর্ণের বেড়ার আড়ালে বাধা পড়েনি মেধা৷ চলার পথে এসেছে ঘাত-প্রতিঘাত৷ আষ্টেপিষ্টে ধরেছে প্রতিবন্ধকতা৷ সবকিছুকে হার মানিয়েই মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৯৫ শতাংশ নম্বর পেয়ে তাক লাগাল তামিলনাড়ুর টিরুপুর জেলার ১৬ বছরের আদিবাসী কন্যা সি শ্রীদেবী৷ আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে এই প্রথম ৯৫ শতাংশ নম্বর অর্জন করল কোনও সদস্য৷ 

আন্নমালাই টাইগার রিজার্ভের উডুমালপেট রেঞ্জের পুচুকোত্তমপাড়াই উপজাতি জনবসতি এলাকার বাসিন্দা সি শ্রীদেবীর পড়াশোনা কেরলের চালাকুডির নয়নারগাদি মডেল রেসিডেন্সিয়াল স্কুলে৷ মাধ্যমিকে অসাধারণ সাফল্যের পর এবার উচ্চমাধ্যমিকের পড়া শুরু করতে চলেছে এই মেধাবী ছাত্রী৷ আদিবাসী সম্প্রদায়ের মেয়েদের কাছে যা প্রায় কল্পনাতীত৷ কারণ আদিবাসী সম্প্রদায়ের অধিকাংশ মেয়েরাই প্রাথমিক কিংবা মধ্য স্কুল পর্যন্ত গিয়েই হাল ছেড়ে দেয়৷ ঢুকে পড়ে সংসারের জাঁতাকলে৷ তাদের মধ্যে সত্যই ব্যতিক্রম সি শ্রীদেবী৷ 

এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শ্রীদেবী বলে, ‘‘ক্লাস ওয়ান থেকেই আমি কেরলের স্কুলে পড়াশোনা করি৷ স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা সবসময় পাশে থেকেছে৷ তাঁদের সহযোগিতার জন্যই আমি দশমে A+ নম্বর পেয়েছি৷’’ শ্রীদেবী যে আদিবাসী এলাকায় থাকে, সেখানে রাস্তাঘাটের হাল খুবই খারাপ৷ নেই বিদ্যুৎ সংযোগ, মোবাইল নেটওয়ার্ক৷ মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়ার জন্য কয়েক কিলোমিটার পথ হাঁটতে হয় সেখানকার মানুষদের৷ এত সমস্যা সত্ত্বেও থেমে থাকেনি তার পড়াশোনা৷

লকডাউন শুরু হওয়ার পরই নিজের বাড়িতে ফিরে এসেছিল শ্রীদেবী৷ এক মাস আগে সে জানতে পারে মাধ্যমিকের বাকি পরীক্ষাগুলি নেওয়া হবে৷ সে যাতে অবশিষ্ট পরীক্ষায় বসতে পারে, তা নিশ্চিত করতে তামিলনাড়ু-কেরল সীমান্ত থেকে তাকে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিশেষ বাসের বন্দোবস্ত করে কেরল সরকার৷ বাবার সঙ্গে প্রায় ৮০ কিলোমিটার বাইকে চেপে চেক পোস্টে পৌঁছয় শ্রীদেবী৷ সেখান থেকেই বাসে চেপে ফিরে আসে স্কুলে৷ 

শ্রীদেবীর বাবা এম চেল্লামুথু পেশায় একজন কৃষক৷ তিনি বলেন, ‘‘সকলের মতো শ্রীদেবীর মা’ও আমাকে বলেছিল ওর পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে৷ আমার বড় সন্তানের মতো তাকেও কাজে লাগিয়ে দেওয়ার জন্য জোড়াজুড়ি করেছিল সে৷ কিন্তু আমি শ্রীদেবীর পড়াশোনা বন্ধ করিনি৷ শ্রীদেবীর পর আমার আরও একটি সন্তান আছে৷ আমি চাই সেও দিদির মতোই পড়াশোনা করুক৷ এই বৃত্তের বাইরেও যে জীবন আছে, আমি চাই তারা সেটা চিনুক৷’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *