হায়দরাবাদ: এক সময় ভিক্ষাবৃত্তি করেই চলত তাঁদের জীবন৷ কেউ কেউ আবার বাঁচার তাগিদে হয়ে উঠেছিলেন যৌন কর্মী৷ কিন্তু সেই সমস্ত অন্ধকারকে পিছনে ফেলে আলোর দিশায় এগিয়ে চললেন হায়দরাবাদের একদল বৃহন্নলা৷ সমাজের ব্রাত্যরাই হয়ে উঠলেন উদ্যোক্তা৷ শুরু করলেন আদা-রসুনের পেস্ট আর আচারের ব্যবসা৷
আরও পড়ুন- ‘ঘরে ফিরছি’! ফেসবুকে লিখে বিমানে উঠেছিল পরিবার, দুর্ঘটনায় তছনছ গোটা সংসার
বৃহন্নলা সম্প্রদায়ের সদস্যরা এখন মিলিত হয়েছেন ট্রান্স ইকুয়ালিটি সোসাইটি’র ছাতার তলায়৷ নিজেদের উদ্যোগে বিক্রি করছেন তাঁদের নিজস্ব প্রোডাক্ট ‘কুইকলি’৷ ট্রান্স ইকুয়ালিটি সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা জেসমিন বলেন, ‘‘ মাথা উঁচু করে সসম্মানে বেঁচে থাকতে চাই আমরাও৷ সৎ পথে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে চাই৷ কিন্তু কেউ আমাদের চাকরি দেবে না৷ চাকরি পেলেও কর্মক্ষেত্রে নানা বিদ্বেষ সহ্য করতে হবে৷ তাই আমরা নিজেদের কাজ নিজেরাই তৈরি করে নিয়েছি৷’’
আরও পড়ুন- 'আত্মনির্ভর ভারত'-এর পথে আরও একধাপ, ১০১টি প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি মন্ত্রকের
ট্রান্স ইকুয়ালিটি সোসাইটির পাঁচজন বৃহন্নলা লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছিলেন৷ পরিচিত মহলে ব্যবসা শুরুর আগে ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (এফএসএসএআই)-র সার্টিফিকেট পান তাঁরা৷ জেসমিন জানান, ‘‘আমাদের তৈরি আচার একেবারে প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি৷ আমরা এর মধ্যে কোনও রকম কেমিক্যাল ব্যবহার করি না৷ আমরা আমাদের মতো করে জীবন যাপনের চেষ্টা করছি৷ যাঁরা এতদিন আমাদের ভিখারি বলে অভিহিত করে এসেছেন, তাঁদের কি উচিত নয়, এখন এগিয়ে এসে আমাদের তৈরি পণ্য কেনা৷’’ তাঁর কথায়, খাদ্য উপাদানগুলিকে প্রক্রিয়াজাতকরণের পর স্বাস্থ্যকরভাবে খাবারগুলি তৈরি করে তাঁদের সংস্থা ‘কুইকলি’৷
আরও পড়ুন- দেশের ইতিহাসে প্রথম! কৃষিতে ১ লক্ষ কোটির প্যাকেজে চমক মোদীর
জেসমিন বলেন, ‘‘২০ বছর আগে যখন ঘর ছেড়েছিলাম, তখন আমার ঠিকানা ছিল ফুটপাত৷ কারও সাহায্য পাইনি৷ কিন্তু আমি আমার সম্প্রদায়ের মানুষকে সাহায্য করতে চেয়েছিলাম৷ গত মার্চ মাসে একটি সোসাইটি তৈরি করি৷’’ তিনি আরও বলেন, শুধু ট্রান্সজেন্ডারদের পাশে দাঁড়াতেই নয়৷ এলজিটিবিকিউ+ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত সকল মানুষকে সাহায্য করাই আমাদের উদ্দেশ্য৷
তিনি বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতিতে অনেকে খেতে পারছেন না৷ কেউ বাড়ি ভাড়া দিতে পারছে না৷ কিছু সংস্থার সাহায্য নিয়ে অর্থ সংগ্রহ করে আমরা তাঁদের হাতে রেশন ও টাকা তুলে দিয়েছি৷ লকডাউনে যখন কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তখন নতুন পথের হদিশ পাই আমরা৷ ’’