নয়াদিল্লি: করোনা সংক্রামণ রোধে পঞ্চম দফা লকডাউন ঘোষণা হয়েছে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত। তবে কনটেনমেন্ট জোন ছাড়া আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা এখন আর তেমন নেই বলাই যায়। দীর্ঘ আড়াই মাস ধরে অচল ভারতের অর্থনীতিকে ছন্দে ফেরানোর চ্যালেঞ্জ সুতরাং আর ঘরবন্দী থাকা যাবেনা। করোনার সঙ্গে লড়াই করেই বাঁচাতে হবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। যদিও করোনা আবহে দেশের ও দশের স্বার্থে ইতিমধ্যেই নানান পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি। এরমধ্যে তাঁর সাম্প্রতিকতম বৃহত্তর পদক্ষেপ হলো লক্ষ লক্ষ অভিবাসী কর্মীদের বাড়িতে ফেরানর উদ্যোগ। তবে এই পদক্ষেপ যে ২৫ মার্চ থেকে ২৪ মে, টানা দুমাস দেশের মানুষের ঘরবন্দী দশাকে রীতিমত প্রহসনে পরিণত করেছে তা বলে দিচ্ছে দেশের বর্তমান করোনা সংক্রামণের সংখ্যা। এই দুমাসে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৬২৬ থেকে ১,৩৮,৮৪৫ তে পৌঁছে গিয়েছে। চতুর্থ লকডাউনে পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরা সংক্রমনের হার অস্বভাবিকভাবে বাড়িয়ে তুলেছে। ইতিমধ্যেই এনিয়ে দেশের শাসক গোষ্ঠীর বিরোধিতায় সরব রাজনৈতিক দলগুলি।
এবার এই আগুনে ঘৃতাহুতি দিলেন দেশের শীর্ষস্থানীয় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, এই পরিস্থিতি এড়ানো যেত যদি প্রথম লকডাউন ঘোষণার আগেই অভিবাসী কর্মীদের বাড়িতে ফিরতে দেওয়া হত। প্রধানমন্ত্রীর প্রথম লকডাউন ঘোষণা প্রসঙ্গে কড়া ভাষায় এই মত পোষণ করেছেন খোদ দেশের একদল শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসাবিদ। প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে তাঁদের মতামত তুলে ধরেছেন দেশের চিকিৎসকদের তিনটি সংগঠন- ইন্ডিয়ান পাবলিক হেল্থ অ্যাসোসিয়েশন (আইপিএইচএ), ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অফ প্রিভেনটিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন (আইএপিএসএম) এবং ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অফ এপিডেমিলোজিস্ট (আইএই)।
চিঠির চিকিৎসকদের মূল প্রশ্ন হলো, লকডাউনের শুরুতেই শ্রমিকদের ঘরে ফেরার অনুমতি না দিয়ে কেন এই চতুর্থ দফায় সেই উদ্যোগ নেওয়া হল? তিন চিকিৎসক সংগঠনের যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, করোনা সংক্রামিত রোগীদের চাপ সামলাতে লকডাউনের মতো এত বড় সিদ্ধান্তে কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু হয়েছিলো যখধ, চতুর্থ দফা থেকেই অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ইতিমধ্যেই কাজ হারিয়েছেন দেশের প্রায় ১১ কোটি মানুষ। সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে ২.৭০ লক্ষ কারখানা ও ছয়-সাত কোটি ক্ষুদ্র-কুটিরশিল্প। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, করোনার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকা বেকারত্বের মত সমস্যার সমাধান রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে সরকারের কাছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রসঙ্গে তাঁদের মতে, শুরুতে যখন সংক্রমণের মাত্রা কম ছিল তখন শ্রমিকদের বাড়িতে ফিরতে দিলে পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ হতো না। এই শ্রমিকদের ফেরার মারাত্মক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে গ্রামীণ ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও। যেখানে সময়মতো পর্যাপ্ত চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে বড়সড় সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। স্বভাবতই করোনা নিয়ন্ত্রণে মোদি সরকারের যৌথ টাস্ক ফোর্স কমিটির বিশেষজ্ঞ সদস্যদের প্রকাশ্যে এই মতামত স্বভাবতই অস্বস্তিতে ফেলেছে কেন্দ্রকে।