বেঙ্গালুরু: পাঁচদিন পরও জ্বলছে কর্ণাটকের বন্দিপুর ব্যাঘ্র সংরক্ষণ প্রকল্পে। ইতিমধ্যেই ৮ কিলোমিটার চত্বর জুড়ে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। ৫ দিন আগে আগুন লেগেছিল টাইগার রিজার্ভের বারেকাট্টে ও গুড্ডাকাড়ে এলাকায়।
দাবানলের কোপে ভষ্মীভূত হয়েছে কয়েক হাজার একরের বনাঞ্চল। প্রবল হাওয়ার দাপটে দ্রুত সেই আগুন এখন এগিয়ে আসছে জাতীয় সড়কের দিকে। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে ৬০টিরও বেশি দমকলের কর্মীরা আগুন নেভানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ঝোড়ো বাতাস আর শুকনো ঘাসের জন্য দ্রুত ওই আগুন ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে। কর্নাটকের বন দপ্তরের কর্তা ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীদের লাগাতার চেষ্টা সত্ত্বেও নেভানো যায়নি সেই আগুন। তা এত দ্রুত ছড়াচ্ছে যে ৬৭ নম্বর জাতীয় সড়কের আশপাশের রাস্তাগুলিতে এবার তা ছড়িয়ে পড়ার যথেষ্টই আশঙ্কা রয়েছে।
এর ফলে, উটি থেকে মহীশূর যাওয়ার রাস্তাগুলিতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিপদের আশঙ্কায় পর্যটকদের জন্য ওই টাইগার রিজার্ভ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। বন্ধ রাখা হয়েছে ফরেস্ট সাফারিও। তবে এই আগুন শুধু দাবানল নাকি, এর পেছনে কোনও নাশকতার ছক থাকতে পারে তা নিয়েও সন্দেহ দেখা দিচ্ছে। কর্নাটকের বন দপ্তরের এক সুপারভাইজার হনুমন্ত কুমার বলেছেন, ‘‘যে ভাবে বনাঞ্চলের বিভিন্ন দিক থেকে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে তাতে সন্দেহ হচ্ছে, এই ঘটনা হয়তো ইচ্ছাকৃত ভাবেই ঘটানো হয়েছে। কারণ, ঝোড়ো বাতাস আর শুকনো ঘাসের জন্য আগুন যে দিক দিয়ে ছড়ানোর কথা, সেই দিক তো বটেই, অন্য দিক থেকেও সেই আগুন দ্রুত ছড়াচ্ছে।’’ পাঁচদিন আগে লাগলেও বড় আগুন লাগে দুদিন আগে। শুক্রবার গোপালস্বামী বেট্টা ফরেস্ট রেঞ্জের কেব্বেপুর-চৌদাল্লির সেই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে মুগাভিনাহাল্লি জারকাল্লু, গুম্মান্নাগুড্ডা, গৌরী কাল্লু বেট্টা সহ অন্যান্য এলাকায়। এক শীর্ষ বন আধিকারিক জানিয়েছেন, আগুন নেভাতে আমরা দিন রাত কাজ করছি। তবে এখনও পর্যন্ত ব্যাঘ্র প্রকল্পে কোনও বন্যপ্রাণীর ক্ষতি হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হয়নি।
আধিকারিকরা মনে করছেন, অন্তত আরও দুদিন লাগবে আগুন আয়ত্তে আনতে। এক পরিবেশ কর্মীর কথায়, ‘‘আগুনে বন্যপ্রাণীর ক্ষতির কোনও প্রত্যক্ষদর্শী না পাওয়া গেলেও আমাদের আশঙ্কা ক্ষতির মাত্রা ভয়াবহই হবে। কারণ আগুন ছড়িয়েছে কোর এরিয়াতে। আগুন দেখে হরিণরা পালাচ্ছে, এমনটা নজর করা গেছে। তাছাড়া এখন কুমিরদের প্রজনন মরশুম। বড় ক্ষতির আশঙ্কা মাটির তলার জীবজন্তুর। আগুন ইতিমধ্যেই লেগেছে পাশের নাগারাহোল ন্যাশনাল পার্কেও। সেখানেও ৩৫ একরের জঙ্গল পুড়ে গেছে। জঙ্গলের চিফ কনজারভেটার নারায়ণস্বামী জানিয়েছেন, এখন আগুন নিয়ন্ত্রণে। বনাঞ্চলের ২একর এলাকায় ভয়ানক ক্ষতি হয়েছে। আগুন ছড়িয়েছে কেরালার ওয়েনাড় ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি লাগোয়া জঙ্গলে।
ব্যাঘ্র প্রকল্পে পর্যটন এলাকা পুরোপুরি ভস্মীভূত। পরিবেশবিদ যোশেফ হুভার বলেছেন, আগুন সামলাতে আমাদের প্রচুর র্যাপিড অ্যাকশন ভেহিকেল ও দমকল দরকার। কারণ প্রতিবছরই এমন আগুন সামলানো একটা রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে বন্দিপুর জঙ্গলে বেশ কয়েকবারই আগুন লেগেছে। ২০১৪, ২০১৬, ২০১৭-র ফেব্রুয়ারিতেও কয়েক হাজার একরের জঙ্গল ছাই হয়ে গিয়েছিল।