নয়াদিল্লি: রাজধানীর নিজামুদ্দিন মরকজের তাবলিগি জামাতের জমায়েতের ফল যেন এক মুহূর্তে দেশের করোনা মানচিত্রকে ওলটপালট করে দিল। করোনা নিয়ন্ত্রণে মোদি সরকারের সমস্ত সতর্কতামূলক পদক্ষেপের শুরুতেই এই একটিমাত্র ফাঁক শুধুমাত্র দেশের একটা বড় অংশের সাধারণ মানুষকে যে ভয়ঙ্কর বিপদের মুখে ঠেলে দিল তাই নয়, একইসঙ্গ রীতিমতো কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিলো খোদ সরকারের সমস্ত পরিকল্পনা, পদক্ষেপ ও প্রস্তুতিকে।
চারদিনের পরিসংখ্যান অন্তত সেই ধারণাই জোরদার করছে যে পুরো পরিস্থিতিটাই এবার সরকারের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এইকদিনের করোনা আক্রান্তের পরিসংখ্যান বলছে দেশে যেখানে আক্রান্তের একশো থেকে হাজারে পৌঁছতে অন্তত ১২দিন লেগেছিল সেখানে বিস্ময়করভাবে মাত্র ৪ দিনেই নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের হিসেবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ২০৬৯।র, মৃত ৫৩। যদিও সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের হিসেব অনুযায়ী আক্রান্তের সংখ্যা ২৩৫৮। যদিও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দেওয়া তথ্য বলছে, দেশে করোনা আক্রান্ত ২০৮৮, সুস্থ হয়েছেন ১৫৬ জন৷ মৃত ৫৬ জন৷
আর এই পরিস্থিতিতে করোনা নিয়ন্ত্রণের নীতি বদল ছাড়া আর কোনো উপায় রইলোনা কেন্দ্রের কাছে। গত দুদিন পর্যন্ত পরিস্থিতির পর্যালোচনার পর বৃহস্পতিবার রাতারাতি নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করল কেন্দ্র। এতদিন যেখানে শুধুমাত্র উপসর্গ থাকলেই করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছিল, নতুন পরিকল্পনা অনুসারে এখন থেকে যে সমস্ত এলাকাগুলি থেকে নতুন করে বেশি আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে সেখানে সুস্থ-অসুস্থ নির্বিশেষে করোনা পরীক্ষা করা হবে।
একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের মহিমা অনেকটাই ফিকে হয়ে যাচ্ছে। ববং সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতার চিত্রটাই পরিস্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে। আর এক্ষেত্রে প্রাথমিক ও প্রধান ব্যর্থতা হিসেবে বলা যায়, শুরু থেকেই সময়মতো আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ না করা। শুধুমাত্র উপসর্গ থাকলেই পরীক্ষা করা হবে এই পরিকল্পনা নিয়ে এগোনো। আর সবথেকে বড় ব্যর্থতা নজরদারির অভাবে তবলিগি জামাতের জমায়েত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞরাও ভারতে বেশি করে পরীক্ষার উপরে শুরু থেকেই জোর দিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীও মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সে বলেন, উপসর্গ দেখে সন্দেহ হলেই যেন করোনা পরীক্ষা করা হয়। এরপর রাতে জরুরী ভিত্তিতে পরীক্ষা-নীতি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয় ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ। সূত্রের মত, এপর্যন্ত যে এলাকাগুলিতে সংক্রমণ বেশি ছড়িয়েছে, সেই এলাকাগুলিতে গোষ্ঠী সংক্রমণ ছড়িয়েছে কিনা, তা পরীক্ষা করার জন্য অ্যান্টিবডি টেস্ট দ্রুত শুরু করা হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে দেশের ২০টি কেন্দ্রকে সংক্রমণের আঁতুড়ঘর বা হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। নিজামুদ্দিনের ঘটনার পরে আরও ২২টি স্থানকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই জায়গাগুলি মহারাষ্ট্র, দিল্লি, কেরল, তামিলনাডু, পশ্চিমবঙ্গের মতো আরো ১২টি রাজ্যে ছড়িয়ে রয়েছে।
হঠাৎ করে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পক্ষ থেকে তাবলিগি জামাতকে দায়ী করা হলেও প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা কমিটির প্রাক্তন সদস্য অধ্যাপক শমিকা রবির দাবি, শুরু থেকেই আরও বেশি মানুষের পরীক্ষা করা হলে এই বাড়াবাড়ি এড়ানো যেত। সেক্ষেত্রে জামাত সদস্যদের মধ্যে সংক্রমণের ঘটনা আরও আগে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হলে নতুন করে সংক্রমণও ছড়াতে পারত না।
মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্স করে আরও বেশি করে পরীক্ষার বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফেও লকডাউন নীতিতে কড়াকড়ি করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে রাজ্যগুলিকে। নির্দেশ না মানলে আইনি পদক্ষেপ নিতেও বলা হয়েছে।