আজ বিকেল: বহুদিন পর হরিহরআত্মা দুই বন্ধুর দেখা হলে এখনও আমরা মজা করে বলে থাকি কুম্ভমেলায় হারিয়ে যাওয়া দুইভাই।বহুদিন পর ফের মিলিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। আচ্ছা এই কুম্ভমেলায় যে বা যাঁরা হারিয়ে যান তাঁরা কি ফের বাড়িতে ফেরার সুযোগ পান, এই লাখ টাকার প্রশ্নের উত্তর দিতে সবসময় তৈরি ভুলে ভটকে তিওয়ারি ক্যাম্প। গত ৮০ বছর যাবৎ কুম্ভমেলায় হারিয়ে যাওয়া পুণ্যার্থীদের ঘরে ফেরাচ্ছে এই সংস্থা। এটি সেই অর্থে কোনও এনজিও নয়, উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদের বাসিন্দা রামরাজা তিওয়ারি ১৯৪৬ সালে প্রথম এই ক্যাম্প খুলে বসেছিলেন কুম্ভমেলায়। নিজের হাতের চোঙা তৈরি করেন সেটিকে কাজে লাগিয়েই মেলায় হারিয়ে যাওয়া শিশু,মহিলা, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের পরিজনদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। লোকে তাঁকে ভালবেসে ডাকত ভুলে ভটকে তিওয়ারি নামে, পরে এটিই তাঁর সংস্থার নাম হয়ে গিয়েছে। ৭০ বছর ধর ১২ লক্ষ ৫০ হাজার প্রাপ্তবয়স্কও ২০ হাজার শিশুকে বাড়িতে ফিরিয়েছেন রামরাজা।
বিনামূল্যে এই সমাজসেবা করে তিনি অনেক ভালবাসা কুড়িয়েছেন। আটের দশকের হিন্দি সিনেমা না হলেও রামরাজা তিওয়ারির গল্প নয়া আখ্যানের জন্ম দেয়। সেলুলয়েডের পর্দায় হারিয়ে যাওয়া দুভাই নিজেদের চিহ্নিত করতে পারতেন গান শুনে। প্রতি কুম্ভ, অর্ধ কুম্ভমেলায় চেয়ার-টেবিল পেতে শামিয়ানা টানিয়ে বসে পড়তেন রামরাজা। নিজের হাতে তৈরি চোঙায় ঘোষণা করতেন, যাঁরা হারিয়ে গিয়েছেন, তাঁরা যেন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেসময় না ছিল সরকারি অনুসন্ধান অফিস, না ইন্টারনেট তাই কুম্ভযাত্রীদের বল ভরসা বলতে শুধু রামরাজা তিওয়ারির ক্যাম্প। বয়স বাড়লে মানুষ একটা সময় অথর্ব হয়ে পড়ে, রামরাজাও হলেন।তবে বাবার দেখানো পথকে ভুললেন না ছোট ছেলে উমেশ।গ্রাজুয়েট হওয়ার পর থেকে প্রতি কুম্ভ অর্ধকুম্ভে চলে আসতেন মেলায়, নিজেদের চোঙাতেই চলত অনুসন্ধানের খোঁজ। বাবার কাজ আজ প্রচার পেয়েছে, এখন আধুনিক ব্যবস্থা থাকলেও ভুলে ভটকে তিওয়ারি ক্যাম্পের গ্রহণযোগ্যতা একফোটাও কমেনি।
তাঁর বাবার জীবনী নিয়ে বলিউডে সিনেমা হবে, প্রযোজক সিদ্ধার্থ রাই কাপুর উমেশ তিওয়ারিকে এনিয়ে প্রস্তাবও দিয়েছেন। বাবার চরিত্র অবিকৃত রেখে যদি ছবি তৈরি হয় তাহলে তিনি রাজি আছেন।তবে যাইহোক না কেন যোগী আদিত্যনাথের চারহাজার কোটি টাকার কুম্ভমেলায় ভুলে ভটকে তিওয়ারির প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে যায়নি। তাই উমেশও মরতে দম তক বাবার শুরু করে যাওয়া কাজ চালিয়ে যেতে চান।