নিজস্ব প্রতিনিধি: ঘণ্টায় প্রায় ১০০ কিলোমিটার গতিবেগ নিয়ে ছুটতে থাকা করমণ্ডল এক্সপ্রেস হঠাৎই মেন লাইন থেকে সরে লুপ লাইনে ঢুকে ধাক্কা মারল দাঁড়িয়ে থাকা একটি মালগাড়িতে। আর তাতেই অকালে ঝরে গেল প্রায় তিনশো প্রাণ। শনিবার রেল কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে যে প্রাথমিক রিপোর্ট সামনে এনেছে তাতে সিগনাল ব্যবস্থা ত্রুটিকেই দায়ী করা হয়েছে। কিন্তু এই যুক্তি নিয়েও উঠছে বহু প্রশ্ন। শুক্রবার সন্ধ্যায় বালেশ্বরে ঠিক কী কারণে রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে তা নিয়ে যথেষ্ট ধোঁয়াশা রয়েছে। তবে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে সিগন্যালের ত্রুটিকেই প্রাথমিকভাবে দায়ী করা হচ্ছে। কিন্তু তাতেও ধোঁয়াশা কাটছে না।
শনিবার রেলের যে প্রাথমিক রিপোর্ট সামনে এসেছে তাতে সিগন্যালের ত্রুটির কথাই বলেছেন রেলের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা। যদিও তদন্ত সবে শুরু হয়েছে। তদন্ত সম্পূর্ণ হওয়ার পরেই বিস্তারিত রিপোর্ট সামনে আসবে বলে রেল সুত্রে খবর। রেলের যৌথ পরিদর্শন রিপোর্টে বলা হয়েছে,”আপ মেন লাইনে সবুজ সিগন্যাল দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ট্রেনটি সেই লাইনে না গিয়ে ঢুকে যায় লুপ লাইনে। সেখানে একটি মালগাড়ি বহু আগেই দাঁড়িয়েছিল। এরপর মালগাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষে লাইনচ্যুত হয় করমণ্ডল এক্সপ্রেস”। কিন্তু এই প্রাথমিক রিপোর্টে যা বলা হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। মেন লাইনে সবুজ সিগন্যাল দেখার পরেও করমণ্ডল এক্সপ্রেস লুপ লাইনে ঢুকে পড়ল কীভাবে? এর কোনও সদুত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। যা নিয়ে রেল বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন সিগন্যাল দেওয়ার ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই কোনও গোলমাল হয়েছিল। না হলে এমনটা হতে পারে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন মুল লাইন থেকে অন্য লাইনে ট্রেনকে সরাতেই লুপ লাইন ব্যবহার করা হয়। সাধারণভাবে লুপ লাইন দৈর্ঘ্যে এক কিলোমিটারের কিছুটা কম হয়। মালগাড়ি বা অন্য কোনও ট্রেনকে দীর্ঘ সময়ের জন্য দাঁড় করিয়ে রাখার জন্য লুপ লাইন ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
জানা গিয়েছে শুক্রবার সন্ধ্যায় দুর্ঘটনা ঘটার কিছুক্ষণ পরেই সেখানে গিয়ে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেন জে এন সুবুধি, আর কে বন্দ্যোপাধ্যায়, আর কে পঞ্জিরা ও এ কে মোহন্ত নামে রেলের চার শীর্ষ কর্তা। তাঁরাই প্রাথমিক রিপোর্টে জানিয়েছেন সম্ভবত ভুল সিগন্যালের কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছে। সূত্রের খবর, বালেশ্বরে ট্রেন দুর্ঘটনা যে রেল লাইনে ঘটেছে সেটি ‘কবচ’ ট্রেন সুরক্ষা ব্যবস্থার আওতায় ছিল না। এই ব্যবস্থায় একই লাইনে ভুল করে দুটি ট্রেন এসে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দুটি ট্রেনই থেমে যাবে।
কিন্তু প্রশ্ন হল যদি মেন লাইনে সবুজ সিগন্যাল দেওয়াই থাকবে তাহলে ট্রেনটি লুপ লাইনে ঢুকল কি করে? তবে কি সেই পয়েন্টে কোনও গোলমাল ছিল? সবুজ সিগন্যাল মেন লাইনে দেখতে পেয়েও অভিজ্ঞ চালক লুপ লাইনে ট্রেন ঢুকিয়ে দেবেন এটা হতে পারে না। আর সেটা সম্ভবও নয়। কারণ সিগন্যালের সঙ্গে সঙ্গে লাইন পয়েন্ট অনুযায়ী সেট করা থাকে। এমনটাই মনে করছেন রেল বিশেষজ্ঞরা। তাই এটা সিগন্যাল দিতে কোনও মানুষের ভুল, অর্থাৎ ‘হিউম্যান এরর’ কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই। রেল বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন মেন লাইনের যে পয়েন্ট দিয়ে করমণ্ডল লুপ লাইনে ঢুকে পড়েছিল সেখানে গোলমাল থাকার কারণেই সম্ভবত এত বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাই গোটা বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না। আর তাতেই স্পষ্ট এই ঘটনার জন্য রেল তার দায়িত্ব এড়াতে পারে না। এই পরিস্থিতিতে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত রিপোর্ট কবে আসে এবং তাতে কি লেখা থাকে সেটাই দেখার।