নয়াদিল্লি: ভারতের প্রায় ৩৬টি জেলায় অলক্ষেই থাবা বসাতে শুরু করেছে নভেল করোনাভাইরাস৷ ক্রমেই কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের দিকে এগোচ্ছে ভারত৷ তালিকায় রয়েছে বাংলার ৬টি জেলা! চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ৷
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে প্রবল শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে ভর্তি হওয়া এমন ৪০ জন রোগীর কথা উল্লেখ করেছেন, যাঁদের বিদেশ ভ্রমণের সঙ্গে কোনও যোগ নেই৷ এমনকী কোনও করোনা আক্রান্তের সংস্পর্শেও আসেননি তাঁরা৷ অথচ তাঁদের সকলেরই করোনা টেস্টের রিপোর্ট পজেটিভ৷ ভারতে মূলত সেই সকল ব্যাক্তির করোনা টেস্টের উপর জোড় দেওয়া হচ্ছে যাঁরা সম্প্রতি বিদেশ ভ্রমণে গিয়েছিলেন বা করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছিলেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে৷ কিন্তু দেখা যাচ্ছে সরকারি ব়্যাডার এড়িয়েই গত দুই সপ্তাহে চুপিসারে দেশের আরও ৩৬টি জেলায় ঢুকে পড়েছে মারণ করোনাভাইরাস৷
সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফে বৃহস্পতিবার রাতে কলকাতার এক বর্ষীয়ান সরকারি আধিকারিক জানিয়েছেন, হুগলী নদীর দু’পাড়ের জেলাগুলির উপর বিশেষভাবে নজর দেওয়া হচ্ছে৷ এই জেলাগুলিতে ভিন রাজ্য থেকে আসা মানুষের সংখ্যা অনেকটাই বেশি৷ তিনি আরও বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের সমীক্ষার ভিত্তিতে এই সকল জেলাগুলিতে ব্যাপকভাবে টেস্টিং শুরু করা হবে৷’’ চেন্নাইয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ এপিডেমিওলজি-র ডিরেক্টর মনোজ মুরেকর বলেন, যে সকল জেলায় কোভিড-১৯ পজেটিভ সেভার এ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইলনেস (SARI) রোগী রয়েছেন, সেই জেলাগুলিকে হটস্পট বলে চিহ্নিত করতে হবে৷ এই জেলাগুলির উপর আরও বেশি করে গুরুত্ব দিতে হবে৷
এদিকে, আইসিএমআর-এর তরফে বলা হয়েছে, হটস্পটগুলির পাশাপাশি অন্যান্য এলাকাগুলিতেও ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো লক্ষণ যেমন জ্বর, কাশি, গলা ব্যাথা বা নাক দিয়ে সর্দি বেরনোর মতো সমস্যা দেখা দিলেই করোনা টেস্ট করাতে হবে৷ এর পরিপ্রেক্ষিতেই নয়াদিল্লির দা জর্জ ইনস্টিটিউট অফ গ্লোবাল হেলথের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ওমেন জন বলেন, ‘‘সন্দেহজনক SARI রোগীদের করোনা পরীক্ষার বিষয়টি দারুণ৷ এতে সংক্রমণের সম্ভাবনা অনেকটাই কমবে৷’’
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২ এপ্রিলের মধ্যে আইসিএমআর নজরদারি সংগঠনগুলির সঙ্গে মিলিতভাবে SARI বা ইনফ্লুয়েঞ্জার লক্ষণ রয়েছে এমন ৫,৯১১ জনের সোয়াব টেস্ট করেছে৷ জানা গিয়েছে, দেশের ২০টি রাজ্যের ৫১টি জেলার মোট ১০৪ জনের টেস্টের রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে৷ চিন্তার বিষয় হল এই ৫১টি জেলার মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ৬টি জেলা৷ আইসিএমআরের সমীক্ষায় উল্লেখ করে ওই ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, করোনা পজেটিভ SARI রোগীদের মধ্যে ৮জন মহারাষ্ট্রের, ৬ জন পশ্চিমবঙ্গের, ৫ জন দিল্লির, ৪ জন গুজরাতের এবং ৫ জন তামিলনাড়ুর মানুষ৷ অন্যদিকে, বাংলায় ২৫৬ জন SARI রোগীর মধ্যে ৯ জনের করোনা টেস্টের রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে৷
পাশাপাশি সম্প্রতি বিদেশ ভ্রমণ থেকে ফেরা সন্দেহজনক ব্যক্তিদের নিয়মিতভাবে সরকারি হাসপাতালগুলির কোভিড-১৯ ল্যাবরেটরিতে চলছে করোনা পরীক্ষা৷ বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভারতে নতুন করে ৫৯১ জনের শরীরে কোভিড-১৯ এর জীবাণু পাওয়া গিয়েছে৷ দেশের করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৫,৮৬৫৷ মৃত্যু হয়েছে ১৬৯ জনের৷ এর মধ্যে একটাই আশার আলো, সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৪৭০ জন৷
২১ দিনের লকডাউন পর্বের শেষ সপ্তাহ চলছে৷ গত তিন সপ্তাহে সারা দেশেই আরও বেশি করে শুরু করা হয়েছে করোনা টেস্টিং৷ তবে যে ভাবে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তাতে লকডাউনের মেয়াদ আরও দীর্ঘ হবে বলেই মনে করা হচ্ছে৷
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হয়েছে, ভারত এই মুহূর্তে স্টেজ টু ও স্টেজ থ্রি’র মধ্যে রয়েছে৷ স্টেজ থ্রিতে প্রবেশ করার অর্থই ভারতে সামাজিক সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া৷ তবে, স্টেজ থ্রিতে পৌঁছনোর আগেই সর্বশক্তি দিয়ে তা রোখার জন্য তৎপর কেন্দ্রীয় সরকার৷ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে করোনা রুখতে দিন-রাত এক করে প্রশাসনিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন৷ নবান্নে দফায় দফায় বৈঠক হচ্ছে৷ বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি থেকে বিশেষ সেল গঠন ও খোদ নোবেলজয়ী অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরামর্শ নিয়ে কাজ করছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ ফলে, আতঙ্কিত হবেন না৷ সরকারি বিধিনিষেধ মেনে চলুন৷ বাড়িতে থাকুন৷ সুরক্ষিত থাকুন৷
সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি দেখুন https://www.telegraphindia.com/india/sign-of-coronavirus-spread-below-radar/cid/1763690- এই লিঙ্কে৷