নয়াদিল্লি: সরকারি গোপনীয়তা আইনের দোহাই দিয়ে রাফালে বরাতের নথি আদালতেরও বিচার্যের বাইরে রাখতে চাইছে কেন্দ্র। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে এই যুক্তি তারা খতিয়ে দেখবে। এই যুক্তি গ্রহণযোগ্য কিনা, তা বিচার করার পরেই রাফালে মামলার অন্য বিষয় বিবেচিত হবে। কিন্তু শুনানিতেই তাৎপর্যপূর্ণ পর্যবেক্ষণে বিচারপতিরা জানিয়েছেন, তথ্য জানার অধিকার আইন সরকারি গোপনীয়তা আইনকেও অতিক্রম করে যেতে পারে।
রাফালে বরাত সংক্রান্ত প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কিছু নথির ভিত্তিতে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং রাফালে মামলায় আবেদনকারীদের হলফনামায় সেই নথির উল্লেখে ঘোর আপত্তি জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সরকারের যুক্তি, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অনুমতি ছাড়া এই নথি ফটোকপি হয়েছে। তা চুরিরই শামিল। জাতীয় নিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারি গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘনে অপরাধ হয়েছে।
বৃহস্পতিবারও অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেনুগোপাল এই সুরেই সওয়াল করলে বিচারপতিরা বলেন, তথ্য জানার অধিকার আইনের ২২ নং ধারায় সরকারি গোপনীয়তা আইনকে অতিক্রম করা যায়। ২৪ নং ধারায় এমনকি নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাও দুর্নীতি ও মানবাধিকার সংক্রান্ত প্রশ্নে এই আইনের অধীন। বেঞ্চের মন্তব্য, ‘আরটিআই বিপ্লব এনেছে। ২০০৯-এ সরকারই বলেছে এমনকি ফাইলে নোটিং ও আরটিআই-এ জানতে চাওয়া যাবে। এখন পিছালে চলবে কেন?’ ৬ মার্চ মামলার শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেনুগোপাল বলেছিলেন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রক থেকে নথিপত্র চুরি করা হয়েছে। তার ভিত্তিতেই প্রতিবেদন ও আবেদনকারীরা হলফনামা দিয়েছেন।
অ্যাটর্নি জেনারেলের ‘চুরি’ মন্তব্য নিয়ে শোরগোল ওঠায় দু’দিন বাদে তিনি দাবি করেন, চুরি নয়, ফাইল ফটোকপি করা হয়েছে। এক অর্থে অ্যাটর্নি জেনারেল ওই নথির সত্যতা অস্বীকার করেননি, কিন্তু সরকারি গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছিলেন। একধাপ এগিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক হলফনামা দিয়ে অভিযোগ করেছে, ‘আসল নথির ফটোকপি’ করা হয়েছে। এই নথি আবেদনকারীদের হাতে চলে যাওয়ায় জাতীয় নিরাপত্তা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমতি ছাড়া অবৈধ ভাবে ফটোকপি করা চুরিই। দেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা, বিদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ক্ষতি হয়েছে। আবেদনকারীদের হলফনামা থেকে ওই নথিপত্র বাদ দেবার আবেদনও জানিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক।
অন্যতম আবেদনকারী প্রশান্ত ভূষণ এদিন সওয়ালে বলেন, সরকার নিজেই তো রাফালে সংক্রান্ত কিছু নথি প্রকাশ্যে এনেছে। তদানীন্তন প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর নোটিংসহ একটি নথি প্রকাশ করেছে। অন্তত ১০ টি প্রতিরক্ষা বরাতের সিএজি রিপোর্টে তো বিশদ তথ্য দেওয়া রয়েছে।