কলকাতা: শুক্রবার ঘুম ভাঙা চোখে হায়দ্রাবাদ এনকাউন্টারের ঘটনা যখন নজরে আসে, প্রথমটা ভ্রান্তি বলে মনে হলেও, ধীরে ধীরে তা স্পষ্ট হয় দেশের মানুষের কাছে৷ আর তার পরেই উইক-এন্ড আমেজ শিকেয় তুলে সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়া সর্বত্র আছড়ে পরে প্রতিক্রিয়ার ঝড়৷
পশু চিকিৎসক এক তরুণীর গণধর্ষণ ও মৃত্যুর ‘ন্যায়বিচারের’ নেপথ্যে যেহেতু হায়দ্রাবাদ পুলিশের ভূমিকাই প্রধান ছিল, সেহেতু প্রতিক্রিয়ার কেন্দ্রবিন্দুতেও ছিল পুলিশ৷ অ্যাকশন মুভির প্রতি যাদের বিন্দুমাত্র আকর্ষণ নেই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়াগুলি পড়তে পড়তে, বিশেষ করে পুলিশ কমিশনার বি সি সজ্জনারকে উদ্ধৃত করে উল্লিখিত হলিউড-বলিউড-টলিউডের সমস্ত জনপ্রিয় পুলিশ চরিত্র গুলির নাম এখন তাদের ঠোঁটস্থ৷
একইসঙ্গে অনেকেই এদিন মুখস্ত করে ফেলেছেন সংবিধানে উল্লিখিত প্রশাসনিক আইন বিধির প্রতিটি স্তম্ভ৷ নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রে করণীয় সাংবিধানসম্মত সমস্ত আইনি পদক্ষেপ৷ অবস্থাটা এমনই যে এখন পুলিশ আইন বোঝাতে এলে জোর গলায় অনেকেই বলতে পারেন, ‘দাদা আইন শেখাতে আসবেন না৷’ উল্টে বেশ কিছু সংবিধানসম্মত আইন অনেকেই তাদের মনে করিয়ে দিতে পারবেন৷
নামের পাশে প্রশাসনিক পদ বসে যাওয়ার পর থেকে যার অনেকটাই হয়তো তারা বিস্মৃত হয়েছেন৷ সেই মুহূর্তে স্থানীয় বাসিন্দাদের পুলিশের প্রতি কি ধরনের মনোভাব তৈরি হয়েছিল তার দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বের দরবারেও রীতিমতো হাইলাইট হয়েছে৷ একেবারে ফিল্মি কায়দায় পুলিশের ওপর পুষ্পবৃষ্টি, তাদের মিষ্টিমুখ করানো, রাখি পরানো এমনকি বাজি ফাটিয়ে রীতিমত সেলিব্রেশন৷ কিন্তু কিসের সেলিব্রেশন? ভারতবাসীর দুর্ভাগ্য, যে একসঙ্গে চার চারটে মৃত্যুর সেলিব্রেশন দেখলো গোটা বিশ্ব৷ আইনবিদ, সমাজবিদ, মনোবিদদের মতে এও এক ধরনের অপরাধ৷ কিন্তু দেশের ভগ্নপ্রায় আইন-কানুনের দীর্ঘসূত্রতা, উদাসীনতা এবং বিপথগামিতার খামখেয়ালিপনায় দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া কোটি কোটি নিপীড়িত ভারতবাসীর কাছে, বিশেষত দেশের নারী জাতির কাছে একজন ধর্ষিতার ন্যায় বিচারের জন্য শেষ পর্যন্ত এই প্রক্রিয়ায় হয়তো সর্বতোভাবে কাম্য হয়ে উঠেছিল৷
সেক্ষেত্রে বলাই যায় মানুষের প্রতি ন্যায় বিচারের ক্ষেত্রে ভারতীয় পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে এই উচ্ছ্বাস দেশের ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায় রচনা করল৷ যে ইতিহাসে দেশের আপামর জনসাধারণের ভূমিকাও উল্লেখযোগ্য৷ পুলিশের ও প্রশাসনের প্রতি মানুষের নতুন করে এই আস্থার মাপকাঠি নির্ণয় করতে জনমত নেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল দেশের প্রায় সমস্ত সংবাদমাধ্যম থেকে সোশ্যাল মিডিয়া৷ ‘আজ বিকেল’ ডট কমের তরফে জনমত নেওয়া হয়৷ যেখানে ৯০শতাংশ মানুষই প্রশাসনের প্রতি সদর্থক মনোভাব পোষণ করেছেন৷