নয়াদিল্লি: বিজেপির নতুন ভাবনা। আগামী দিনে বাড়তে পারে লোকসভার সদস্য সংখ্যা। যা নিয়ে নানা মহলে চর্চা শুরু হয়েছে। কি কারণে এমনটা মনে করা হচ্ছে? আসলে এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে যা বলেছেন তাতে এটাই স্পষ্ট হয়েছে। বর্তমানে লোকসভার সদস্য সংখ্যা ৫৪৩। আর দু’জন মনোনীত সদস্য ধরে সংখ্যাটি ৫৪৫। ভারতীয় সংবিধানের ৮১ ধারা অনুযায়ী লোকসভার সদস্য সংখ্যা এর বেশি হতে পারে না। কিন্তু আগামী দিনে ৮১ ধারা বদলে ফেলে সংখ্যাটি বাড়ানো হতে পারে, রবিবার এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিন মোদী বলেন, “নতুন সংসদ ভবনের প্রয়োজন ছিল। আগামী দিনে সাংসদদের সংখ্যা বাড়তেই পারে। সেটাও আমাদের দেখতে হবে। তাই এখনই নতুন সংসদ তৈরি করতে হতো৷” সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী ২০২৬ সাল পর্যন্ত সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভার সদস্য সংখ্যা বাড়ানো যাবে না। তাই রাজনৈতিক মহল মনে করছে আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ফের জিতলে ২০২৬ সালের পর নতুন করে লোকসভার আসন সংখ্যা বিন্যাসের মাধ্যমে বাড়ানো হতেই পারে।
ঘটনা হল জনসংখ্যার অনুপাতে লোকসভার আসন সংখ্যা বাড়ানো হয়। ১৯৫২ সালে প্রথম লোকসভা নির্বাচনের সময় আসন সংখ্যা ছিল ৪৮৯। পরে সেটি বেড়ে হয় ৫০২। শেষবার আসন সংখ্যা বেড়েছিল ১৯৭১ সালে। সেবার জনগণনা অনুযায়ী লোকসভার আসন সংখ্যা বেড়ে হয় ৫৪৩। আর দু’জন মনোনীত সদস্য ধরে সংখ্যাটি হয় ৫৪৫। এরপর সেই সংখ্যায় আর বদল ঘটানো হয়নি। ২০০১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমলে সংবিধানের সেই ধারার মেয়াদ আরও পঁচিশ বছর বাড়ানো হয়েছিল। তাই এটা স্পষ্ট ২০২৬ সাল পর্যন্ত লোকসভায় সদস্য সংখ্যা বাড়বে না। কিন্তু তারপরে ৮১ ধারা বদল করে লোকসভার সদস্য সংখ্যা বাড়ানো যেতেই পারে, আর সেই ইঙ্গিতই দিয়েছেন মোদী।
বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী ৬-১০ লক্ষ ভোটারের জন্য অন্তত পক্ষে একজন সাংসদ থাকতে হবে।কিন্তু ১৯৭১ সালের পর ভারতের জনসংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। পরিসংখ্যান বলছে বর্তমানে প্রত্যেক সাংসদ পিছু ভোটারের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে গড়ে ১৮ লক্ষ। তাই আগামী দিনে সাংসদের সংখ্যা বেড়ে ৮৮০ পর্যন্ত হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
নতুন সংসদ ভবনে লোকসভায় আসনের সংখ্যা ৮৮৮। রাজনৈতিক মহল মনে করছে যেসব রাজ্যে বিজেপির শক্তি বেশি, সেখান থেকে সাংসদ সংখ্যা বাড়ানো হতে পারে। অর্থাৎ উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা-সহ বিভিন্ন রাজ্য যা বিজেপির শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত, সেগুলি থেকে লোকসভা কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো হলে আগামী দিনে দেশ জুড়ে বিজেপির আরও দাপট বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।
তাই রীতিমতো অঙ্ক কষেই গেরুয়া শিবির এ ব্যাপারে ঝাঁপাতে চাইছে বলে রাজনীতির কারবারিদের একাংশ মনে করছেন। তবে এখনই এ বিষয়ে বলার মতো জায়গা আসেনি। কারণ লোকসভায় সদস্য সংখ্যা বাড়াতে হলে কেন্দ্রকে সবার আগে ডি-লিমিটেশন কমিশন গঠন করতে হবে। কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে সংবিধানে সংশোধনী এনে সেটিকে পাশ করিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে কেন্দ্রকে। তা সত্ত্বেও রবিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যা বলেছেন তাতে বিষয়টি নিয়ে জল্পনা শুরু হবে, এটাই স্বাভাবিক।