নয়াদিল্লি: আর কতদিন? উন্নত বিশ্ব সভ্য সমাজ বলতে যা বোঝায় নারীজাতির ক্ষেত্রে আজও সে সভ্যতা আধুনিকতা দিন দিন আরো বেশি অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে অন্তত এমনটাই মনে করছেন সমাজবিদরা৷ সেক্ষেত্রে নারী নির্যাতনের মত সামাজিক ব্যাধি নিরাময় করতে এখন নারীদের সচেতনতার থেকেও উল্লেখযোগ্য ভাবে অনেক বেশি প্রয়োজন পুরুষদের মধ্যে ব্যাপকভাবে সচেতনতা বৃদ্ধি ও নারীদের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা৷
বর্তমানে মেয়েদের নিরাপত্তার জন্য গৃহীত সমস্ত পরিকল্পনাই যে ব্যর্থ হচ্ছে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উঠে আসা একের পর এক নারী নির্যাতনের ঘটনা গুলি তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়৷ গ্রাম থেকে শহর উন্নত-অনুন্নত শিক্ষিত-অশিক্ষিত সর্বত্রই এই সামাজিক ব্যাধির চিত্রটা একই৷ সম্প্রতি হায়দ্রাবাদের পশুচিকিৎসক প্রিয়াঙ্কা রেড্ডিকে গণধর্ষণ ও পরে নিশংস ভাবে হত্যার ঘটনা নারী সুরক্ষা প্রশ্নটিকে আবারো বড় প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিল৷ ঘটনার পর থেকেই দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে ঠিক যেভাবে থেকে দিল্লির নির্ভয়া থেকে কামদুনি, কাঠুয়া, কাশ্মীরের আসিফা এমনই সব হাড় হিম করা ধর্ষণ এবং পরে নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছিল রাজ্য তথা দেশের মানুষ৷ কিন্তু খেয়াল করলে দেখা যায় কিছুটা স্বভাব সিদ্ধ নিয়ম মেনেই এই ধরনের নারী নির্যাতনের ঘটনার পরেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন৷
সরকারি তৎপরতাও চোখে পড়ে বিশেষভাবে৷ কিন্তু সমস্যা হলো নারী নির্যাতনের অত্যন্ত ভয়ঙ্কর এবং নৃশংস কোনো ঘটনা পর গোটা দেশ জুড়ে যখন প্রতিবাদের ঝড় আছড়ে পড়ে ঠিক ততদিন এই বিশেষ চিন্তা ভাবনা গুলো সক্রিয় থাকে৷ কিন্তু কয়েকদিন যেতে না যেতেই ফের থিতিয়ে পড়ে সরকার ও প্রশাসনের এই সাময়িক অতিসক্রিয়তা এবং নতুন নতুন পরিকল্পনার উদ্যম৷ তাই স্বাভাবিক ভাবেই মনে হতে পারে নারী নির্যাতনের যুক্ত অপরাধীদের যোগ্য শাস্তি এবং শিক্ষা দিতে পারে একমাত্র সমাজের সাধারণ মানুষ৷
অনৈতিক হলেও সাধারন সত্যিটা সোমবার রাজ্যসভায় তুলে ধরলেন সাংসদ জয়া বচ্চন৷ হায়দ্রাবাদ গণধর্ষণকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করে ধর্ষকদের শাস্তির বিষয়টি জনসাধারনের হাতে ছেড়ে দেওয়া হোক বলে কড়া ভাষায় দাবি জানিয়েছেন তিনি৷ যদিও একের পর এক নারী নির্যাতনের ঘটনার পর দেশজুড়ে এই দাবি উঠে আসছে বহুদিন ধরেই৷ এদিন হায়দ্রাবাদের গণধর্ষণের ঘটনা নিয়ে সংসদ অধিবেশনের দুই কক্ষেই দলমত নির্বিশেষে আলোচনা, সমালোচনা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে৷ এরপরই সরকার পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয় ধর্ষণ ও শয়তানি বিরোধী আইনকে আরো কঠোর করা হবে৷ ‘‘সভ্য দেশে এ ধরনের ঘটনা বরদাস্ত করা যায়না৷ সংসদ সদস্যরা চাইলে অবশ্যই আইনের সংশোধন করে নতুন করে কড়া আইন চালু করার কথা ভাবা হবে’’ বলে এদিন সংসদে জানিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং৷
পাশাপাশি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী জি কি বলেছেন ধর্ষণ ও শ্রীলতাহানি ছাড়াও মহিলাদের বিরুদ্ধে যে কোন অপরাধের ক্ষেত্রে আইন সংশোধন করার কথা ভাবা হচ্ছে৷ বিভিন্ন রাজ্যকে এ ব্যাপারে চিঠি দেওয়া হচ্ছে৷ পুলিশ পুলিশ প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গেও আলোচনা করা হচ্ছে”৷ অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷ এদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ইন্ডিয়ান পেনাল কোডে একটি বড়সড় পরিবর্তন আনা হবে এর জন্য ইতিমধ্যেই একটি প্যানেল গঠিত হয়েছে বিভিন্ন আইন পরিবর্তনের সঙ্গে ধর্ষণবিরোধী আইন কেউ আরো কতটা কঠোর করা যায় সে বিষয়টিও দেখা হবে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে৷
তবে এর আগে বহুবার ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানি সংক্রান্ত আইনে সংশোধন হয়েছে কিন্তু কিন্তু কঠোরতর আইন আনা হলেও এই সামাজিক ব্যাধি থেকে মুক্তি মিলছে না বলেই দাবি সংসদ সদস্যদের৷ ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ বন্ধ করতে বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতাকেও একটি বড় কারণ হিসেবে তুলে ধরা হয় সংসদে৷ পাশাপাশি প্রশ্ন ওঠে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও৷ অন্যদিকে হায়দ্রাবাদে পশুচিকিৎসক তরুণীর গণধর্ষণের মামলায় বিচারের ক্ষেত্রে সমস্ত রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে কেন্দ্র৷ এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত করতে ফরেনসিক ল্যাব থেকে ফাস্ট ট্রাক কোর্ট পর্যন্ত সবক্ষেত্রেই রাজ্যের পাশে থাকার আশ্বাস দেওয়া হয় কেন্দ্রের পক্ষ থেকে৷