নয়াদিল্লি:ভুয়ো প্যান কার্ড কাজে লাগিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই বেআইনি লেনদেন করা হয়। তা বন্ধ করতেই প্যানকার্ড ও আঁধার কার্ড সংযুক্তকরণ বাধ্যতামূলক করেছিল কেন্দ্র। সেই কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি। তাই আরও এক বার প্যান কার্ডের সঙ্গে আধারের সংযুক্তকরণের সময়সীমা বাড়াল সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডাইরেক্ট ট্যাক্সেস (সিবিডিটি)।
৩১ ডিসেম্বর ২০১৯-এর পরিবর্তে এই সময়সীমা বাড়িয়ে ৩১মার্চ ২০২০ করা হয়েছে বলে সোমবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে সিবিডিটি। এক্ষেত্রে এই নিয়ে আট বার সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিল বোর্ড।
শুধুমাত্র ভারতীয় নাগরিকদের আধার কার্ড দেয় ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (ইউআইডিএআই) কর্তৃপক্ষ । আর প্যান কার্ড হ'ল আই-টি বিভাগ কর্তৃক ভারতের বাসিন্দা, ফার্ম বা সত্তাকে দেওয়া ১০টি সংখ্যার আলফানিউমেরিক নম্বর, যা দেওয়া হয় সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডাইরেক্ট ট্যাক্সেস (সিবিডিটি) কর্তৃক। গত বছর সেপ্টেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট, কেন্দ্রের ফ্ল্যাগশিপ আধার স্কিমকে সাংবিধানিকভাবে বৈধ বলে ঘোষণা করে বলেছিল যে আই-টি রিটার্ন দাখিল ও প্যান কার্ডের ক্ষেত্রে বায়োমেট্রিক আইডি বাধ্যতামূলক।
সেন্ট্রাল বোর্ড অব ডাইরেক্ট ট্যাক্সেস জানিয়েছে, উল্লিখিত সময়ের মধ্যে যদি প্যানের সঙ্গে আধার যোগ না করা হয়, সেক্ষেত্রে ওই প্যানকার্ডগুলি অকেজো বা বন্ধ হয়ে যাবে। পাশাপাশি বড় অঙ্কের লোকসান হয়ে যাবে। কারণ হিসেবে দপ্তরের কর্তাদের একাংশ বলছেন, আয়কর আইনের চ্যাপ্টার ১৭ বি অনুযায়ী কোনও ব্যাক্তিকে টাকা দেওয়ার সময় সংশ্লিষ্ট টাকাপ্রদানকারী ট্যাক্স ডিডাকটেড অ্যাট সোর্স অর্থাৎ টিডিএস কেটে নেন ও জমা করেন। এজন্য যে ব্যক্তিকে টাকা দেওয়া হচ্ছে, তাঁর প্যান নম্বরটি উল্লেখ করতে হয় । বিভিন্ন ক্ষেত্রে টিডিএস বিভিন্ন রকম হয় যা দু’শতাংশ থেকে শুরু। যিনি টাকা পেলেন, পরবর্তীকালে তিনি রিটার্ন দাখিল করার পর শর্তসাপেক্ষে ওই কেটে নেওয়া টাকা ফেরত পেয়ে যান আয়কর দপ্তর থেকে। কিন্তু যদি প্যান কার্ড বাতিল হয়ে যায়, তাহলে সেক্ষেত্রে প্যান না থাকার ধারা কার্যকর হবে। এক্ষেত্রে ২০ শতাংশ টাকা টিডিএস বাবদ কেটে নেওয়া হবে। যেহেতু প্যানই নেই, তাই সেই টাকা ফেরত পাওয়াও কঠিন হবে।
কোনও ব্যক্তি প্যান না থাকার কারণে সময়ে রিটার্ন দাখিল না করলে, তাঁকে পরবর্তীকালে সুযোগ দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে সময়মতো আয়কর না দেওয়ার অভিযোগে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানার পাশাপাশি সুদও দিতে হয়। এক্ষেত্রে আয়কর দপ্তর যদি কোনও প্যান বাতিল করে, তাহলে ব্যাঙ্ক সহ সবক্ষেত্রেই সেটা ‘ব্লক’ হয়ে যাবে। সুতরাং এক্ষেত্রেও ওই গ্রাহকের প্যান কার্ড নেই বলেই ধরে নেওয়া হবে। সুতরাং প্যান না থাকার কারণে রিটার্ন দাখিল না হলে সেই গ্রাহকরাও ওই একইভাবে আয়কর আইনের সমস্যায় পড়তে পারেন বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে তাদের মতে প্যান-আধার সংযোগের এই নিয়মে ধোঁয়াশা থেকেই যাচ্ছে।
প্রথমত প্যান-আধার সংযোগ নির্দিষ্ট সময়ের পরে কি আর কখনোই করা যাবে না? বিবৃতিতে এবিষয়ে স্পষ্ট করে কিছুই উল্লেখ নেই। এমনকি এর জন্য গ্রাহকরা কী কী সমস্যায় পড়তে পারেন, তা নিয়েও কোনও স্পষ্ট নির্দেশিকা নেই।
দ্বিতীয়ত, যদি কোনও ব্যাক্তি অপর কোনও ব্যক্তিকে কোনও টাকা দিয়ে থাকেন, তাহলে তাঁর প্যাননম্বর উল্লেখ করতে হয়। কিন্তু সেই প্যানকার্ড আধারের সঙ্গে যুক্ত করা আছে কি না, তা তিনি জানবেন কিভাবে? এক্ষেত্রে টিডিএসের হার নিয়েও ধোঁয়াশা থাকতে পারে।
তৃতীয়ত,প্যান কার্ডের সঙ্গে আধার যোগ করবেন কারা? আয়কর দপ্তর প্রথম থেকেই জানিয়েছে, ২০১৯-এ যাঁরা অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছেন, তাঁদের আধার ও প্যান লিঙ্ক হয়েই আছে। কিন্তু এমন বহু মানুষ আছেন, যাঁরা প্যান কার্ড থাকলেও রিটার্ন দাখিল করেন না। অনেকে তো আবার আয়করের আওতাতেই পড়েন না। তাঁদেরও কিন্তু প্যান-আধার সংযোগ বাধ্যতামূলক।
তবে এবার এই বর্ধিত সময়ে গ্রাহকদের সমস্ত ধোঁয়াশা কাটাতে আয়কর দফতর কতটা উদ্যোগ নেয় এখন সেটাই দেখাদেখা