নয়াদিল্লি: এনআরএস-কাণ্ডের প্রতিবাদের আগুন ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে৷ বাংলার ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার দেশজুড়ে চিকিৎসক ধর্মঘটেরও ডাক দিয়েছে বেশ কয়েকটি চিকিৎসক সংগঠন৷ এনআরএসের মতো ঘটনা যাতে দেশজুড়িয়ে ছড়িয়ে না পড়ে, সেদিকে গুরুত্ব দিয়ে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার পথে হাঁটতে চলেছে কেন্দ্রে৷
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডক্টর হর্ষবর্ধন সংবাদ সংস্থা এনএনআইকে জানিয়েছেন, চিকিৎসকদের উপর বেড়ে চলা হামলার ঘটনায় তিনি ও তাঁর মন্ত্রক উদ্বিগ্ন৷ চিকিৎসককে যে বা যারা হেনস্তা করবেন, তাদের যেন কোনও ভাবেই বরদাস্ত না করা হয়৷ চিকিৎসকদের উপর হামলা হামলা হলেই যেন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেয় সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার৷ এই মর্মে দেশের সমস্ত মু্খ্যমন্ত্রীকে নির্দেশ পাঠাতে চলেছেন হর্ষবর্ধন৷
Ministry of Health & Family Welfare: In view of the recent assault on doctors in West Bengal,Health Min,Dr. Harsh Vardhan,today wrote to Chief Ministers of all states & Union Territories drawing their attention for strict action against any person who assaults doctors. (File pic) pic.twitter.com/nukL38iVwb
— ANI (@ANI) June 15, 2019
অন্যদিকে, কেন্দ্র-রাজ্যের সংঘাতের উত্তাপ এবার এনএনআরসেও৷ জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতির কারণ জালতে চেয়ে রাজ্যকে চিঠি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের৷ এনআরএসের ঘটনায় রাজ্যকে অবিলম্বে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পেশ করার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের৷ সূত্রের খবর, রাজ্যকে নোট পাঠিয়ে চিকিৎসক হেনস্তার বেশ কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে৷
এনআরএসের ঘটনা দ্রুত সমাধানের জন্য রাজ্যকে ফের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে অ্যাডভাইজরি নোট পাঠানো হয়েছে বলে সংবাদ সংস্থা এএনআই সূত্রে খবর৷ এর আগেও বাংলায় আইন-শৃঙ্খলা প্রসঙ্গেও অমিত শারের মন্ত্রক থেকে পশ্চিমবঙ্গকে অ্যাডভাইজরি দেওয়ার মধ্য দিয়ে রাজ্যের মানুষকে বিব্রত করা হয়েছে বলেও অভিযোগ তুলেছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ এবার এনআরএস-কাণ্ডে নতুন অ্যাডভাইজরি দেওয়ার ঘটনায় তুঙ্গে বঙ্গ রাজনীতি৷
সূত্রের খবর, রাজ্যে চিকিৎসক হেনস্তার বেশ কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, ‘‘২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলায় সংঘর্ষের ঘটনা বেড়েই চলেছে৷ ২০১৬ সালে ৫০৯টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে৷ ২০১৮ সালে ১০৩৫টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে৷ ২০১৯ সালে ৭৭৩টি টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে৷ ২০১৬ সালে মৃত্যু হয়েছে ৩৬ জনের৷ ২০১৮ সালে ৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ ২০১৯ সালে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ এতেই বোঝা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের শান্তি-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি কেমন৷’’
গত ২০১৭ সালের থেকে এখনও পর্যন্ত বাংলায় ২৩৩ জন চিকিৎসক থেকে শুরু করে নার্স, স্বাস্থ্য কর্মী হাসপাতালের মধ্যেই নিগৃহীত হয়েছেন৷ গোটা ঘটনায় ১১ জনের বিরুদ্ধে মেডিকেয়ার আইন ২০০৯ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে৷ অভিযুক্তদের মধ্যে জনপ্রতিনিধিরও রয়েছেন৷
এর আগেও বাংলার মেডিক্যাল পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডক্টর হর্ষবর্ধন৷ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তিনি আর্জি জানালেন, এই বিষয়কে প্রেস্টিজ ইস্যু করবেন না, বিক্ষোভ শুনে সমাধানের চেষ্টা করুন। শুক্রবার সকালে দিল্লির এইমস হাসপাতালের চিকিৎসকদের সংগঠনের তরফে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করা হয়। তাঁরা গিয়ে হর্ষবর্ধনকে বলেন, এই পরিস্থিতির উপর তিনি যেন নজর দেন৷ নাহলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাবে।
পরে সংবাদ সংস্থা এএনআইকে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে বলছি, এই বিষয়কে প্রেস্টিজ ইস্যু করবেন না। তিনি ডাক্তারদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তার ফলেই ডাক্তাররা আরও রেগে গিয়ে আন্দোলনের পথে গিয়েছেন। আমি আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখব। এ ছাড়া আমি ফোনেও তাঁর সঙ্গে কথা বলব।”
এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তার পরিবহ মুখোপাধ্যায় গুরুতর আহত হওয়ার পর ডাক্তারদের সুরক্ষার দাবি তুলে ধর্নায় বসেন এনআরএস হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তার ও ইন্টার্নরা। ধীরে ধীরে সেই আন্দোলনে শামিল হন কলকাতা ও রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তাররা। ধীরে ধীরে এই আন্দোলন রাজ্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশে।