নয়াদিল্লি: ছোট্ট এক ফালি দমবন্ধ করা ঘর৷ নেই কোনও জনলা৷ দরজার বদলে ঝুলছে এক ফালি পর্দা৷ সেই ঘরেই কোনও মতে নামাজ পরে কাজে রওনা দিলেন মহম্মদ আমির খান৷ সময় মতো হাসপাতালে পৌঁছতে হবে তাঁকে৷ সেখান থেকে মৃতদেহ শ্মশানে পৌঁছোনই যে তাঁর কাজ৷
দিল্লির বুকে নোভেল করোনাভাইরাস তাণ্ডব শুরু করার আগে ট্যাক্সি চালিয়েই রুজিরুটি চলত আমিরের৷ কিন্তু প্রায় টানা তিন মাসের লকডাউনে সেই কাজে ভাটা পড়েছে৷ এদিকে, রাজধানীতে ক্রমাগত বেড়ে চলেছে আক্রান্তের সংখ্যা৷ এই পরিস্থিতিতে এক বন্ধুর পরামর্শে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালানোর কাজ শুরু করেন আমির৷ তাঁর বন্ধুর কথায়, এই মুহূর্তে যে ব্যবসাটা সবচেয়ে ভালো চলছে, তা হল অ্যাম্বুলেন্সের৷
বছর ৩৮-এর আমির যখন প্রথম দিন কাজে যোগ দিতে যান, তখনও পর্যন্ত তিনি জানতেন না তাঁকে করোনা রোগী নিয়ে যেতে হবে৷ তাঁর হাতে পিপিই তুলে দেওয়ার পরই, গোটা বিষয়টি স্পষ্ট হয় তাঁর কাছে৷ তবে এখন তাঁর কাজ হল হাসপাতাল থেকে করোনা রোগীদের মৃতদেহ শ্মশান কিংবা কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া৷ কখনও একসঙ্গে পাঁচ-ছয়টি দেহও নিয়ে যান তিনি৷ নিথর দেহগুলির আবরণের উপর লেখা থাকে তাঁদের নাম৷ অনেক সময় অ্যাম্বুলেন্সে একাই থাকেন আমির৷ গাড়ি থেকে মর দেহ নামানোর জন্য ভরসা বলতে মৃতের পরিবারের লোকজন৷
আমির বলেন, ‘‘প্রথমে আমার ভাবতেই অবাক লাগত, রোগীর বদলে আমি মৃতদেহ বয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ তবে এখন সবটাই সয়ে গিয়েছে৷’’ বেশি দিন হয়নি, আমিরের অ্যাম্বুলেন্স মৃতদেহ বহন করা শুরু করেছে৷ এখন এই কাজেই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন তিনি৷ সেইসঙ্গে নিরাপত্তা সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল আমির৷ কিন্তু এতেও ঝক্কি কম নয়৷ এই কাজের জন্য হাজমাত স্যুটের মতো পোশাক পরা উচিত ছিল তাঁর৷ কিন্তু দিল্লির প্রচণ্ড গরমে এই পোশাক একেবারেই বেমানান৷ আমির বলেন, ‘‘আধ ঘণ্টা আমাদের এই পোশাক পরতে হলে আমরা অজ্ঞান হয়ে পড়ব৷’’ এর চেয়ে হাসপাতালের পাতলা গাউন পরতেই স্বচ্ছন্দ্য বোধ করেন আমির ও তাঁর মতো বাকি ড্রাইভাররা৷
দিল্লিতে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও অধিকাংশ মানুষই প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সগুলিকে ডেকে পাঠায়৷ আমির জানান, দিনে ১২ ঘণ্টা কাজ করতে হয় তাঁদের৷ আগে যেখানে দিনে দু’-তিনটে দেহ নিয়ে যেত হত, এখন সংখ্যাটি অগুনিত৷