সন্তান কোলে দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে বাড়ির পথে দম্পতি

সন্তান কোলে দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে বাড়ির পথে দম্পতি

ভেলোর: করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়েও লকডাউনের জেরে গণপরিবহন না থাকায় পরিযায়ী শ্রমিকের পায়ে হেঁটে বাড়ি ফেরার ছবি ধরা পড়ল৷ পরিস্থিতির চাপে বিপর্যস্ত এক দম্পতি এক বছরের শিশু সন্তানকে নিয়ে পথে নেমে পড়েছেন হেঁটে বাড়ি ফিরবেন বলে।

জানা গিয়েছে, নবীন এবং রম্যা নামে এই দম্পতি কোনও উপায় না পেয়ে চেন্নাইয়ের পারিবারিক বাড়িতে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কারণ নবীন কোয়েম্বাটুরের মাদুরাইয়ে একটি অফিসে কর্মরত ছিলেন৷ করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে তিনি চাকরি হারান৷ অনেক চেষ্টা করেও নবীন কোয়েম্বাটুরে নতুন করে কোনও কাজ জোগাড় করে উঠতে পারেননি। অথচ সঞ্চিত অর্থও ফুরিয়ে যাওয়ার জোগাড়। নবীন জানিয়েছেন যে, করোনার ধাক্কা, দেশজুড়ে লকডাউনের জেরে ফুরিয়ে আসছিল তাঁদের পরিবারের সঞ্চিত অর্থ। অবশেষে চাকরি খোয়ানোর চূড়ান্ত ধাক্কাটাও আসে তাঁর পরিবারে৷ এমন একটা অবস্থায় কোয়েম্বাটুরের ভাড়া বাড়ির টাকা জোগাড় করতে ভীষণ সমস্যা হচ্ছিল৷ টাকার জন্য বাড়িওয়ালা বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। তাছাড়া চেন্নাইয়ে বাবার চিকিৎসার জন্যও ৩০ হাজার টাকা পৌঁছে দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। এই সব ভেবেই নবীন এবং রম্যা কোয়েম্বাটুর ছেড়ে চেন্নাই যাওয়ার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত হয়ে যান।

মানসিক ভাবে প্রস্তুত হলেও, কোনও যানবাহন না চলায় পায়ে হেঁটেই যাত্রা শুরু করতে হয় তাঁদের৷ নিজেদের জরুরি জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে এক বছরের শিশু সন্তানের সঙ্গে পথে নামেন এই দম্পতি। টানা ৫ দিন হাঁচার পর ভেলোর পর্যন্ত পৌঁছে তাঁরা আর পেরে ওঠেননি৷ শারীরিক ভাবে আর সম্ভব হচ্ছিল না, তাই পথেই আশ্রয় নেন৷ আর সেখানেই তাঁদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন ভেলোরের বাসিন্দা রবিশঙ্কর। তাঁদের দৈনতার কথা জানতে পেরে তিনি এই দম্পতির হাতে ১০০০ টাকা দিয়ে, নিজের গাড়িতে তাঁদের চেন্নাই পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও করেন। নবীন জানিয়েছেন যে, চেন্নাইয়ের একটি ব্লক কারখানায় চাকরি পেয়েছেন তিনি৷ অতএব আর একেবারে বেকার হয়ে তাঁর জীবন কাটবে না৷ 
উল্লেখ্য, করোনা পরিস্থিতিতে রবিশঙ্কর অনেক দিন ধরেই বৃদ্ধদের জন্য খাবারের সংস্থান, সম্বলহীনদের অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর জোগানের মতো সামাজিক কাজ করে আসছিলেন৷ সেই সঙ্গে নিজের গাড়িটিকে তিনি ছেড়ে দিয়েছিলেন আপৎকালীন পরিষেবার জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *