নয়াদিল্লি: আগামী জুলাই মাস থেকেই দেশে করোনার সংক্রমণ কমতে পারে বলেই আশা করছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। করোনার দ্বিতীয় ইনিংসে সংক্রমণের হার যেভাবে দ্রুতগতিতে ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে, তেমনই জুলাই মাসের মধ্যে দ্রুত গতিতেই তা নিম্নগামী হবে বলে মনে করছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক। নাম প্রকাশ না করে এক কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের এক কর্তা জানিয়েছেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ক্ষেত্রে যে একই ধারা দেখা গিয়েছে, তার ওপর ভিত্তি করেই কেন্দ্রের তরফ থেকে এমনটা আশা করা হচ্ছে।
ওই স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, ‘করোনার দ্বিতীয় ইনিংসে সর্বত্রই দেখা গিয়েছে সংক্রমণের সংখ্যা দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার তা নেমেও এসেছে আরও দ্রুতগতিতে। তার ওপর ভিত্তি করেই আমরা আশা করছি, আগামী ছ’ সপ্তাহ থেকে দু’মাসের মধ্যে সংক্রমণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। জুলাই মাসের মধ্যেই দৈনিক সংক্রমণের হার হ্রাস পাবে।’ তিনি যুক্তি দিয়েছেন, ‘সংক্রমণের গ্রাফ কীভাবে ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে সেদিকে নজর রাখলেই বুঝতে পারবেন, মার্চ মাসের ১ তারিখ থেকে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। সেখান থেকে পরিস্থিতি খারাপ হতে প্রায় আড়াই মাস সময় লেগেছে। যেভাবে এই সংখ্যা বেড়েছে, তাতে তা নিচে নামতে আরও দু’ থেকে আড়াই মাস সময় লাগতে পারে।’ সংক্রমণের হার কমা নিয়ে সরাসরি কিছু না বললেও, নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) বিনোদ পলও করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ক্ষেত্রে বলেছেন, ‘সংখ্যা কখন কমবে বা কোন স্তরে চলে যাবে, তা নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন। তবে আমরা বিশ্বজুড়ে যা দেখেছি, তাতে দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণের সংখ্যা দ্রুত গতিতে বেড়ে যাওয়ার চেয়ে আরও দ্রুতগতিতে কমেছে৷’
কেন্দ্র সরকারের তত্ত্বের সঙ্গেই আশার বাণী মিলেছে কেমব্রিজের গবেষকদের সমীক্ষাতেও। ভারতে দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ শিখরে পৌঁছেছে, এবার তা নিম্নমুখী হবে বলেই ‘কেমব্রিজ জাজ বিজনেস স্কুল’ এবং ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইকনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল রিসার্চ’-এর গবেষকরা দাবি করেছেন। গবেষকদের আশঙ্কা, ‘কয়েকটি রাজ্যে এখনও সংক্রমণ ঊর্ধ্বগামী থাকবে। অসম, হিমাচলপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, ত্রিপুরার মতো কিছু রাজ্যে সংক্রমণের হার আগামী দু’সপ্তাহেও ঊর্ধ্বমুখী থাকবে। তাই সার্বিক ছবিটা বদলালেও কিছু রাজ্যে অন্য রকম ছবি দেখা যাবে।’
সংক্রমণ কমলেও করোনায় মৃত্যুর সংখ্যার ক্ষেত্রে পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে সমীক্ষায়। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ভারতের বর্তমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থা খুবই উদ্বেগজনক। অক্সিজেন, আইসিইউ শয্যা, ওষুধের অভাব। তাতে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই আগামী কয়েক দিন মৃত্যু ৪ হাজারের আশপাশেই থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে।’ গ্রাফ নিম্নমুখী হলেও, সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা। সমীক্ষায় আরও বলা হয়েছে, ‘ভারতে দ্বিতীয় ঢেউয়ে যে প্রজাতি সক্রিয়, তার সংক্রমণ ক্ষমতা অনেক বেশি। এমনকী, করোনার টিকা দিয়ে শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে, সেই অ্যান্টিবডিও অনেক সময় এই ভাইরাসকে রুখতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে টিকা নেওয়ার পরেও অনেক বেশি মানুষ কোভেডে আক্রান্ত হচ্ছেন।’