সেনাবাহিনীতে মহিলাদের স্থায়ী নিয়োগে বাধ্য কেন্দ্র, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সর্বোচ্চ আদালতের

কেন্দ্রের যুক্তির তীব্র ভর্ৎসনা করে সর্বোচ্চ আদালত জানিয়ে দিয়েছে,সেনাবাহিনীর মহিলা অফিসারদের স্থায়ী কমিশন (পারমানেন্ট কমিশন) দিতে বাধ্য কেন্দ্র এবং এর বিরুদ্ধে কেন্দ্রের পেশ করা যুক্তি যে শুধু সাম্যের নীতি লঙ্ঘনকারী তাই নয় বরং লিঙ্গ বৈষম্যকে প্রশ্রয় দেয় বলেও উল্লেখ করে সর্বোচ্চ আদালত। 

কেন্দ্রের বিরুদ্ধে মহিলাদের দুর্বল প্রতিপন্ন করে লিঙ্গবৈষম্যকে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আনল স্বয়ং সর্বোচ্চ আদালত। সেনা বাহিনীতে মহিলা আধিকারিকদের অধিকার প্রসঙ্গে ২০১০ সালে দিল্লি হাইকোর্টের রায়ের বিরোধিতা করে 'শারীরিক সীমাবদ্ধতা' ও 'সামাজিক নিয়ম'-এর যুক্তি দেখিয়ে এইক্ষেত্রে মহিলাদের স্থায়ী কমিশনের বিরোধিতায় কেন্দ্রের পাল্টা যুক্তির তীব্র ভর্ৎসনা করে সর্বোচ্চ আদালত জানিয়ে দিয়েছে,সেনাবাহিনীর মহিলা অফিসারদের স্থায়ী কমিশন (পারমানেন্ট কমিশন) দিতে বাধ্য কেন্দ্র এবং এর বিরুদ্ধে কেন্দ্রের পেশ করা যুক্তি যে শুধু সাম্যের নীতি লঙ্ঘনকারী তাই নয় বরং লিঙ্গ বৈষম্যকে প্রশ্রয় দেয় বলেও উল্লেখ করে সর্বোচ্চ আদালত। 

 

বিগত ২০১০ সালে সেনাবাহিনীর মহিলা অফিসারদের স্থায়ী কমিশন (পারমানেন্ট কমিশন)-এর পক্ষে দিল্লি উচ্চ আদালতের রায়ের পর দীর্ঘ ৯ বছর পর অবশেষে ২০১৯ সালে আটটি বিভাগে স্থায়ী কমিশনের অধিকার দেওয়া হয় মহিলা অফিসারদের। ২০১৯ সালের নীতি সিদ্ধান্তে কেন্দ্রের তরফেই বলা হয়েছিল যে মহিলা অফিসারদের স্থায়ী কমিশন দেওয়ার ক্ষেত্রে শারীরিক চরিত্র কোনওভাবেই অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে না। কিন্তু তার পরেও সুপ্রিম কোর্টের কাছে লিখিত আকারে এর স্ববিরোধী  কিছু যুক্তি পেশ করে কেন্দ্র। যেখানে তুলে ধরা হয় পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের শারীরিক ক্ষমতা, মহিলাদের মাতৃত্ব এবং পরিবারের প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্যের যুক্তি। এবিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে উল্লেখ করা হয়, মহিলাদের ক্ষমতা ও তাঁদের দক্ষতা সম্পর্কে কোনও রকম সন্দেহ রাখার অর্থ শুধু তাঁদের অপমান করা নয়, গোটা ভারতীয় সেনা বাহিনীকে অপমান করা। 

কেন্দ্র লিখিত যুক্তিতে ব্যাখ্যা দিয়েছিল যে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে কোনো মহিলা আধিকারিক যদি শত্রু পক্ষের হাতে ধরা পড়ে যান, তাহলে একদিকে তাঁর জন্য যেমন মানসিক এবং শারীরিক চাপ হতে পারে, তেমনই সরকারের জন্যেও বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। কেন্দ্রের আবেদনে এমনও দাবি করা হয়েছিল, বেশিরভাগ ইউনিটে যে পুরুষ সেনা কর্মীরা আছেন তাঁরা অনেকেই গ্রামাঞ্চলের সেখানে তাঁদের ঊর্ধ্বতন অফিসার হিসেবে কোনও মহিলা কর্মী নিযুক্ত হলে, তাঁকে মেনে নিতে নাও পারে গোটা ইউনিট। অর্থাৎ পুরুষ কর্মীদের পছন্দ অপছন্দের কথা মাথায় রেখে মহিলা আধিকারিকদের উচ্চপদে নিযুক্ত করতে হবে। 

তবে কেন্দ্রের এই স্ববিরোধী যুক্তিকে এককথায় উড়িয়ে দিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে সেনাবাহিনীতে মহিলা আধিকারিকদের উন্নতিকরণের পক্ষেই শিলমোহোর দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *