নয়াদিল্লি: দেশের তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের প্রায় ৯৫শতাংশই বেসরকারি হাতে তুলে দিতে উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস কর্পোরেশন (ওএনজিসি)’র সর্বোচ্চ উৎপাদনকারী তৈলক্ষেত্রগুলিকে দেশি বিদেশি বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দিতে প্রস্তাব আনা হয়েছে।
নীতি আয়োগের উদ্যেগে আনা এই প্রস্তাব প্রায় অনুমোদিত হয়েও গিয়েছিল। কিন্তু ওএনজিসি’র মধ্যে থেকে জোরালো আপত্তি ওঠায় আপাতত তা স্থগিত রাখা হয়েছে। আশঙ্কা, মোদী সরকার ক্ষমতায় ফিরলে দ্রুত এই প্রস্তাব অনুমোদন করিয়ে নেওয়া হবে। নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যান রাজীব কুমারের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি ওএনজিসি’র ৯ টি তৈলক্ষেত্রকে চিহ্নিত করেছিল বেসরকারি হাতে হস্তান্তরের জন্য। এগুলি হলো: মুম্বাই হাই, হীরা, ডি ১, ভাসাই পূর্ব, পান্না, আসামের গ্রেটার জোরাজান, গেলেকি, রাজস্থানের বাঘেওয়ালা, গুজরাটের কালোল। এই ৯টি ক্ষেত্র থেকে ৯৫শতাংশ তেল ও গ্যাস পায় দেশ।
এগুলিকে সরাসরি বিক্রির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আরও ১৪৯টি তৈলক্ষেত্রকে একসঙ্গে এনে নিলামে চড়ানোর কথাও রয়েছে প্রস্তাবে। কার্যত ১০০শতাংশ অভ্যন্তরীণ উৎপাদনই এভাবে বেসরকারি হাতে দেবার পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নিযুক্ত ওই কমিটি যুক্তি সাজিয়েছিল রাষ্ট্রায়ত্ত পেট্রোলিয়াম সংস্থার উৎপাদন শ্লথ হয়ে এসেছে। বেসরকারি সংস্থাকে দিলে উৎপাদন বাড়বে। তেল ও গ্যাসের দাম নির্ধারণ ও বিপণনের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতাও বেসরকারি সংস্থা পাবে। আপত্তি ওঠে ওএনজিসি এবং প্রাক্তিক গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের একাংশের মধ্যে থেকেই। প্রশ্ন ওঠে, কোনও বাস্তব সমীক্ষা ছাড়াই কী করে সরকার ঠিক করছে বেসরকারি হাতে গেলেই উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে? এই যুক্তি সাজানো হচ্ছে শুধুমাত্র বিক্রির প্রস্তাবকে বৈধতা দেবার জন্যই।
ওএনজিসি বছরের পর বছর পরিশ্রম করে এই ক্ষেত্রগুলি অনুসন্ধান করেছে, তা থেকে গ্যাস ও তেল উত্তোলনের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জন করেছে, সেই তেল তুলেছে। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। দেশি বিদেশি বেসরকারি সংস্থাগুলি অনুসন্ধানে আগ্রহী নয়। ইতিমধ্যেই উৎপাদন হচ্ছে এমন ক্ষেত্রগুলি পেতেই তারা বেশি উৎসাহী। তাদেরই সুরে সরকার নিযুক্ত কমিটি সওয়াল করছে, বেসরকারি সংস্থা মূলধন ও প্রযুক্তি আনতে পারবে।