গ্রামের পথে চুড়ি বিক্রি করা ছেলেই আজ IAS অফিসার

গ্রামের পথে চুড়ি বিক্রি করা ছেলেই আজ IAS অফিসার

নয়াদিল্লি: মহারাষ্ট্রের মহাগাঁও গ্রাম৷ এই গ্রামের অলিগলিতেই মায়ের হাত ধরে ঘুরে ঘুরে চুড়ি বিক্রি করে ছোটবেলা কেটেছে তাঁর৷ যেটুকু আয় হত তাই দিয়েই সংসার চালাত ১০ বছরের রমেশ৷ ছোটবেলা থেকে সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নিলেও, পড়াশোনা বন্ধ করেননি তিনি৷ মেধা আর পরিশ্রমে গ্রামের পথে চুড়ি বিক্রি করা সেই ছোট্ট ছেলেটিই আজ ঝাড়খণ্ডের বিদ্যুৎ মন্ত্রালয়ের সংযুক্ত সচিব রমেশ ঘোলাপ। 

২০১২ সালে আইএএস অফিসার হন তিনি৷ মহারাষ্ট্রের মহাগাঁওয়ে চুড়ি বিক্রি করা থেকে আইএএস অফিসার হওয়ার এই লড়াইটা একেবারেই সহজ ছিল না৷ তাঁর বাবা গোরখ ঘোলাপের ছিল একটি ছোট্ট সাইকেল সারানোর দোকান৷ সাইকেল সারিয়ে যা রোজগার হত, তা দিয়ে কোনও মতে চলে যেত তাঁদের ছোট্ট সংসার৷ কিন্তু গোরখ ছিলেন মাদকাসক্ত৷ নিজের উপার্জন তো বটেই, স্ত্রী আর ছেলের চুড়ি বিক্রির টাকাও নেশায় উড়িয়ে দিতেন৷ অতিরিক্ত নেশার ফলে খুব কম বয়সেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি৷ রমেশ যখন দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়েন, তখন মৃত্যু হয় তাঁর বাবার৷ একটি ছোট ভাইও রয়েছে রমেশের৷

পড়াশোনার জন্য বর্শিতে এক আত্মীয়ের বাড়ি চলে গিয়েছিলেন গ্রামের রামু৷ সেখানে সকালবেলা ছোট খাটো নানারকম কাজ করে মা-ভাইরে টাকা পাঠাতেন তিনি৷ স্কুলে মেধাবী ছাত্র ছিলেন রমেশ৷ মাধ্যমিকে ৮৮.৫০ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করেন৷ এরপর মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন তিনি৷ পাশাপাশি চলতে থাকে আইএস-এর পড়াশোনা৷ প্রথমবার পরীক্ষায় ব্যর্থ হলেও, দ্বিতীয়বার পাশ করে যান তিনি৷ এর পর আইএএস অফিসার হন রমেশ৷ বর্তমানে ঝাড়খণ্ডের বিদ্যুৎ মন্ত্রালয়ের সংযুক্ত সচিব তিনি৷ 

রমেশ জানান, আট বছর হয়ে গেল আইএএস অফিসার হিসেবে কাজ করছেন তিনি। কিন্তু তাঁর মা এখনও সেই আগের মতো চুড়ি বিক্রি করেন। রমেশ জানান, তাঁর মা বলেন যে, এক সময় তাঁর পড়াশোনার অর্থ এই চুড়ি বিক্রি করেই রোজগার করেছেন তিনি। সেজন্যই আজ ভালো কালেক্টর হতে পেরেছে তাঁর ছেলে। তাই যতদিন শরীর সঙ্গ দেবে, তত দিন চুড়ি বিক্রি করে যেতে চান রমেশের মা৷ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

13 − twelve =