নয়াদিল্লি: পরাজয় নিশ্চিত জেনে শেষ দু’দফায় বেপরোয়া নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ। দু’জনেরই নির্বাচনী সভা ঢেলে সাজানো হয়েছে নতুন করে। পূর্ব নির্ধারিত সূচির বাইরে করবেন অতিরিক্ত সভা। ঠাসা কর্মসূচি। দম ফেলার পর্যন্ত সময় নেই। বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, পাঞ্জাব এবং মধ্যপ্রদেশে, যেখানে ক্ষমতায় নেই বিজেপি। সেইসঙ্গেই, ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’কে আড়াল করতে তীব্র করা হচ্ছে সাম্প্রদায়িক প্রচার। নির্বাচনীবিধিকে তোয়াক্কা না করে যা খুশি বলে চলেছেন। আর তিন-সদস্যের নির্বাচন কমিশনে দু’জন ধৃতরাষ্ট্র দু’জনের কোনও ভুলই দেখতে পাচ্ছেন না। বাকি একজনের আপত্তি সংখ্যাগরিষ্ঠতায় টেকেনি।
পাঁচদফা ভোট শেষ হয়ে গিয়েছে। বাকি আর দু’দফা। শেষ বিধানসভা নির্বাচন ও রাজ্যওয়াড়ি ভোটের প্রবণতা দেখে নিউজক্লিকের হিসাবে, পাঁচদফায় যে ৪২৪টি আসনে নির্বাচন হয়েছে, সেখানে বিজেপি’র নেতৃত্বে এনডিএ পেতে চলেছে সাকুল্যে ১২৪টি আসন। যেখানে পাঁচবছর আগে তারা পেয়েছিল ২৫১টি আসন। এই পাঁচদফায় কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ’র আসন ৫৫ থেকে বেড়ে হবে ১৬৯। এই দু’টি জোট ছাড়া এনডিএ-বিরোধী আঞ্চলিক দলগুলির জোট, যারা চূড়ান্ত ফল ঘোষণার পরে খুব সম্ভবত ইউপিএ-কে সমর্থন করতে চলেছে, তাদের মধ্যে উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি ও রাষ্ট্রীয় লোক দলের জোট তাক লাগিয়ে দেওয়া ফল করতে চলেছে। রাজ্যে আশিটির মধ্যে ইতিমধ্যে যে ৫৩টি আসনে নির্বাচন হয়েছে, তাতে এই জোট এবারে পেতে চলেছে ৩৭টি আসন, যেখানে পাঁচবছর আগে পেয়েছিল মাত্র চারটি আসন। বাকি দু’দফায় ২৭টি আসনের নির্বাচনে এই সংখ্যা আরও বাড়বে। উত্তরপ্রদেশের পাশাপাশি তামিলনাডুতেও, জোর ধাক্কা খেতে চলেছে এনডিএ। রাজ্যের ৩৮টি আসনের (একটি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত রাখা হয়েছে) মধ্যে বিজেপি’র জোটসঙ্গী এডিএমকে হারতে চলেছে ২৮টি আসনে। এই পাঁচদফায় বামপন্থীদের আসন দশ থেকে বেড়ে ১৯ হবে বলে নিউজক্লিকের হিসাব।
শেষ দু’দফায় আর ১১৮টি কেন্দ্রে নির্বাচন বাকি। অধিকাংশই গুরুত্বপূর্ণ হিন্দিবলয়ে। মরিয়া বিজেপি। মোদী, অমিত শাহ দু’জনেরই নির্বাচনী সভা ঢেলে সাজানো হয়েছে নতুন করে। বিজেপি’র কৌশল পশ্চিমবঙ্গ, পাঞ্জাব এবং মধ্যপ্রদেশে, যেখানে ক্ষমতায় নেই বিজেপি, সেখান থেকে সর্বোচ্চ আসন তুলে নিয়ে আসা। একটি সূত্র জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে আরও অন্তত চারটি জনসভায় ভাষণ দেবেন মোদী। পশ্চিমবঙ্গ মানে ৪২টি আসন, উত্তরপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রের পর তৃতীয় বৃহত্তম। বুধবার রাজ্যের দু’টি সভায় মোদীর ভাষণ দেওয়ার কথা। সঙ্গে উত্তরপ্রদেশে দু’টি সভা করবেন তিনি। ষষ্ঠদফার আগে হরিয়ানায় আরও তিনটি সভা করার পরিকল্পনা রয়েছে। নিশ্চিত হারের ভয়ে মরিয়া মোদী এখন সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের বিষ ছড়াচ্ছেন। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন সংখ্যালঘুদের প্রতি বিদ্বেষ ছড়াতে যিনি বলেছিলেন, ‘হাম পাঁচ, হামারে পঁচিশ’। সংখ্যালঘুর ত্রাণশিবিরের উদ্দেশে যাঁর নির্মম তামাশা ছিল ‘বাচ্চা তৈরির মেশিন’। যেকারণে এবারে ‘সন্ত্রাসে অভিযুক্ত বিচারাধীন’ প্রজ্ঞা সিং ঠাকুরকে প্রার্থী করে একত্রিত করতে চাইছেন হিন্দুত্বের ভোটব্যাঙ্ককে। রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে মেকিয়াভেলির কৌশলে ‘হিন্দুদের’ নামে সন্ত্রাসবাদীদের রক্ষা করা, আসলেই ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতির সবচেয়ে জঘন্য প্রকাশ।