হায়দরাবাদ: একটি মোরগের কাহিনি!
না, ধপধপে দামি কাপড়ে ঢাকা খাবার টেবিলে খাবার হিসেবে হাজির হওয়া মোরগের কাহিনি নয়, এ মোরগ হাজির খবর হিসেবে! বলা ভালো, ‘রোজ কত কী ঘটে যাহা তাহা’র ভিড়ে বেনজির ঘটনা হিসেবে! সে যে ঘাতক! মানুষ মারার দায়ে তার ঠাঁই হয়েছে থানায়! অপেক্ষা আদালতে পেশ হওয়ার! বিস্ময়কর এবং একই সঙ্গে মর্মান্তিক এই ঘটনাটি গত সোমবার ঘটেছে তেলেঙ্গানার জাগতিয়াল জেলায়৷
কয়েক বছর আগে থেকে আইনের চোখে মোরগের লড়াই তেলেঙ্গানায় নিষিদ্ধ হলেও, লুকিয়ে-চুরিয়ে নিয়ম ভাঙার চল যে একেবারেই নেই তা নয়৷ বিশেষত সংক্রান্তির সময়৷ তেমনই একটি গোপন মোরগ লড়াইয়ের আয়োজন হয়েছিল লোথুনুর গ্রামের ইয়েলাম্মা মন্দিরের কাছে৷ সেই বেআইনি লড়াইয়ে অংশ নেওয়ার জন্য নিজের মোরগ নিয়ে এসেছিলেন থানাগুল্লা সতীশ (৪৫)৷ কিন্তু মালিকের কবজা থেকে মুক্ত হতে চাওয়া মোরগটি যখন ছটফট করছিল, তখন তার পায়ের সঙ্গে বাঁধা ছুরিতে (কোড়ি কাঠি) আচমকাই কেটে যায় সতীশের কুঁচকির পেশি৷ মারাত্মক ভাবে রক্তাক্ত সতীশকে তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ততক্ষণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে৷ ঘটনার তদন্তে নেমে ‘ঘাতক’ মোরগটিকে গোলাপল্লি থানায় নিয়ে আসে পুলিশ৷ আপাতত মোরগটিকে দেখভাল করছেন পুলিশকর্মীরাই, তাঁরাই ব্যবস্থা করছেন খাবারের৷
কয়েকটি সংবাদমাধ্যম ইতিমধ্যেই খবর করেছে যে, ওই মোরগটিকে ‘গ্রেপ্তার’ করেছে পুলিশ৷ থানায় পাখিটিকে বেঁধে রাখা হয়েছে বলে ফুটেজও দেখিয়েছে তারা৷ যদিও মোরগটিকে গ্রেপ্তার করার বা পুলিশ হেফাজতে রাখার কথা অস্বীকার করেছে থানা৷ গোলাপল্লি থানার স্টেশন হাউজ অফিসার (এসএইচও) বি জীবন জানিয়েছেন, পাখিটিকে গ্রেপ্তার বা আটক কোনওটিই করা হয়নি৷ পুলিশ মোরগটিকে রক্ষা করার দায়িত্ব নিয়েছে এবং তাকে একটি খামার বাড়িতে রেখেছে৷ তাঁর বক্তব্য, ‘আমরা মোরগটিকে আদালতে পেশ করব এবং পরবর্তী করণীয়র ব্যাপারে বিচারকের নির্দেশ অনুসরণ করব৷’
মোরগ লড়াইকে কেন্দ্র করে জুয়ায় লক্ষ লক্ষ টাকা ওড়া বিচিত্র কিছু নয়৷ ট্র্যাডিশনের অঙ্গ হিসেবে বিপুল সংখ্যক লোক যখন এই রক্তের হোরিখেলায় মেতে ওঠেন, তখন তাতে দু’-একটা পাখির মৃত্যুও নতুন কোনও ঘটনা নয়৷ কিন্তু মোরগের হাতে (থুড়ি পায়ে) মালিকের মৃত্যু এবং তার জন্য মোরগটির আদালতে ওঠা, সম্ভবত আক্ষরিক অর্থেই অভূতপূর্ব! সত্যিই কী বিচিত্র…