নয়াদিল্লি: সারা দেশের কাছে নিজামুদ্দিল এখন দুঃস্বপ্ন৷ করোনার বিরুদ্ধে লড়াইকে আরও কঠিন করে তুলেছে তবলিঘি জামাতের ধর্মীয় সমাবেশ৷ গত কয়েকদিন ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পুলিশ, স্বাস্থ্যকর্মী এবং আমলারা হণ্যে হয়ে খুঁজে চলেছেন মরকজে করোনা রোগীদের সংস্পর্শে আসা তবলিঘি জামাতের প্রতিটি সদস্যকে৷
বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়, সারা দেশে এখনও পর্যন্ত ৯ হাজার তবলিঘি জামাত সদস্য ও তাঁদের সংস্পর্শে আসা ব্যাক্তিদের চিহ্নিত করে কোয়াকেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে৷ এই বিশাল কর্মযজ্ঞের সঙ্গে যুক্ত এক সরকারি আধিকারিক জানান, ‘‘এটা একটা দুঃস্বপ্নের মতো৷ যে দুঃস্বপ্ন ভারতকে ক্রমাগত গ্রাস করছে৷’’
দক্ষিণ দিল্লির ঘন জনবসতিপূর্ণ নিজামুদ্দিনের সাত তলা মরকজ থেকে এই দুঃস্বপ্নের সূত্রপাত৷ ভারতে আসা তবলিঘি জামাতের বিদেশি সদস্যদের এটাই প্রথম আস্তানা৷ তাঁদের মধ্যে অনেকেই এসেছেন করোনা বিধ্বস্ত দেশ থেকে৷ তাঁদের সংস্পর্শেই প্রথমে মরকজ, তারপর গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ৷ ওই আধিকরিকের কথায়, তবলিঘি জামাতের ৯৬০ জন বিদেশী কর্মীকে চিহ্নিত করাই এখন প্রধান লক্ষ্য৷
বিদেশি সদস্যদের নাম, ঠিকানা নথিভুক্ত রয়েছে তহলিঘি জামাতের খাতায়৷ কিন্তু দেখা গিয়েছে, নথিভুক্ত অধিকাংশ নাম এবং পাসপোর্ট নম্বরই ভুয়ো৷ নামের বানানেও রয়েছে প্রচুর ভুল৷ তাই সঠিক নথি ছাড়াই দেশের ৭০০-র বেশি জেলায় চলছে তহলিঘি জামাতের বিদেশি সদস্যদের খোঁজ৷ ওই আধিকারিক আরও জানান, যতটা সম্ভব আমরা গভীরে ঢুকে খোঁজ চালাচ্ছি৷ কিন্তু শুধু নিজামুদ্দিন নয়, ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে তবলিঘি জামাতের ধর্মীয় সমাবেশে যোগ দেওয়া লক্ষাধিক মানুষ বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছেন৷ তাঁদের চিহ্নিত করা খুব একটা সহজ কাজ নয়৷
মার্চের মাঝামাঝি দক্ষিণ দিল্লির ওই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার এক মসজিদে জমায়েতের ডাক দিয়েছিল তবলিঘি জামাত। এই জমায়েতে সামিল হন দেশ-বিদেশের কয়েক হাজার মানুষ৷ লকডাউনের জেরে আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবা বন্ধ হওয়ায় তাঁরা কেউই দেশে ফিরতে পারেননি৷ আটকে পড়েন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বহু মানুষও৷ একটি কমপ্লেক্সের মধ্যেই ঠাসাঠাসি করে ছিলেন তাঁরা৷ মঙ্গলবার থেকে টানা ৩৬ ঘণ্টা অপারেশন চালিয়ে নিজামুদ্দিন ২,১১৩ জনকে বার করে আনা হয়৷ উদ্ধার করার পর তাঁদের দিল্লির বিভিন্ন হাসপাতল এবং কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে পাঠানো হয়েছে৷ পুলিশ জানিয়েছে, যা সন্দেহ করা হয়েছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ আটকে ছিলেন ওই বিল্ডিংয়ে৷ যা দেখে চোখ কপালে উঠেছে পুলিশ-প্রশাসনের৷