লখনউ: যোগীর প্রদেশ গণধর্ষণ, পরে নির্যাতিতার দেহ প্রশাসনের তরফে মধ্যরাতে জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনায় উত্তাল গোটা দেশ৷ নির্যাতিতার মৃত্যুর বিতর্কের মাঝে এবার মহিলাদের কাঠগড়ায় তুলে মুখ পুড়োলেন বিজেপির দুই বড় নেতা৷ ধর্ষণ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে বসলেন বালিয়ার বিজেপি বিজেপি বিধায়ক ও বারাণসীর বিজেপি নেতার৷ ধর্ষণের জন্য কার্যত মেয়েদের দিকে আঙুল তুলেছেন বিজেপি বিধায়ক সুরেন্দ্র সিং৷ ধর্ষণ রুখতে প্রশনের কিছুই করতে পারবে না৷ মেয়েদের সংস্কার শেখতে হবে পরিবারকে৷ মন্তব্য করেছে সুরেন্দ্র সিং৷ হাথরাসে নির্যাতিতার বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছেন আরও এক বিজেপি নেতা৷ রঞ্জিত বাহাদুর শ্রীবাস্তবের যুক্তি, বাগানে কেন গিয়েছিলেন হাথরাসে নির্যাতিতার? জনগণের টাকায় কেন নির্যাতিতাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে? বিজেপির দুই নেতার মন্তব্য ঘিরে নিন্দার ঝড় উঠেছে গোটা দেশে৷
বাংলায় ধর্ষণের মতো গুরুতর অভিযোগ উঠলে তা কখন কখন ‘ছোট ঘটনা’ বলে দেগে দেওয়া হয়৷ বিজেপির শাসিত উত্তরপ্রদেশেও যে কিছু কম যায় না, তা আবার প্রমাণ করলেন সুরেন্দ্র-রঞ্জিতের মতো গোরুয়া ধ্বজাধারী নেতারা৷ বালিয়ার বিজেপি বিজেপি বিধায়ক সুরেন্দ্র সিংয়ে দাবি, ধর্ষণ রুখতে গেলে প্রয়োজন মেয়েদের ছোট থেকে সুশিক্ষা দেওয়া৷ তাহলেই ধর্ষণ কমবে৷ বাবা-মা মেয়েদের যদি সংস্কার না শেখান, তাহলে প্রশাসন ধর্ষণ রুখতে পারবে না৷ এমনিতেই উত্তরপ্রদেশে বেড়ে চলা ধর্ষণের ঘটনায় বেকায়দায় যোগী আদিত্যনাথের সরকার৷ তার মধ্যেই এমন মন্তব্য আরও অস্বস্তি আরও বাড়ালেন বিজেপি বিধায়ক সুরেন্দ্র সিং৷ তাঁর মতে, ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে চলার সঙ্গে যোগীর শাসনব্যবস্থার কোনও যোগ নেই৷ বরং বাবা-মায়েরা মেয়েদের সংস্কার শেখালে তা কমতে পারে৷
‘রামরাজ্যে’ বাড়ছে ধর্ষণের ঘটনা৷ হাথরসকাণ্ড তার জ্বলন্ত প্রমাণ৷ গত কয়েক দিনে ধরে একাধিক ঘটনা সামনে এসেছে যোগীর প্রদেশে৷ কীভাবে এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব, বিজেপি বিধায়ক সুরেন্দ্রের কাছে তা জানতে চান এক সাংবাদিক৷ জবাবে বিজেপি বিধায়ক বলেন, ‘‘শুধু বিধায়ক নয়, আমি একজন শিক্ষক৷ আমি বলতে পারি, ধর্ষণের ঘটনা রুখতে হলে মেয়েদের সংস্কার শেখাতে হবে৷ সুশাসন ও ক্ষমতা প্রদর্শন করে ধর্ষণ রোখা যাবে না৷ ধর্ষণ ঠোকানো যেমন সরকারের ধর্ম, তেমনই পরিবারের উপরও এই দায় থাকে৷ সরকার তো নিরাপত্তা দেবে৷ কিন্তু মেয়েদের সংস্কার শেখাতে হবে৷ তাঁদের মনে নীতিবোধ তৈরি করা পরিবারেরই কর্তব্য৷ সংস্কার এবং সরকার, এই দুইয়ে মিলনে সুন্দর ভারত গড়ে উঠবে৷’’
অন্যদিকে হাথরসে নির্যাতিতা ধর্ষণ-খুন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপি নেতা রঞ্জিত বাহাদুর শ্রীবাস্তব৷ ঘাস কাটতে গিয়ে বাজরা ক্ষেতে কী করছিলেন নির্যাতিতা? অভিযুক্ত সঙ্গে সম্পর্ক ছিল নির্যাতিতার৷ প্রেমিকের সঙ্গে মারামারি জন্য মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে৷ এখনও পর্যন্ত ধর্ষণের প্রমাণ মেলেনি৷ তারপরও কেন ২৫ লক্ষ টাকা অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে? কেন জনগণের টাকায় নির্যাতিতার পরিবারকে বাড়ি বানিয়ে দেওয়া হবে? প্রশ্ন তুলেছেন উত্তরপ্রদেশের এই বিজেপি নেতার৷ রঞ্জিত বাহাদুর শ্রীবাস্তবের মন্তব্য, ‘‘বাজরার খেতে কোন ঘাস কাটতে গিয়েছল নির্যাতিতা? কেন মা-ভাইকে রেখে একা বাগানে গিয়েছিলেন তিনি? তিন বছর আগেই অভিযুক্তদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল নির্যাতিতার৷ হতে পারে সেই নিয়েই সমস্যা৷ সম্পর্ক নিয়ে মারামারি হয়ে থাকতে পারে৷ ধর্ষণের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি৷ আমি বলতে চাই, কী জন্য ২৫ লাখ টাকা দেওয়া হবে? কোন কারণে বাড়ি বানিয়ে দেওয়া হবে? কি জন্য তাঁদেরকে বাড়তি সুবিধা দেওয়া হবে জনতার করের টাকায়?’’
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, সদ্য বেড়ে ওঠা ২০ বছরের তরুণীকে গণধর্ষণ করে খুন, মধ্যরাতে প্রশাসনের তরফে দেহ জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনার পরেও এতটুকু বিবেক দংশন হচ্ছে না বিজেপি নেতাদের? নাকি উত্তর প্রদেশে ‘রামরাজ্য’ প্রতিষ্ঠা করতে অপরাধকেই ক্লিনচিট দেওয়ার চেষ্টা করছেন? ক্ষমতার অলিন্দে থেকে কি ন্যূনতম মানবিকতার হারিয়ে ফেলেছেন তাঁরা? তাঁদেরও তো পরিবার আছে৷ একই ঘটনা তাঁদের পরিবারে নেমে এলে কি একই মন্তব্য করতে পারতেন এই বিজেপি নেতারা? ধর্ষণের পর খুন, মৃত দেহ সৎকারের নামে প্রহশন, নির্যাতিতা মৃত্যুর পরও নিকৃষ্ট রাজনীতি করবেন গেরুয়া নেতারা? এরাই কি জনতার প্রতিনিধি? আসলে যাঁরা মেয়েদের সংস্কার শেখানোর পক্ষে সওয়াল করছেন, তাঁদের পেটে শিক্ষা-দিক্ষা আছে তো? না কি সেটাও প্রয়োজন হয় না গেরুয়া রাজনীতিতে৷ নিন্দার ঝড় উঠেছে গোটা দেশজুড়ে৷