ডিজিটাল মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করুক শীর্ষ আদালত, হলফনামা কেন্দ্রের

 

টিভি চ্যানেলগুলির জন্য নির্দেশিকা জারির আবেদন সম্পর্কিত একটি বিবৃতির প্রেক্ষিতে ওই হলফনামায় এদিন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রভাব ও প্রচারের নিরিখে প্রথমে ডিজিটাল মিডিয়ার ওপর নজর দেওয়া উচিত আদালতের। হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটার এবং ফেসবুকের মতো অ্যাপের দৌলতে যেকোনো খবর ডিজিটাল মিডিয়ায় দ্রুততার সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে এবং ভাইরাল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

নয়াদিল্লি: মিডিয়ায় মান নির্ধারণের ক্ষেত্রে শীর্ষ আদালতকে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার আগে ডিজিটাল মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, কারণ জনমানসে এর আরও বেশি প্রভাব পড়েছে এবং দ্রুত প্রচার হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। বৃহস্পতিবার এক হলফনামায় এমনটাই দাবি কেন্দ্রের৷

বেসরকারি চ্যানেল সুদর্শন টিভিতে প্রচারিত ‘বিন্দাস বোল’ অনুষ্ঠানে ‘ইউপিএসসি জিহাদ’ পর্ব প্রচারের বিরোধিতায় করা একটি মামলার প্রেক্ষিতে এদিন আদালতে এই হলফনামা পেশ করে কেন্দ্র। টিভি চ্যানেলগুলির জন্য নির্দেশিকা জারির আবেদন সম্পর্কিত একটি বিবৃতির প্রেক্ষিতে ওই হলফনামায় এদিন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রভাব ও প্রচারের নিরিখে প্রথমে ডিজিটাল মিডিয়ার ওপর নজর দেওয়া উচিত আদালতের। 

হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটার এবং ফেসবুকের মতো অ্যাপের দৌলতে যেকোনও খবর ডিজিটাল মিডিয়ায় দ্রুততার সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে এবং ভাইরাল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বলেই ওই হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে আরও বলা হয়েছে, ডিজিটাল মিডিয়া গুরুতর প্রভাব ফেলেছে এবং এই সম্ভাবনার কথা আদালতকে প্রথমে ডিজিটাল মিডিয়ার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে৷ সরকার আরও বলেছে, বৈদ্যুতিন মিডিয়া এবং প্রিন্ট মিডিয়াতে পর্যাপ্ত পরিকাঠামো এবং আইনি মতামত রয়েছে৷ বাকস্বাধীনতা এবং দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার ভারসাম্য রক্ষার বিষয় নিশ্চিত করা প্রয়োজন৷

শীর্ষ আদালত যদি মিডিয়াকে নিজের অধীনে পরিচালিত করতে চায়, তাহলে তা শুধু মূলধারার বৈদ্যুতিন মিডিয়াতেই সীমাবদ্ধ রাখার কোনও যৌক্তিকতা নেই৷ কেন্দ্রের মতে মিডিয়াতে মূলধারার বৈদ্যুতিন মিডিয়া, মূলধারার প্রিন্ট মিডিয়া পাশাপাশি একটি সমান্তরাল মিডিয়াও রয়েছে ডিজিটাল প্রিন্ট মিডিয়া, ডিজিটাল ওয়েব-ভিত্তিক নিউজপোর্টাল এবং ইউটিউব চ্যানেলগুলি যা একইভাবে ‘ওভার দ্য টপ প্ল্যাটফর্মে’র মধ্যে রয়েছে (ওটিটি)৷ হলফনামায় মিডিয়ার জন্য তৈরি নির্দেশিকাগুলির বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আদালতের পরামর্শদাতার সহায়তা নেওয়ার জন্য শীর্ষ আদালতকে অনুরোধ জানিয়েছে কেন্দ্র৷

কেন্দ্রের এই হলফনামা সেই মামলার প্রেক্ষিতে যেখানে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল সুদর্শন টিভিতে প্রচারিত একটি অনুষ্ঠানের বিরোধিতা করা হয়েছে। অভিযোগ ওই অনুষ্ঠানে এমনটাই দাবি করা হয়েছে, ‘‘মুসলিমরা সরকারি চাকরিতে অনুপ্রবেশ করছে৷’’ আদালত এই অনুষ্ঠানে স্থগিতাদেশ দিয়েছে৷ আদালত জানিয়েছে, এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মুসলিম সম্প্রদায়কে অবমাননা করা হয়েছে৷ গত মঙ্গলবার এই মামলার শুনানি পর্বে শীর্ষ আদালত জানায়, কেউ একটি সম্প্রদায়কে এভাবে টার্গেট করতে পারে না এবং একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে তাদের ব্র্যান্ড করতে পারে না৷

শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, টিভিতে টিআরপি এবং ‘অনুভূপ্রবণতার’ প্রতিযোগিতা চলছে৷ ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মানদণ্ড নির্ধারণে প্রস্তাব দেওয়ার জন্য একটি প্যানেল গঠন করা হবে৷ সাংবাদিকতায় স্বাধীনতা অবাধ নয়, তাই এই মান নির্ধারণে পাঁচজন বিশিষ্ট নাগরিকের প্যানেল তৈরি করা হবে। এক্ষেত্রে সুশান্ত সিং রাজপুত মৃত্যুর তদন্তের গুরুতর, অবাধ এবং  নীতিগুলিকে-চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নিয়মিত কয়েকটি চ্যানেলের করা খবরের বিষয়ে উদ্বেগের কারণগুলিকেও গুরুত্ব সহকারে দেখছে আদালত৷ এদিকে সুপ্রিম কোর্টের মতামত প্রসঙ্গে ভারতের প্রেস কাউন্সিলের দাবি জানিয়েছে, নিয়মবিধি নিজের জায়গায় রয়েছে৷ যদিও নিউজ ব্রডকাস্টার্স অ্যাসোসিয়েশন তার হলফনামায় বলেছে, কোনও চ্যানেল যদি নিয়ম লঙ্ঘন করে এবং তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হয় তবে তাকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা উচিত৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × two =