কলকাতা: আজকের যুব-ছাত্র সমাজের হাতেই ন্যাস্ত আগামীদিনের ভবিষ্যৎ৷ দেশ যখন এক সংকটের মধ্যে দিয়ে চলেছে, তখন দেশের স্বার্থে এগিয়ে এসেছে ছাত্র সমাজ৷ করোনাভাইরাস মোকাবিলায় একদিকে যখন প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা করছেন চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীরা, তখন চিকিৎসা ও জরুরি পরিষেবায় নিজেদের অবদান রেখে দেশবাসীর পাশে দাঁড়িয়েছেন এই পড়ুয়ারা৷ এই বিষয়ে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছে আইআইটি-র ছাত্রছাত্রীরা৷
আইআইটি গুয়াহাটির কেমিস্ট্রি এবং বায়োসায়েন্স অ্যান্ড বায়ো-ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের পড়ুয়ারা তৈরি করেছেন অ্যান্টি-ভাইরাল কোটিং সহ ওয়াটারপ্রুফ প্রোটেকটিভ গিয়ার৷ এছাড়াও আইআইটি গুয়াহাটির ডিজাইনার বিশেষজ্ঞরা সম্পূর্ণ মুখ ঢাকার জন্য তৈরি করেছেন ‘থ্রিডি প্রিন্টেড প্রোটোটাইপ’ আবরণ৷ এখানেই শেষ নয়, এখানকার পড়ুয়ারা বানিয়ে ফেলেছেন ১০ থেকে ১৫ লিটার ওজন বহনে সক্ষম ড্রোন৷ অদূর ভবিষ্যতে ৫০ লিটার ওজন তুলতে সক্ষম ড্রোন তৈরি করার পরিকল্পনাও রয়েছে তাঁদের৷ তাঁদের লক্ষ্য, এই ড্রোনের সাহায্যে ওষুধপত্র বা অন্য কোনও চিকিৎসা সামগ্রী যাতে সহজেই গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দেওয়া যায়৷
কোভিড-১৯ টেস্ট কিট নিয়ে দেশজুড়ে বিস্তর জলঘোলা হয়েছে৷ চিনা কিটের ত্রুটি নিয়ে শুরু হয়েছে কেন্দ্র-রাজ্য চাপানউতোর৷ রয়েছে টেস্টিং কিটের অভাব৷ এই অবস্থায় সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে কম খরচে কোভিড-১৯ টেস্টিং কিট তৈরি করেছে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি দিল্লি (আইআইটি-ডি)৷ এই টেস্ট কিটে অনুমোদন দিয়েছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)৷ তারা আইআইটি-দিল্লির গবেষণায় ১০০ শতাংশ সন্তুষ্ট হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। পুণের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজিতে চলছে ট্রায়াল৷
অন্যদিকে, আইআইটি দিল্লি এবং আইআইটি রুরকির ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের উদ্যোগে অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করার পাশাপাশি তা বিলি করার কাজও শুরু করে দিয়েছে৷ জানা গিয়েছে, প্রায় ১৫০ লিটার প্রাকৃতিক স্যানিটাইজার তৈরি করে তা নিজেদের ক্যাম্পাস থেকে বিতরণ করেছে আইআইটি রুরকি৷ মুম্বইয়ের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি ক্যাম্পাসে কোভিড-১৯ টেস্ট ল্যাব বানানো হয়েছে ইতিমধ্যেই। সংক্রামিত রোগীদের নমুনা পরীক্ষা ছাড়াও প্রয়োজনে কলেজ ক্যাম্পাসে আইসোলেশন ওয়ার্ডের ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানানো হয়েছে৷ দেশের অন্যতম বড় ড্রাগ নির্মাতা সংস্থা সিপলার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কম খরচে ভেন্টিলেটর বানানোর কাজও চলছে মুম্বই আইআইটিতে৷
পাশাপাশি আইআইটি মুম্বইয়ের ছাত্রছাত্রী ও প্রাক্তনীরা মিলে ‘করোনাইন’ নামে একটি বিশেষ অ্যাপ তৈরি করেছেন৷ যার মাধ্যমে মানুষকে জিও-ফেন্সিং, কোয়ারান্টিন অ্যালার্ট সিস্টেম, সংক্রমণ সংক্রান্ত সতর্কতা দেওয়া হবে৷ করোনা বিরোধী লড়াইয়ে এগিয়ে আসার জন্য দেশের ছাত্র-যুব সমাজকে আহ্বান জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ তাঁদের মূল্যবান পরামর্শ ও মতামত জানতে চেয়েছিলেন তিনি৷ এর পরই প্রধানমন্ত্রীর দফতরের ওয়েবসাইটে উপচে পড়ে মতামতের ভিড়৷ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ভাণ্ডারে সঞ্চিত অর্থ জনসেবায় ব্যবহারের পাশাপাশি আয়ুর্বেদিক দ্রব্যের ব্যবহার, অনলাইন ডেলিভারি সিস্টেম কিংবা ভ্রাম্যমান চিকিৎসা ব্যবস্থা, একাধিক অভিনব পরামর্শ এসেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে৷