নয়াদিল্লি: দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে লিঙ্গ বৈষমের অভিযোগ তুলে মাস তিনেক আগে সংবাদ শিরোনামে এসেছিলেন তিনি৷ গোটা দেশ পরিচিত হয়েছিল এক আইপিএস অফিসারের সঙ্গে৷ যিনি অসমে একা ১৬ জন জঙ্গিকে খতম করেছিলেন৷ গ্রেফতার করেছিলেন ৬৪ জন বোরো জঙ্গিকে৷ তিনি আর কেউ নন, মহিলা আইপিএস অফিসার সংযুক্তা প্রসার৷
আরও পড়ুন- দৈনিক সংক্রমণ হ্রাস পেল অনেকটাই, তবে টিকাকরণ পরিসংখ্যান চিন্তার
দিল্লির রাস্তায় সাদা পোশাকে থাকা সংযুক্তার গাড়ি থামিয়ে তাঁকে জেরা করেছিল দিল্লি পুলিশ৷ তাঁরা ভাবতে পারেননি একজন মহিলা আইপিএস অফিসার চাকরি সূত্রে পাওয়া গাড়ি নিজে চালাবেন৷ এমনকী পরিচয় দেওয়ার পরেও তাঁকে বিশ্বাস করতে পারেনি দিল্লি পুলিশ৷ আর দিল্লি পুলিশের এই আচরণে অসন্তষ্ট হয়েই লিঙ্গ বৈষম্যের অভিযোগ এনেছিলেন সংযুক্তা৷ তিনি বলেছিলেন, দিল্লি পুলিশের লিঙ্গ বৈষম্য নিয়ে যে মানসিকতা তৈরি হয়েছে, তা বদল হওয়া দরকার৷ কারণ ওঁদের বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় আইপিএস কর্তার গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে বসা আমার মতো একজন মহিলা আইপিএস অফিসার হতে পারেন৷ দিল্লি পুলিশের ‘দিল কি পুলিশ’ ট্যাগ লাইন নিয়েও কটাক্ষ করেছিলেন তিনি৷ সেই সময় সংযুক্তার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন গোটা দেশের তামাম বিদ্বজ্জনেরা৷ অদম্য সাহস বুকে নিয়ে এ ভাবেই এগিয়ে চলেছেন সংযুক্তা৷
ছোটবেলায় পড়াশোনাতেও মেধাবী ছিলেন সংযুক্তা প্রসার৷ ইউপিএসসি-তে তাঁর ব়্যাঙ্ক ছিল ৮৫৷ জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিলও করেছেন৷ চাইলে আরামের পথ বেছে নিতে পারতেন তিনি৷ কিন্তু সংযুক্তা বেছে নেন কঠিন চ্যালেঞ্জকে৷ ২০০৮ সালে অসমের মাকুমে প্রথম পোস্টিং হয় তাঁর৷ এর পর বোড়ো জঙ্গিদের সঙ্গে বাংলাদেশি শরনার্থীদের সংঘর্ষে উত্তপ্ত উদলগিড়িতে অ্যাসিন্ট্যান্ট কমান্ডান্ট হয়ে যান তিনি৷ কড়া হাতে সেখানকার পরিস্থিতি সামলান ৷ প্রতিদিন একে ৪৭ রাইফেল হাতে নিয়ে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতেন ডাকাবুকো এই মেয়েটা৷ নেতৃত্ব দিতেন সিআরপিএফ জওয়ানদের৷ জঙ্গল থেকে বহু অস্ত্র উদ্ধার করেছিলেন তিনি৷ ধরেছিলেন ৬৪ জন জঙ্গিকে৷ নিজেই মেরেছিলেন ১৬ জন জঙ্গিকে৷ তার ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালাতে শুরু করেছিল বোড়ো জঙ্গিরা৷
আরও পড়ুন- ‘অলিম্পিক্সের প্রতিটি ইভেন্টেও আত্মনির্ভরতার ছাপ’, ভর্চুয়াল বৈঠকে বললেন মোদী
অসমের কাছে সংযুক্তা ঘরের মেয়ে৷ তবে তিনি পরিচিত ‘লৌহ কন্যা’ হিসাবেই৷ সংযুক্তার নেতৃত্বেই ধরা পড়েছিল অসম সেনার কনভয়ে হামলাকারী জঙ্গিরা৷ তিনিই স্কুল-কলেজের সামনে সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছিলেন মহিলা পুলিশদের৷ এতে কাডও হয়েছিল৷ বহু অপরাধীকে হাতেনাতে ধরা গিয়েছিল৷
সংযুক্তার বয়স এখন ৪১৷ আপাতত তিনি দিল্লিতে পোস্টিং৷ ৯ বছরের একটি পুত্র সন্তান আছে তাঁর৷ তাঁর স্বামীও একজন আইপিএস অফিসার৷ নাম সন্দীপ কক্কর৷ অবসরে তাঁর সময় কাটানোর সঙ্গে একমাত্র ছেলে৷ ভালোবাসেন সাঁতার কাটতে৷ সুযোগ পেলে দৌড়েও নেন এই আইপিএস৷