স্বাধীন ভারতে প্রথম উপাচার্য পদে বসলেন আদিবাসী কন্যা

স্বাধীন ভারতে প্রথম উপাচার্য পদে বসলেন আদিবাসী কন্যা

রাঁচি:  ইতিহাসকে সাক্ষী রেখে ঝাড়খণ্ডের সিধো কানু মুর্মু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে নিযুক্ত হলেন জেএনইউ-র অধ্যাপিকা সোনাঝরিয়া মিনজ। সেইসঙ্গে স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে এই প্রথম উপাচার্য পদে দায়িত্ব গ্রহণ করলেন কোনও আদিবাসী মহিলা৷ 

দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ কম্পিউটার এবং সিস্টেমস সায়েন্সের অধ্যাপিকা ছিলেন সোনঝরিয়া মিনজ৷ তাঁকে ঝাড়খণ্ডের সিধো কানু মুর্মু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্জ পদে নিয়োগ করেন রাজ্যপাল দ্রৌপদী মুর্মু৷ তিনি নিজেও আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ৷ সোনাঝরিয়া মিনজের এই কৃতিত্বে খুশি গোটা রাজ্য। বৃহস্পতিবার দিল্লি থেকে ঝাড়খণ্ড পৌঁছন মিনজ। দায়িত্ব নেন উপাচার্য পদে।

জানা গিয়েছে, রাঁচির স্কুলেই পড়াশোনা শুরু মিনজের৷ স্কুলে ভালো রেজাল্ট করার পর চেন্নাই পাড়ি দেন তিনি। সেখানে মাদ্রাজ খ্রিস্টান কলেজে স্নাতক পর্ব শেষ করার পর গণিত নিয়ে ওই কলেজ থেকেই এমএসসি পাশ করেন মিনজ। এর পর কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে এমফিল ও পিএইচডি করেন নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে৷ তার পরে সেখানেই কয়েক বছর অধ্যাপনা করেন তিনি। কিন্তু এই দীর্ঘ পথ পেরনো সহজ ছিল না৷ স্কুলে পড়ার সময় শিক্ষকদের কাছে বহু বার তাঁকে শুনতে হয়েছে, “তোমার দ্বারা কিছু হবে না।”

মিনজ ছাত্রী হিসাবে খারাপ ছিলেন, তা কিন্তু নয়৷ তবে আদিবাসী সম্প্রদায়ের সদস্য হওয়ায় অনেকেই বাঁকা চোখে দেখতেন তাঁকে৷ ইংরেজি ভাষার প্রতি অনর্গল দক্ষতার অভাবেও অনেক বার বিরূপ মন্তব্য শুনতে হয়েছে মিনজকে৷ কিন্তু হার মানেননি তিনি৷ মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, পড়াশোনা করে তিনি সকলকে দেখিয়ে দেবেন৷ বুঝিয়ে দেবেন তাঁরাও পারেন। অনর্গল ইংরেজিতে কথা বলতে পারাটা, শুধুমাত্র অভ্যাসজাত দক্ষতা৷ এর চেয়ে বেশি কিছু নয়। এই হার না মানা মনোভাব এবং মেধার জোরে ভালো রেজাল্ট করেন মিনজ৷ প্রমাণ করেন নিজেকে৷ 

আজ আদিবাসী সমাজের মহিলারা কোনও অংশে পিছিয়ে নেই৷ প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজেদের প্রমাণ করেছেন তাঁরা৷ খেলাধুলোর দুনিয়ায় কান পাতলেই শোনা যায় বহু আদিবাসী মহিলার নাম৷ রেডিও জকি হিসেবে আজ বাংলার শিখা মান্ডিকে কে না চেনে। আবার বিমান ওড়াচ্ছেন ওডিশার লক্ষ্মীপ্রিয়া। ঝাড়খণ্ডে রাজ্যপালের পদ সামলাচ্ছেন খোদ দ্রৌপদী মুর্মু। সাফল্যের এই তালিকায় জুড়ল আরও একটি নাম৷ সোনাঝরিয়া মিনজ৷ সোনাঝরিয়া মিনজের বাবা লুথেরান বিশপ এমেরিটাস নির্মল মিনজ ছিলেন আদিবাসী সমাজের ভাষাশিক্ষক। তিনি রাঁচির গসনার কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ওঁরাওঁ উপজাতির কুদুখ সম্প্রদায়ের ভাষার উন্নয়নে তাঁর অবদানের জন্য ২০১৬ সালে ভাষা সম্মানেও সম্মানিত করা হয়েছিল তাঁকে৷ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *