‘স্পর্শ’ বাধ্যতামূলক নয়,যৌন অভিপ্রায়ই মূল বিষয়’, বম্বে হাইকোর্টের রায় খারিজ সুপ্রিম কোর্টে

‘স্পর্শ’ বাধ্যতামূলক নয়,যৌন অভিপ্রায়ই মূল বিষয়’, বম্বে হাইকোর্টের রায় খারিজ সুপ্রিম কোর্টে

নয়াদিল্লি:  বম্বে হাইকোর্টের রায়কে নস্যাৎ করে পসকো আইন নিয়ে বড় রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট৷ বলা হয়েছিল পকসো আইনের অধীনে যৌন নিপীড়নের ক্ষেত্রে “Skin-to-skin” সম্পর্ক আবশ্যক। অর্থাৎ স্পর্শ করতে হবে। কিন্তু এদিন সুপ্রিম কোর্ট জানায়, যৌন হেনস্থা বিবেচনা করার ক্ষেত্রে শারীরিক স্পর্শই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হল কোনও ব্যক্তির অভিপ্রায়। সুপ্রিম কোর্টের এই রায় অপরাধীদের আরও বেশি চাপে রাখবে বলেই মত আইন বিশেষজ্ঞদের৷ 

আরও পড়ুন- তিন তলা থেকে ধাক্কা দিয়েছিল স্বামী, ১৫ বছর শয্যাশয়ী থাকা পুনমই এখন ৩ হাজার মেয়ের অনুপ্রেরণা

পকসো আইন নিয়ে গত ১৯ জানুয়ারি একটি রায় দিয়েছিল বম্বে হাইকোর্টের নাগপুর বেঞ্চ৷ বম্বে হাইকোর্টের রায় ছিল শারীরিক স্পর্শ ছাড়া কোনও নাবালিকার বুকে স্পর্শ করা হলে পকসো আইনের আওতায় তা যৌন নির্যাতন হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না। বিচারপতি পুষ্প গানেদিওয়ালের পর্যবেক্ষণ ছিল, ‘যৌন অভিপ্রায় নিয়ে সরাসরি শরীরে স্পর্শ’ করা হলে তবেই সেটা যৌন নির্যাতন হিসেবে বিবেচিত হবে৷ যৌন অভিপ্রায় ছাড়া শারীর স্পর্শ করা হলে সেটি পকসো আইনের আওতায় পড়বে না৷ এই যুক্তিতেই অভিযুক্ত ব্যক্তির বিচার করেছিল বম্বে হাইকোর্ট। ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে নাবালিকার বুকে চাপ দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছিল৷ বম্বে হাইকোর্টের সেই রায় খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট।

পকসো আইন নিয়ে বম্বে হাইকোর্টের এই রায় ঘিরে তুমুল বিতর্ক হয়েছিল। নাগপুর বেঞ্চের বিতর্কিত রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দাখিল করেন ভারতের অ্যাটর্নি জেনারেল। তাঁর আবেদনের ভিত্তিতে গত ২৭ জানুয়ারি স্থগিতাদেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। অগস্ট মাসে এই মামলার শুনানির সময় অ্যাটর্নি জেনারেল কেকে বেণুগোপাল আদালতকে জানান, যৌন হেনস্থার ক্ষেত্রে ত্বকের সঙ্গে ত্বকের স্পর্শের যে মানদণ্ডের রাখা হয়েছে, তার ফলে সমাজের উপর ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়বে। এই রায়ের ভিত্তিতে যদি কোনও ব্যক্তি সার্জিকাল গ্লাভস পরে কোনও মেয়ের ত্বক স্পর্শ করে, তাহলে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না। পকসো আইনের আওতায় ন্যূনতম শাস্তিও হবে না তার৷ 

বৃহস্পতিবার বিচারপতি ইউইউ ললিতের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ এই মামলায় রায় ঘোষণা করে বলেছে, ‘যৌন অভিপ্রায় নিয়ে কোনও শিশুর গোপনাঙ্গ স্পর্শ করা হলে তা কোনও ভাবেই পকসো আইনের সাত নম্বর ধারার আওতার বাইরে রাখা সম্ভব নয়৷ কোনও অপরাধীকে পালানোর সুযোগ করে দেওয়াটা আইনের উদ্দেশ্য নয়৷ এর পরেই বম্বে হাইকোর্টের রায় খারিজ করে দেওয়া হয়৷ এই মামলায় অপরাধীকে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং এক মাসের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ অপর অপরাধীকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। জরিমানা না দিলে আরও ছ’মাসের সশ্রম কারাদণ্ডের হবে৷ 

বম্বে হাইকোর্ট বলেছিল, ওই ব্যক্তি পোশাকের উপর দিয়েও নাবালিকার বুকে চাপ দিয়েছিল৷ তাই এটি যৌন নির্যাতন বলে বিবেচিত হবে না৷ বরং ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪ ধারা অনুযায়ী ওই ব্যক্তি শাস্তি পাবে৷ সেই মতো তাকে ১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫০০ টাকা জরিমানা করে হয়৷  
 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × 5 =