ভারতের মানচিত্রে বাংলার অস্তিত্ব শ্যামাপ্রসাদেরই অবদান: জেপি নাড্ডা

ভারতের মানচিত্রে বাংলার অস্তিত্ব শ্যামাপ্রসাদেরই অবদান: জেপি নাড্ডা

নয়াদিল্লি: শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিবসে ভার্চুয়াল সমাবেশ করলেন বিজেপি’র সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা৷ বাংলার মাটি থেকে উঠে কী ভাবে জাতীয় ঐক্যের জন্য লড়েছিলেন তিনি, কী ভাবে জনসংঘ গঠন করেছিলেন, কী ভাবে নেহরুর বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিলেন, সেই ইতিহাস তুলে ধরেন নাড্ডা৷   

তিনি বলেন, আজ ভারতীয় মানচিত্রে বাংলার যে অবস্থান রয়েছে তা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়েরই অবদান৷ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় একজন রাষ্ট্রভক্ত, দেশভক্ত, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ এবং সাংসদ ছিলেন৷ খণ্ডিত ভারতের অখণ্ডতার জন্য লড়াই করা প্রথম নেতা হিসাবে আত্মবলিদান দিয়েছিলেন তিনি৷ নাড্ডা বলেন, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বলতেন, পাকিস্তান যদি ভারতকে ভাগ করে তাহলে, আমি সেই ব্যক্তি যিনি পাকিস্তানকে ভাগ করেছি৷ 

১৯০১ সালের ৬ জুলাই অবিভক্ত বাংলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়৷ মাত্র ৩৩ বছর বয়সে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর হন তিনি৷ ১৯৩৭ সালে ভাইস চ্যান্সেলর হিসাবে তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভোকেশনে৷ এবং প্রথম বাংলায় বক্তব্য রাখার আর্জি জানিয়েছিলেন৷ ভারতের ইতিহাসে প্রথম শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগেই কোনও ভারতীয় ভাষায় কনভোকেশন হয়৷   

১৯৪১ সালে ফজলুল হক মন্ত্রীসভায় অবিভক্ত বাংলার অর্থমন্ত্রী রূপে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন শ্যামাপ্রসাদ৷ কিন্তু ১৯৪২ সালের ২০ নভেম্বর তিনি ইস্তফা দিয়ে দেন৷ কারণ, উনি কোনও দিনও পদের উপর গুরুত্ব দেননি৷ উনি সর্বদা চিন্তাধারা এবং বিচারবোধের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন৷ কাউকে তোয়াজ করে চলেননি৷ 

সেই সময় মুসলিম লিগ যে ভাবে আওয়াজ তুলছিল, তাতে সমগ্র বাংলাকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা চলছিল৷ উনি এটা বুঝে গিয়েছিলেন৷ উনি ইস্তফা দিয়ে দেন৷ তাবেদারির রাজনীতির বিরুদ্ধে মুখ খোলেন৷ উনি শুধু বাংলাকেই বাঁচাননি৷ আজ ভারতের মানচিত্রে যে বাংলা রয়েছে, তা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়েরই অবদান৷ পঞ্জাবকে বাঁচানোর জন্য তিনি যে আওয়াজ তুলেছিলেন, তা আমরা কোনও দিনও ভুলব না৷  এর পর উনি সাভারকরজির সংস্পর্শে আসেন এবং হিন্দু মহাসভার সঙ্গে যুক্ত হন৷ হিন্দু মহাসভার অধ্যক্ষও ছিলেন তিনি৷ হিন্দু মহাসভার অধ্যক্ষ হওয়ার পর তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিলেন গান্ধীজিও৷ ১৯৪৩ সালে বাংলার যখন দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল, তখন সর্বস্ব দিয়ে লড়াই করেছিলেন শ্যামাপ্রসাদ৷ 

গান্ধীজির আহ্বানে নেহরুর ক্যাবিনেটে অ-কংগ্রেসি মন্ত্রী ছিলেন তিনি৷ ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট নেহেরুর মন্ত্রিসভায় শ্যামাপ্রাসাদ মুখোপাধ্যায় শিল্পমন্ত্রী রূপে শপথ গ্রহণ করেন। ভারতের শিল্পমন্ত্রী থাকাকালীন শিল্প উন্নয়ন নিগম, প্রথম শিল্পনীতি প্রণয়ন, চিত্তরঞ্জন লোকমটিভ স্থাপন, সিন্ধ্রি সার কারখানা-সহ বহু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তিনি৷ খড়গপুরে ভারতের প্রথম ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স স্থাপনা, কলকাতার প্রথম ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সোশাল ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট স্থাপনার ভাবনা তাঁরই মস্তিষ্ক প্রসূত।

১৯৫০ সালে পূর্ববঙ্গে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার বেড়ে চলে। হত্যা, লুন্ঠন, নারীর সম্ভ্রমহানি নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়। এর প্রতিবাদে ১৪ এপ্রিল, ১৯৫০ সালে নেহেরু মন্ত্রিসভার মন্ত্রী হয়েও সংখ্যালঘু নিরাপত্তা (পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দু সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা) ও নেহেরু-লিয়াকত চুক্তির প্রতিবাদে লোকসভায় প্রতিবাদে গর্জে  ওঠেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়৷ অবশেষে নেহেরু মন্ত্রিসভা থেকে তিনি পদত্যাগ করেন।  এর ফলে নেহরু সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে যে সংরক্ষণ দিতে চেয়েছিলেন তা আর করতে পারেননি৷ 

১৯৫১ সালের অক্টোবরে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের দ্বিতীয় সরসঙ্ঘচালক গুরুজী গোলওয়ালকারের সঙ্গে পরামর্শ ক্রমে নতুন রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনসংঘের প্রতিষ্ঠা করেন। এখান থেকেই এগোতে এগোতে আজ ভারতীয় জনতা পার্টি আজ সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বলে মন্তব্য করেন নাড্ডা৷ কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা চালু রাখলে অদূর ভবিষ্যতে সমস্যা বাড়তে পারে তা তিনি বারবার লোকসভার ভিতরে ও বাইরে ব্যক্ত করেছিলেন।  ভারতের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে সংবিধানের বিশেষ অনুচ্ছেদ ৩৭০ ধারা বিলোপ ও পারমিটরাজ বাতিলের দাবিতে ডা. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় কাশ্মীর অভিযান করেন। জম্মু-কাশ্মীরে তেরঙ্গা উড়ানোর প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি৷ কিন্তু তাঁকে রোখার ষড়যন্ত্র শুরু করে কংগ্রেস৷ 

১৯৫৩ সালের ১১ মে পাঞ্জাবের উধমপুরে শেষ সভা করে কাশ্মীরে প্রবেশের পথে গ্রেফতারি বরণ করেন। শ্রীনগরের জেলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি৷ নাড্ডা বলেন, আজ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জন্মভূমিতে যে ভাবে রাজনৈতিক হিংসা ছড়াচ্ছে, অপরাধ বাড়ছে, কাটমানি সংস্কৃতি গড়ে উঠছে তা বন্ধ করতে হবে৷ শিক্ষার দিক থেকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে বাংলাকে৷ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fourteen − 12 =