নাসিক: নর্মদার বুক চিড়ে বয়ে চলা কোনও দুর্বল চিত্তের কাজ নয়৷ এর জন্য লাগে বুকের পাটা৷ তবে ছোট থেকেই জল দেখে অভ্যস্ত বছর ২৭ এর অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী রেলু ভাসাভে৷ তাঁর বাড়ির পাশ দিয়েই বয়ে গিয়েছে নর্মদা৷ এই নদী পথেই নৌকা ভাসিয়ে তাঁর অঙ্গনওয়ারিতে আসত একদল আদবাসি মানুষ৷ খাবার তো বটেই সঙ্গে মিলত চিকিৎসা৷ কিন্তু করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর বন্ধ হয়ে যায় তাঁদের আসা৷ তখন রেলু ঠিক করেন তিনিই পৌঁছে যাবেন এই দরিদ্র মানুষগুলির কাছে৷
আরও পড়ুন- ইনিও জনপ্রতিনিধি, চারবারের বিধায়ক হয়েও নেই পাকা বাড়ি, দামি গাড়ি
সড়ক পথের অবস্থা বেহাল৷ আদিবাসীদের এই ছোট্ট গ্রামে পৌঁছনোর একমাত্র উপায় নদী পথ৷ যাওয়া আসা নিয়ে প্রায় ১৮ কিলোমিটার পথ৷ তবে কোনও কিছুই রুখতে পারেনি রেলুকে৷ অসহায় মানুষগুলোর কাছে পৌঁছতে স্থানীয় এক মৎস্যজীবীর কাছ থেকে ছোট্ট একটি নৌকা ভাড়া করেন তিনি৷ এই নৌকার হাল টেনেই তিনি পৌঁছে যান আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রাম আলিগাট এবং দাদারে৷ ২৫টি সদ্যজাত ও অপুষ্টিতে ভোগা শিশু আর সাতজন গর্ভবতী মহিলার কাছে পৌঁছে দেন খাবার-ওষুধপত্র৷ গত এপ্রিল মাস থেকে সপ্তাহে পাঁচদিন করে সেখানে যান রেলু৷ তিনি যে অঙ্গনওয়াড়িতে কাজ করেন সেটি মহারাষ্ট্রের নন্দুরবার জেলার আদিবাসী গ্রাম চিমালখাদিতে অবস্থিত৷ সদ্যোজাত থেকে ছয় বছরের কম বয়সী শিশুদের স্বাস্থ্য, তাদের বৃদ্ধি দেখাই রেলুর কাজ৷ পাশাপাশি গর্ভবতী মহিলাদের দেখাশোনা করাও তাঁর দায়িত্ব৷
আরও পড়ুন- নিয়ন্ত্রণরেখায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন, পাকিস্তানকে সমন পাঠাল ভারত
গত মার্চ মাসে সারা দেশজুড়ে লকডাউন জারি হওয়ার পর নর্মদার ব্যাকওয়াটারে পাশে থাকা এই দুটি ছোট্ট গ্রাম থেকে আদিবাসী মানুষদের আসা বন্ধ হয়ে যায়৷ রেলু বলেন, ‘‘সাধারণত শিশু ও গর্ভবতী মহিলারাই তাঁদের পরিবারের সঙ্গে এই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে খাবার সংগ্রহ করতে আসতেন৷ কিন্তু ভাইরাসের ভয়ে তাঁরা আসা বন্ধ করে দেয়৷’’ নিজের দুটি ছোট সন্তান রয়েছে রেলুর৷ তবে নিজের কর্তব্য থেকে সড়ে আসেননি তিনি৷ ভোর হতেই শুরু হয় রেলুর কর্মযজ্ঞ৷ সকালে সাড়ে সাতটার মধ্যে অঙ্গবওয়াড়ি কেন্দ্রে পৌঁছে যান তিনি৷ এক ঘণ্টা পর নৌকা নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন আদিবাসী গ্রামের পথে৷ ফিরতে সন্ধ্যা গড়িয়ে যায়৷ অধিকাংশ সময় তিনি একাই খাবার নিয়ে যান৷ কোনও কোনও সময় তাঁর সঙ্গী হন সঙ্গীতা৷ তিনি রেলুর আত্মীয়৷ সঙ্গীতা নিজেও একজন অঙ্গনওয়াড়ির কর্মী৷ নৌকা নিয়ে ঘাটে পৌঁছনোর পর পার্বত্য ভূমি পেরিয়ে উঠতে হয় তাঁকে৷ সেখানেই রয়েছে তাঁদের গ্রাম৷ রেলু বলেন, ‘‘প্রতিদিন বোট নিয়ে যাওয়া সহজ কথা নয়৷ অনেক সময় হাত যন্ত্রনায় ছিড়ে যায়৷ কিন্তু আমি সে সব নিয়ে উদ্বিগ্ন নই৷ শিশু আর বহু মায়েরা যাতে পুষ্টিকর খাবর পায়, সেটাই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ৷’’