দেশের ৫৫% স্কুলে মেলে না হাত ধোওয়ার জলও, বলছে ক্যাগ রিপোর্ট

.

নয়াদিল্লি: স্বচ্ছ ভারত মিশনে যেখানে একের পর এক জোরদার পদক্ষেপ গ্রহণ করছে মোদী সরকার, সেখানে দেশের  স্বচ্ছ বিদ্যালয় অভিযানের চিত্রটা একেবারেই বিপরীত, বলছে ক্যাগ (কম্পট্রোলার এন্ড অডিটর জেনারেল)-এর রিপোর্ট। দেশের ১৫টি রাজ্যের ১,৯৬৭টি সরকারি স্কুল পরিদর্শন করে এই রিপোর্ট তৈরি করেছেন ক্যাগের সমীক্ষকরা। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, স্কুলগুলির অর্ধেকেরও বেশি শৌচাগারে ন্যূন্যতম জলের ব্যবস্থাটুকুও নেই। 

২০০৯-এর শিক্ষার অধিকার আইনের আওতায় কো-এডুকেশন স্কুলগুলিতে ছেলে ও মেয়েদের আলাদা শৌচাগার তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়৷ ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে তৎকালীন মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক (বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রক)এর উদ্যোগে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল। শৌচাগার তৈরির জন্য তখন সেন্ট্রাল পাবলিক সেক্টর এন্টারপ্রাইজ (সিপিএসই) এর সাহায্য নেওয়া হয়েছিল৷ অথচ এখনও পর্যন্ত বেশিরভাগ কো-এডুকেশন স্কুলেই ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদা শৌচাগার নেই৷

দেশে ১০.৮ লক্ষ সরকারি স্কুল রয়েছে। সেখানে স্বচ্ছ বিদ্যালয় অভিযানের অংশ হিসাবে কেন্দ্রের অধীনে সিপিএসই তালিকাভুক্ত মোট ৫৩টি সংস্থার তৈরি সবমিলিয়ে প্রায় ১,৪০,৯৯৭টি শৌচাগার রয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ, কয়লা ও তেল সংস্থাগুলির সহায়তা ছিল উল্লেখযোগ্য।  সাতটি সিপিএসই-এনটিপিসি, এনএইচপিসি পিজিসিআইএল, পিএফসি, আরইসি, ওএনজিসি এবং সিআইএল- ২,১৬২.৬০ কোটি টাকা খরচ করে ১,৩০,৭০৩ টি শৌচাগার তৈরি করে.১,৩০,৭০৩ টি শৌচাগার তৈরি করে।

সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ৮৩টি শৌচাগার তৈরিই করা হয়নি৷ তারমধ্যে ৮৬টি শৌচাগার তৈরির কাজ অসম্পূর্ণ থেকে গিয়েছে৷ ক্যাগের পর্যবেক্ষণে অন্তর্ভুক্ত ১১ শতাংশ শৌচাগারই অস্তিত্বহীন এবং অসম্পূর্ণ। এছাড়াও ২,৬১২টি শৌচাগারের মধ্যে ২০০টি তালিকাভুক্ত নির্দিষ্ট স্কুলগুলিতেই তৈরি করা হয়নি৷ রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ১,৯৬৭টি কো-এড স্কুলের মধ্যে ৯৯টি স্কুলে ব্যবহার করা হয় এমন শৌচাগার নেই। ৫৩৫টি  অর্থাৎ ২৭ শতাংশ স্কুলে ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদা শৌচাগার তৈরিই হয়নি।

রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ৪৩৬টি স্কুলে মাত্র একটি করে শৌচাগার রয়েছে। সমীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত ২,৩২৬ শৌচাগারের মধ্যে ৬৯১টি অর্থাৎ, ৩০ শতাংশ শৌচাগার যথাযথ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয় না বা ব্যবহারের অযোগ্য। কারণ সেখানে না আছে জলের ব্যবস্থা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও রক্ষণাবেক্ষণ৷

এর মধ্যে ১,৬৭৯টি অর্থাৎ ৭২ শতাংশ শৌচাগারে কোনো জলের ব্যবস্থা নেই। ১২৭৯টি অর্থাৎ ৫৫ শতাংশ শৌচাগারে নেই হাত ধোওয়ার মতো জলের ব্যবস্থাও। সেই সঙ্গে রয়েছে নির্মাণে ত্রুটি, সিঁড়ি নেই, ভগ্নদশা৷ সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে, মোট ২,৩২৬টি নির্মিত শৌচাগারের  মধ্যে ১,৮১২টি তেই যথার্থ রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচ্ছন্নতার অভাব রয়েছে। ১,৮১২টি  শৌচাগারের মধ্যে ৭১৫টি নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না৷ ১,০৯৭টি শৌচাগার সপ্তাহে দু’বার বা মাসে একবার পরিষ্কার করা হয়। অর্থাৎ সিপিএসই নির্মিত ৭৫ শতাংশ শৌচাগারে যথাযথ পরিচ্ছন্নতার অভাব রয়েছে। সাবান,বালতি ছাড়াও শৌচাগার পরিষ্কারের প্রয়োজনীয় জীবাণু নাশক বা অন্যান্য সরঞ্জামও নেই সেখানে।

যদিও মোট নির্মিত শৌচাগারের মধ্যে মাত্র ২ শতাংশই সমীক্ষার অন্তর্ভুক্ত। তাই বাকি ৯৮ শতাংশ শৌচাগার পরিদর্শন করে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়েছে ক্যাগ। রিপোর্টে বিশেষত, তালিকাভুক্ত অথচ অস্তিত্বহীন এবং অসম্পূর্ণ শৌচাগারের মত বিষয়গুলিতেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fourteen − two =