গ্রামীণ ভারতে ৬৮% স্বাস্থ্যকর্মীর বৈধ প্রশিক্ষণ নেই: সমীক্ষা

গ্রামীণ ভারতে ৬৮% স্বাস্থ্যকর্মীর বৈধ প্রশিক্ষণ নেই: সমীক্ষা

নয়াদিল্লি: করোনার মতো মহামারীর সঙ্গে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে গ্রামীণ ভারতের স্বাস্থ্যপরিষেবায় পরিকাঠামোর দুর্বলতাগুলির মধ্যে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারীদের বিধিসম্মত প্রশিক্ষণের অভাব৷ তবে এই দুর্বলতা যে দীর্ঘদিনের অবহেলার ফল, তা উঠে এল এক সমীক্ষা থেকে৷ সায়েন্সডাইরেক্টে'র সোশ্যাল সায়েন্স অ্যান্ড মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত সমীক্ষা থেকে উঠে এসেছে এমনই ভয়াবহ তথ্য৷

সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে, গ্রামীণ ভারতের ৬৮ শতাংশ স্বাস্থ্যপরিষেবায় কোনও বিধিসম্মত প্রশিক্ষণ নেই। সুতরাং বেআইনিভাবে ও স্বাস্থ্যনীতির আওতার বাইরে গিয়ে স্বাস্থ্য পরিষেবা পরিষেবা পরিচালিত হচ্ছে৷ গ্রামীণ ভারতের স্বাস্থ্যপরিষেবার দায়িত্ব তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে যাদের বিধিসম্মত বা বৈধ প্রশিক্ষণ নেই৷ 'টু ইন্ডিয়াস' শীর্ষক এই সমীক্ষাটি পরিচালনা করেছে জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি, সেন্টার ফর ইনোভেশন অ্যান্ড ইপপ্যাক্ট, গ্লোবাল হেল্থ ব্যুরো, ইউএসএআইডি, আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া এবং নিউ দিল্লির সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ৷

স্বাস্থ্যকর্মীদের সংখ্যা এবং তাঁদের চিকিৎসা সংক্রান্ত জ্ঞান যাচাই করতে গবেষকরা ভারতের ১৯ টি রাজ্যের ১,৫১৯ গ্রাম পরিদর্শন করে এই তথ্য প্রকাশ করেছেন। সমীক্ষায় দেখা গেছে ২০১০ থেকে গড়ে ভারতের গ্রামগুলিতে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারীর হার ৩.২ শতাংশ। এরমধ্যে ৮৬ শতাংশই ক্ষেত্রের এবং ৬৮ শতাংশ, তাদের কোনো বিধিসম্মত প্রশিক্ষণ নেই। ধনী রাজ্যগুলিতে এইধরণের স্বাস্থ্যকর্মীদের হার কোনো অংশে কম নয় তবে তাদের গুনগত মান যথেষ্ট উন্নত এবং রোগীপ্রতি খরচও কম।

 

সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে, বিহার ও উত্তর প্রদেশের পূর্ণ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডাক্তারদের তুলনায় তামিলনাড়ু ও কর্নাটকের বিধিসম্মত প্রশিক্ষণ নেই এমন স্বাস্থ্যকর্মীদের চিকিৎসা সংক্রান্ত জ্ঞান বেশি। আশ্চর্যজনকভাবে, আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে বিধিবহির্ভূত স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারীদের সংখ্যা কমছেনা। পরিবর্তে, বেসরকারী ও সরকারী খাতের চিকিত্সকদের মানের পাশাপাশি তাদের মানও তাৎপর্যপূর্ণভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেই সমীক্ষায় বলা হয়েছে।

সমীক্ষার ভিত্তিতে ৭৪ শতাংশ গ্রামের জন্য কমপক্ষে একটি স্বাস্থ্যপরিষেবা সরবরাহকারী ছিল। গ্তিন বা তারও বেশি পরিষেবা সরবরাহকারী আছে এমন গ্রামগুলিতে ৬৪ শতাংশ পরিষেবা দেওয়া হয়েছে। সর্বাধিক সরবরাহকারী (৮৬%) বেসরকারী খাতে। যোগ্যতার ক্ষেত্রে, পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৩,৪৭৩ সরবরাহকারীদের মধ্যে ২,৩৬৭ (68%) বেসরকারী খাতে বিধিবহির্ভূত সরবরাহকারী (আইপি), ৮৪২ জন ছিলেন আয়ুশ সরবরাহকারী (২৪%) এবং ২৬৪ (৪%) জন এমবিবিএস ডিগ্রিধারী ছিলেন।

সমীক্ষাটি এই বিষয়টির ওপর আলোকপাত করেছেন যে, পাবলিক সেক্টরের বেশি সংখ্যক যোগ্য চিকিতৎক বিধিবহির্ভূত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অযোগ্য স্বাস্থ্য পরিষেবা সরবরাহকারীদের প্রাধান্য কমিয়ে দিয়েছে তা নয়, বরং তাঁদের চিকৎসা সংক্রান্ত জ্ঞান বাড়িয়েছে। সেক্ষেত্রে উত্তরের রাজ্যগুলি যেখানে বেশি খরচে নিম্ন মানের স্বাস্থ্য পরিষেবা দিচ্ছে সেখানে দক্ষিণের রাজ্যগুলি রোগীপ্রতি কম খরচে উচ্চ মানের পরিষেবা দিয়ে থাকে।

সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে জাতীয় মেডিকেল বড়ইকমিশন আইন ১৯৯৯-এর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার প্রবর্তিত প্রস্তাবিত জাতীয় বহির্গমন পরীক্ষার জন্যও পরিস্থিতি জড়িত রয়েছে। হয় লো আইন অনুসারে, পৃথক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক মেডিকেল ডিগ্রি প্রদানকে কেন্দ্রিক পরীক্ষায় প্রতিস্থাপন করা হবে। সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে পুরো পরিস্থিতির ওপর ন্যশনাল মেডিক্যাল কমিশন অ্যাক্ট ২০১৯ এর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক উন্নিত প্রস্তাবিত 'ন্যশনাল এক্সিট টেস্টের' প্রভাব রয়েছে। যে আইন অনুসারে পৃথক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত মেডিক্যাল ডিগ্রী একটি কেন্দ্রিক পরীক্ষার দ্বারা প্রতিস্থাপিত করা সম্ভব।  

অর্থাৎ জাতীয় স্তরে বাদ পড়লে বহু রাজ্যে এমনও হয় যেখানে এমবিবিএস ডাক্তাররা এই টেস্টে উত্তীর্ণ হতে পারেন না। এর পরিবর্ত হিসেবে রয়েছে রাজ্য স্তরে বাদ পড়া। তবে সেখানে এই টেস্টের সমাধান কিভাবে সম্ভব তা স্পষ্ট নয়। হতে পারে বিধিবহির্ভূত ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারীদের অনেকেই রাজ্য স্তরের যোগ্যতাসম্পন্ন। এই বিষয়টিও সমীক্ষায় উল্লেখযোগ্যভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
সমীক্ষার তথ্য লিখেছেন যিষ্ণু দাস। তাঁর কথায়,  “রাজ্যগুলির ডাক্তারদের মধ্যে জ্ঞানের বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। সেক্ষেত্রে এই টেস্ট থেকে একজন বাদ পড়ার অর্থ তার রাজ্যগুলির ডাক্তার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।”

করোনা মহামারী দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর দুর্বলতাগুলিকে ব্যাপক স্বস্তি দিয়েছে। এগুলি শুধুমাত্র কম বিনিয়োগের জন্য নয় (যদিও এটি সমস্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ) তবে পরিষেবার মানের চ্যালেঞ্জ, গ্রামীন স্বাস্থ্যক্ষেত্রে জটিলতা (বেসরকারি ক্ষেত্রে অযোগ্যদের বিশেষ প্রাধান্য, পাশাপাশি সরকারি ক্ষেত্রে উচ্চতর যোগ্যতা সম্পন্ন দায়িত্বজ্ঞানহীন) এবং স্বাস্থ্যক্ষেত্রে  চ্যালেঞ্জগুলির জন্য ব্যক্তিগতভাবে নিজস্ব প্রতিক্রিয়া।” এমনটাই মনে করেন সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ-এর সভাপতি ও প্রধান কার্যনির্বাহী যামিনী আইয়ার। (সূত্র- লাইভমিন্ট)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *