প্রজাতন্ত্রের অনুষ্ঠানেও ‘গেরুয়াকরণ’! বাতিলের খাতায় বাংলা-সহ বহু রাজ্য

প্রজাতন্ত্রের অনুষ্ঠানেও ‘গেরুয়াকরণ’! বাতিলের খাতায় বাংলা-সহ বহু রাজ্য

নয়াদিল্লি: পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে সংঘাত আগেই বেঁধেছিল৷ এবার সেই তালিকায় যোগ হল মহারাষ্ট্র, বিহার, আর কেরল৷ এখন পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, এই চার রাজ্যেরই ট্যাবলো বাতিল করে দেওয়া হয়েছে দিল্লিতে প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওযাজে৷ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এক-একটি রাজ্যের ক্ষেত্রে এক-একরকম 'অছিলা' হলেও, সব পথ মিলে গিয়ে যে পথে দাঁড়াচ্ছে, তা হল মোদি-অমিত শাহের 'প্রতিশোধপরাণতা'র পথ৷

যদিও সরকারিভাবে কিছু জানা যায়নি, তবে সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের গোঁসার কারণ হল রাজ্যের সবচেয়ে সফল ও স্বীকৃতি প্রকল্প কন্যাশ্রী৷ রাজ্যের তরফ থেকে তিনটি ট্যাবলোর প্রস্তাব ছিল, কন্যাশ্রী, জল ধরো জল ভরো, সেভ গ্রিন স্টে ক্লিন৷ এদের মধ্যে কন্যাশ্রীর সাফল্য কার্যত চোখ টাটিয়েছে কেন্দ্রের৷ তাই কন্যাশ্রীকে বাতিল করতে বলা হয় বলে সূত্রের খবর৷ যাতে স্বভাবতই রাজি হয়নি রাজ্য৷

অন্যদিকে বিহারের ক্ষেত্রেও প্রায় একইরকম ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গিয়েছে৷ ওই রাজ্য থেকে ট্যাবলোয় থাকার কথা ছিল জল জীবন হরিয়ালি অভিযান৷ কেন্দ্রের যুক্তি একইরকম প্রকল্প নাকি তাদেরও রয়েছে৷ অতএব ওই ট্যাবলো চলবে না৷ মহারাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও ঘটেছে একই ঘটনা৷

এবছর দিল্লিতে প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে ২২টি ট্যাবলো অংশ নেবে বলে ঠিক হয়েছিল সংশ্লিষ্ট কমিটির বৈঠকে৷ এরমধ্যে ১৬টি রাজ্যের ও বাকি ৬টি বিভিন্ন মন্ত্রক ও দফতরের৷ অংশগ্রহণের জন্য ৩২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ও ২৪টি মন্ত্রক ও দফতর কেন্দ্রের কাছে আবেদন করেছিল৷ তারমধ্যে সব মিলিয়ে ২২টি ট্যাবলোকে বেছে নেওয়া হয়েছে বলে খবর৷

যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে দুটি কথা৷ এক, এবারে কুচকাওয়াজের সময় কমাতে ট্যাবলোর দৈর্ঘ্য নাকি কমানো হচ্ছে৷ দুই, ক্রাইটেরিয়া পূরণ করতে না-পারাতেই ওই রাজ্যগুলির ট্যাবলো বাতিল করা হচ্ছে৷ যদিও এই আপাত নিরীহ কারণের ভিতরে ঢুকলে যা দেখা যাচ্ছে, তা হল প্রতিশোধপরায়ণতা৷ রাজনৈতিক মহলের মতে, রাজ্যের সঙ্গে সম্পর্ক তিক্ত থেকে তিক্ততর হওয়াতেই এবার ট্যাবলোর অনুমতি খারিজ করে দিয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্র্ক৷ সম্প্রতি এনআরসি থেকে সিএএ-বিরোধী আন্দোলনে জোরদার ভূমিকা নিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ নাম না-করে মোদি-অমিত শাহকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন মমতা, এ-রাজ্যে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন লাগু করবেন না তিনি৷ কার্যত, তারপরই কেরল-সহ একাধিক রাজ্য বেঁকে বসে এই ইস্যুতে৷ কেরলে তো বিধানসভায় সিএএ বিরোধী একটি প্রস্তাবই পাশ করানো হয়৷ তাই পশ্চিমবঙ্গের ট্যাবলোর অনুমতি খারিজ করে এনডিএ তথা বিজেপি সরকার আরও একবার তাদের প্রতিশোধপরায়ণতার প্রমাণ দিলেন বলেই মনে করা হচ্ছে৷

কেরলকেও কিন্তু ট্যাবলোর অনুমতি দেওয়া হয়নি বলেই সূত্রের খবর৷ আর মহারাষ্ট্রে? বিজেপির সঙ্গে জোট না বেঁধে এনসিপি আর কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে সরকার গড়াতেই যে বিজেপির গোঁসা হয়েছে, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহল কার্যত দ্বিধাহীন৷ তাই সেক্ষেত্রেও সেই অদৃশ্য প্রতিশোধপরায়ণতা দেখছে রাজনৈতিক মহল৷ অন্যদিকে বিহারে জেডিইউ আগামী বিধানসভায় বেশি আসন দাবি করায় বিজেপি যথেষ্ট ক্ষুণ্ণ হয়েছে৷ সেখানে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন নীতিশ কুমারও৷ তাই সেক্ষেত্রেও সেই একইরকম প্রতিশোধপরায়ণতা দেখছে রাজনৈতিক মহল৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *