করোনা আবহে রামমন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও একগাদা অবান্তর প্রশ্ন!

করোনা আবহে রামমন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও একগাদা অবান্তর প্রশ্ন!

তপন মল্লিক চৌধুরী: ঘোষণা অনুযায়ী রামমন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু ভূমিপূজো শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগেই খবর পাওয়া গেল, করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বাবরি মসজিদ মামলায় ঐতিহাসিক রায় দেওয়া প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ।

প্রসঙ্গত, রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চই ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর অযোধ্যা মামলার রায় দিয়েছিল। সেই রাম মন্দিরের ভূমিপুজোর দিনেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেন মামলার রায় দেওয়া সুপ্রিম  কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি। প্রধান বিচারপতির পদ থকে অবসর গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতি মনোনীত রাজ্যসভার সাংসদ হন রঞ্জন গগৈ। বিরোধীরা গগৈয়ের সাংসদ পদে বসার বিষয়টিকে রামমন্দির মামলার রায় দানের পুরস্কার হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন।

আজ অযোধ্যায় উৎসব কিন্তু রামমন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের দিন একাধিক ঘটনা ঘটে গেল দেশজুরে। ভূমিপুজোর মাঝেই উত্তরপ্রদেশে ভয়াবহ করোনা আতঙ্ক ছড়াল। বুধবার অযোধ্যায় যখন উৎসব চলছে, তখন যোগী রাজ্যে করোনা আক্রান্ত হলেন মন্ত্রিসভার আরেক মন্ত্রী। তিনি আইনমন্ত্রী ব্রিজেশ পাঠক। প্রতিদিন নিজের রেকর্ড নিজেই ভাঙছে মারণ ভাইরাস সেখানে এমন জাঁকজমক করে মন্দিরের ভূমিপুজোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন অনেকেই। একথা তো অস্বীকার করা যাবে না, উত্তরপ্রদেশে করোনা যেন রীতিমতো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।

বুধবার সকালে নিজেই ট্যুইট করে করোনা আক্রান্তের হওয়ার খবর জানান ব্রিজেশ। লেখেন, 'আমার শরীরে করোনার কিছু উপসর্গ দেখতে পাওয়ার পর চিকিৎসকের কাছে যাই। তাঁর পরামর্শে আমি করোনার পরীক্ষা করাই। আমার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। সকলের কাছে আমার অনুরোধ, গত কয়েকদিনে যাঁরা আমার সংস্পর্শে এসেছেন, সরকারি নির্দেশিকা মেনে চলুন, সকলে করোনা টেস্ট করিয়ে নিন এবং অবশ্য নিজেদের কোয়ারানটিনে রাখুন।'

উল্লেখ্য, ব্রিজেশ পাঠককে নিয়ে যোগী সরকারের মন্ত্রিসভার ৯ সদস্য মারণ ভাইরাসে আক্রান্ত হলেন। শুধু তাই নয়, যোগী আদিত্যনাথের মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রী কমলা রানি বরুণের মৃত্যু হয় করোনা আক্রান্ত হয়ে। পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশ বিজেপির সভাপতি স্বতন্ত্র দেব সিংও আক্রান্ত হয়েছেন মারণ ভাইরাসে। শুধু কি তাই, যে রাম মন্দিরের পরিসরে আজ ভূমিপুজো হল সেখানকার এক পুরোহিত এবং সেখানে নিযুক্ত অন্তত ১৬ জন পুলিশকর্মীর করোনা ধরা পড়েছে। তারপরও এত রাজকীয় আয়োজন নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।

পাশাপাশি অনেকেরই প্রশ্ন, সরকারি নিয়ম মানলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীরও কোয়ারানটিনে থাকার কথা ছিল। কারণ গত বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক বসেছিল। সেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও পেট্রলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানও। অমিত শাহ ও ধর্মেন্দ্র প্রধান দুজনেই আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়। তাই নিয়ম অনুযায়ী কোয়ারানটিনে থাকার কথা ছিল মোদীর। কিন্তু তিনি ঘোষণা মতোই গেলেন অযোধ্যায়, প্রায় ঘণ্টা তিনেক কাটালেনও।

অন্যদিকে রামমন্দিরের আবহে কার্যত চাপা পড়ে গেল জম্মু-কাশ্মীরের  বিশেষ মর্যাদা তুলে নেওয়ার এক বছর পূর্তির দিন। আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণার এক বছর অতিক্রম করার দিনেও বস্তুত ঘরবন্দি রইল কাশ্মীর উপত্যকা। কার্ফুর ঘেরাটোপেই কাটল দিনটি। সর্বত্র সেনা-পুলিশের কড়া নজরদারি, নিয়ন্ত্রণ, মাইকে ঘরবন্দি থাকার ঘোষণা।

গত এক বছরে ঝিলম-শতদ্রু দিয়ে বয়ে গিয়েছে বহু জল। গ্রেফতার-গৃহবন্দি হয়েছেন উপত্যকার শীর্ষ রাজনীতিবিদরা। টানা প্রায় ছ’মাস ধরে উপত্যকায় কার্যত মাছি গলতে না দেওয়ার মতো নিরাপত্তায় মুড়ে দেওয়া হয়েছিল। ইন্টারনেট, কেবল, মোবাইল পরিষেবা, ল্যান্ডলাইন-সহ যাবতীয় যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে কাশ্মীরকে কার্যত বহির্বিশ্বের সঙ্গে আলাদা করে ফেলা হয়েছিল। ওই সময় সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের সদস্য বা সাধারণ নাগরিক— বাইরের কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি শ্রীনগরে। এমনকি, কাশ্মীরের বাসিন্দা যাঁরা বাইরে আটকে পড়েছিলেন, তাঁরাও ঘরে ফিরতে পারেননি অনেকে। ফের নতুন করে কার্ফুতে ফের ঘরে ঢুকে পড়ল উপত্যকা।

সোশ্যাল মিডিয়াজুড়ে প্রশ্ন, স্বাস্থ্যের জন্য যখন টাকা নেই। প্রয়োজনীয় কিট নেই। তখন হাজার হাজার কোটি টাকার মন্দির প্রতিষ্ঠা করা এখুনি খুব প্রয়োজন ছিল? পরিযায়ী শ্রমিকদের সাহায্য করার ক্ষমতা নেই যে রাষ্ট্রের সে রাষ্ট্রই গড়ছে হাজার-লক্ষ-কোটি টাকার মন্দির। যদিও একজন প্রাক্তন আইএএস-এর বক্তব্য অনুযায়ী শ্রমিকদের জন্য ফান্ড আছে। কিন্তু তাদের সাহায্যের জন্য সেই ফান্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *