ড্রাগন নজর থেকে লাদাখ বাঁচাতে সেনা-কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক রাজনাথের

ড্রাগন নজর থেকে লাদাখ বাঁচাতে সেনা-কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক রাজনাথের

 

নয়াদিল্লি:  প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় চিনা আগ্রাসনে ক্রমাগত চড়ছিল উত্তেজনার পারদ৷ সামরিক স্তরে একাধিক বৈঠকেও কাটেনি জট৷ কিন্তু চিনের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের বৈঠকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ছবিটা বদলাতে শুরু করে। পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে পিছু হটে যায় লাল ফৌজ। তবে ড্রাগন নজর থেকে লাদাখকে রক্ষা করতে সজাগ রয়েছে ভারত৷ চিনের উপর আস্থা রেখে সীমান্ত ইস্যুকে হালকা চালে নিতে নারাজ নয়াদিল্লি৷ পূর্ব লাদাখের বর্তমান অবস্থা কী, সে বিষয়ে এদিন সেনা আধিকারিকদের সঙ্গে বিস্তৃত আলোচনা করলেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং৷ চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মির গতিবিধি নিয়েও সেনা আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা করেন তিনি৷ 

শুক্রবার বিকেলে এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিল রাওয়াত, সেনাপ্রধান এমএম নারাভানে, নৌসেনা প্রধান অ্যাডমিরাল করমবীর সিং এবং বায়ুসেনা প্রধান আরকেএস ভাদৌরিয়া৷ উপস্থিত ছিলেন সেনার অন্যান্য উচ্চপদস্থ অফিসাররাও৷ সূত্রের খবর, এদিন গালওয়ান, গোগরা, হট স্প্রিং এবং প্যাংগং –এর ফিঙ্গার ৪ এলাকা থেকে প্রথম পর্যায়ের ডিসএনগেজমেন্ট বা সেনা পিছনো নিয়ে রাজনাথকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন জেনারেল নারাভানে৷ সেইসঙ্গে পূর্ব লাদাখ সীমান্তে যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য কতটা প্রস্তুত রয়েছে ভারতীয় সেনা, সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে অবগত করান সেনা প্রধান৷ পাশাপাশি প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় অবস্থিত অরুণাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড এবং সিকিমের সংবেদনশীল অঞ্চলগুলির পরিস্থিতি সম্পর্কেও রাজনাথকে বিস্তারিত জানানো হয়৷ 

লাদাখ সীমান্তে প্রথম পর্যায়ের ডিসএনগেজমেন্টের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে৷ এরই মধ্যে চতুর্থ দফায় কোর কমান্ডার স্তরে বৈঠকে বসতে চলেছে ভারত ও চিন৷ আগামী সপ্তাহের গোড়াতেই বৈঠকে বসবে দু’দেশ৷  সূত্রের খবর, এই বৈঠকের মূল অ্যাজেন্ডা হতে চলেছে ফিঙ্গার এলাকা ও ডেপস্যাং সমতল ভূমি।  এদিকে, দুই পক্ষের সেনা বাহিনীই পিছনে সরার ফলে গালওয়ান উপত্যকা, গোগরা এবং হট স্প্রিং এলাকার মাঝে তিন কিলোমিটার জায়গা জুড়ে তৈরি হয়েছে একটি নিরপেক্ষ অঞ্চল বা ‘বাফার জোন।’ সূত্র মারফত এও জানা গিয়েছে, দু’পক্ষই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে তাদের অস্থায়ী কাঠামো সরিয়ে নিয়েছে। প্যাংগং-এর ফিঙ্গার ৪ অঞ্চল থেকেও সরানো হচ্ছে সেনা৷ 

গত রবিবার ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে চিনের বিদেশমন্ত্রীর বৈঠকের পরেই দুই দেশ সীমান্ত থেকে তিন দফায় সেনা সরানোর চুক্তি করে। সেই মতো কাজ হচ্ছে সীমান্তে। এর আগে গত আট সপ্তাহ ধরে সীমান্তে চোখে চোখ অবস্থানে দাঁড়িয়ে ছিল ভারত ও চিন সেনা৷ গত ১৫ মে গালওয়ান উপত্যকায় দু’দেশের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের প্রাণ হারান ২০ ভাতীয় জওয়ান৷ উত্তেজনা প্রশমিত করতে সামরিক স্তরে দফায় দফায় বৈঠক হয়৷ অবশেষে জট কাটে দোভালের ফোনে৷  সীমান্তে সেনা প্রত্যাহারের চুক্তি যাতে কোনও ভাবে লঙ্ঘিত না হয়, সেদিকে নজর রাখছে ভারতীয় সেনা। এর জন্য দিনে-রাতে বায়ুসেনার বিমান ও হেলিকপ্টর টহল দিচ্ছে লাদাখের সীমান্ত জুড়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nine − 9 =