রাহুলকে গলা ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে গ্রেফতার করল যোগীর পুলিশ

রাহুলকে গলা ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে গ্রেফতার করল যোগীর পুলিশ

লখনউ: যোগীর প্রদেশে ‘গণধর্ষিতা’ যুবতীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের চরম বাধার মুখে পড়লেন রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী৷ রাজপথে রাহুলের গলা ধাক্কা দিয়ে মাটিয়ে আছড়ে ফেলল যোগীর পুলিশ৷ পুলিশের তাণ্ডবে মাটিতে পড়ে গিয়ে হাতে গুরুতর চোট পান রাহুল গান্ধী৷ পরে রাহুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ রাহুল ও প্রিয়াঙ্কাকে গ্রেফতারের পর স্থানীয় একটি গেস্টহাউজে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় পুলিশের তরফে৷ সেখানে তাঁদের আটকে রাখা হয়৷  রাহুল ও প্রিয়াঙ্কার গ্রেফতারির প্রতিবাদে দিল্লি-নয়ডা হাইওয়ে বসে পড়েন কংগ্রেস কর্মীরা৷ পরে, কংগ্রেস কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে বেপরোয়া লাঠি চার্জ করে পুলিশ৷ পুলিশ ও কংগ্রেস কর্মীদের খণ্ডযুদ্ধে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় গোটা এলাকা৷

আজ দুপুরে হাতরাসে  ‘গণধর্ষিতা’ যুবতীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা৷ সঙ্গে রয়েছেন অধীর চৌধুরী৷ অভিযোগ, কংগ্রেস প্রতিনিধি দল রওয়ানা হতেই নয়ডায় তাঁদের গাড়ি আটকে দেওয়া হয়৷ হাতরাসের সমস্ত রাস্তা সিল করে দেওয়া পুলিশ৷ বন্ধ করে দেওয়া হয় দিল্লি-নয়ডা হাইওয়ে৷ জারি করা হয় ১৪৪ ধারা৷  দিল্লি-নয়ডা হাইওয়ের উপর পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন কংগ্রেসের কর্মীরা৷ পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে এগোনোর চেষ্টা করেন রাহুল৷ এরপর মারমুখি হয়ে ওঠে যোগীর পুলিশ৷ শুরু হয় লাঠিচার্জ৷ রাহুল গান্ধীকে গালা ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয় যোগীর পুলিশ৷ মুহূর্তেই মাটিতে পড়ে যান তিনি৷ হাতে আঘাত লাগে তাঁর৷ পরিস্থিতি সামালে শেষপর্যন্ত পায়ে হেঁটে এগোনোর চেষ্টা করেন রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা৷ কিছুটা এগিয়ে রাস্তায় বসে পড়েন তাঁরা৷ ১৪৪ ধারা লঙ্ঘন করার দায়ে রাহুল  ও প্রিয়াঙ্কাকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ তাঁদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় একটি গেস্টহাউজে৷ গ্রেফতারির প্রতিবাদে রাজপথে ধর্নায় বসে পড়েন কংগ্রেস কর্মীরা৷ পরে, লাঠিচার্জ করে কংগ্রেস কর্মীদের হঠিয়ে দেয় পুলিশ৷ বেশ কিছু কংগ্রেস কর্মীকেও করা হয় গ্রেফতার৷

অন্যদিকে, ধর্ষণের ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন উত্তর প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী৷ তিনি বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশে অপরাধ হচ্ছে না, এমন একটা দিনও নেই৷ আমার বিশ্বাস এই ঘটনায় অপরাধীদের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার কড়া ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু এরই পাশে একই ধরনের আরও একটি অপরাধ ঘটে গেল বলরামপুরে। আসলে রাজ্যে বিজেপি জমানায় অপরাধী, মাফিয়া, ধর্ষক সকলেই মুক্ত হয়ে ঘুরে বেরাচ্ছে। মহিলাদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ যোগী আদিত্যনাথের সরকার৷’’ তাঁর পদত্যাগ করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন বিএসপি নেত্রী। তিনি বলেন, যোগী আদিত্যনাথ রাজ্যে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করতে ব্যর্থ। কেন্দ্রের উচিত তাঁকে তাঁর যোগ্য স্থানে (গোরক্ষনাথ মঠে) পাঠিয়ে দেওয়া৷ 

সোনিয়া গান্ধীও কড়া ভাষায় আক্রমণ শানিয়েছেন যাগী আদিত্যনাথকে৷ তিনি বলেন, ‘‘ওই তরুণীর মৃত্যু হয়নি৷ তাঁকে খুন করেছে সে রাজ্যের নির্মম সরকার৷ তাঁর দেহ জোড় করে দাহ করা হয়েছে৷ দেশের কোটি কোটি মানুষ এই ঘটনায় ব্যথিত৷’’ হাতরাসকাণ্ডের পরই বলরামপুরে একই ধরনের ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসার পরই এক হাত নেন কংগ্রেস নেতা রনদীপ সুরজেওয়ালাও৷ পাল্টা জবাবে উত্তর প্রদেশের মন্ত্রী সিদ্ধার্থ নাথ সিং বলেন, এই ঘটনাকে নিয়ে রাজনীতি করতে চাইছে কংগ্রেস৷

এদিকে অপরাধীদের সাজা দিতে ৩ সদস্যের স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট) গঠন করা হয়েছে৷ গতকালই হাতরাসে গিয়ে নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন সিট অফিসাররা৷ ঘুরে দেখেন ঘটনাস্থল৷ তদন্তকারী অফিসাররা এখন ওই গ্রামেই রয়েছেন৷ এদিকে, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের জওহরলাল নেহরু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ওই তরুণীর রিপোর্টে জখমের কথা উল্লেখ করলেও ধর্ষণের কথা উল্লেখ করেনি৷ তারা ফরেন্সিক রিপোর্ট হাতে পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে৷ এই হাসপাতালেই দুই সপ্তাহ চিকিৎসাধীন ছিলেন হাতরাসের নির্যাতিতা তরুণী৷ জেএনএমসি-র প্রিন্সিপল বলেন, তাঁকে কেন এখান থেকে দিল্লির সফদরজঙ্গ হাসপাতালে ভর্তি করা হল, সে বিষয়ে তাঁর কোনও ধারণা নেই৷ কারণ জেএনএমসি থেকে দিল্লি এইমস-এ বদলি করা হয়েছিল ওই তকরুণীকে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eleven + 11 =