কলকাতা: বাঙালির পর্যটনের অন্যতম কেন্দ্র হল পুরী৷ জগন্নাথধামে পুজো দেওয়ার পাশাপাশি নীল জলরাশির হাতছানি বারবার টেনে নিয়ে গিয়েছে পর্যটকদের৷ কিন্তু সাগরের জলে গা ভেজালেই ঘটছে বিপত্তি৷ গায়ে দেখা দিচ্ছে ফুসকুড়ি। শরীরে দেখা দিতে পারে ব়্যাশ। চুলকানির সঙ্গে জ্বালাপোড়ায় নাজেহাল হতে পারেন পর্যটকরা। গত তিন চার দিন ধরে পুরী বেড়াতে গিয়ে এমনই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে পর্যটকদের। যা নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে পুরীর সমুদ্র সৈকতে৷ কিন্ত কেন এই বিপত্তি?
জানা গিয়েছে, বেশ কয়েকদিন ধরেই পুরীর সমুদ্র সৈকতে বালিরাশির উপর স্তরে স্তরে পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে প্রচুর সংখ্যক মৃত জেলিফিশ। লাল এই মৃত জেলিফিশ থিক থিক করছে সি বিচে। এই মরা জেলিফিশের সংস্পর্শে এসেই ত্বকের সমস্যায় ভুগছেন পর্যটকরা৷ দেখা দিচ্ছে ফুসকুড়ি, ব়্যাশ। অসহ্য জ্বালা আর চুলকানিতে পণ্ড হচ্ছে ঘোরা।
সম্প্রতি পুরী ফেরত বেশ কিছু পর্যটক ত্বকের সমস্যার কথা জানিয়েছেন৷ তাঁরা জানিয়েছেন, সমুদ্রস্নান সারার পরেই শরীরে চুলকানির মতো সমস্যা দেখা দিয়েছে। মরা জেলিফিসের সংস্পর্শে আসার ফলেই এই সমস্যা বলে তাদের অনুমান। পুরীর সমুদ্র সৈকতে সবচেয়ে জনপ্রিয় এলাকা স্বর্গদুয়ার। এই সি বিচে সবসময়ই পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে৷ স্বর্গদুয়ার থেকে শুরু করে লাইট হাউস পর্যন্ত সমুদ্র সৈকতে সারি সারি মৃত জেলিফিসের দেহ পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে৷ বালির মধ্যেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে জেলিফিশের দেহাবশেষ। পরিস্থিতি এমন যে, সমুদ্রে যেতেই ভয় পাচ্ছেন পর্যটকরা। আর এই খবর চাউর হতেই বহু মানুষ পুরী বেড়ানোর পরিকল্পনা বাতিল করছেন৷
মেরিন সায়েনটিস্ট জ্ঞানরঞ্জন সাহু জানান, সাধারণত জেলিফিস গভীর সমুদ্রে থাকে। সমুদ্রে কোনও বড় ঝড় হলে, তখন তা ভাসতে ভাসতে সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় চলে আসে। কয়েকদিন আগেই বঙ্গোপসাগরে তাণ্ডব চালায় ঘূর্ণিঝড় মোকা৷ তার জেরেই সম্ভবত মৃত জেলিফিসগুলি পুরীর সমুদ্র সৈকতে চলে এসেছে।
ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় মরা জেলিফিশে ভর্তি সৈকতের ছবি ভাইরাল হয়েছে৷ এর ফলে জগন্নাথধামে পর্যটক কমার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা৷ সমুদ্রে সৈকতে পড়ে থাকা জেলিফিশের মৃতদেহ অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
মেরিন ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের শীর্ষ বিজ্ঞানী রাজেশ প্রধান বলেন, “সম্প্রতি পুরীর সমুদ্র সৈকতে প্রচুর মৃত জেলিফিশ ভেসে আসতে দেখা গিয়েছে। এর পিছনে মূলত তিনটে কারণ থাকতে পারে। ঘূর্ণিঝড় মোকা, আচমকা তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া এবং জোয়ার। প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং আবহাওয়া পরিবর্তনের জেরেই প্রচুর জেলিফিশের মৃত্যু হয়েছে৷ আর সেগুলি ভাসতে ভাসতে সমুদ্রে সৈকতে উঠে আসছে। সেখানেই সমস্যার উৎপত্তি।”
বিজ্ঞানী রাজেশ প্রধান আরও বলেন, “এগুলি একটি নির্দিষ্ট প্রজাতির জেলিফিশ। তবে এগুলি খুব বেশি ক্ষতিকর নয়। যদি মৃত জেলিফিশের সংস্পর্শে এসে কারও চুলকানির সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে শরীরের সেই অংশটি ভিনেগার দিয়ে ধুয়ে ফেলতে পারেন। এতে সমস্যা অনেকটাই লাঘব হবে। এই বিষয়ে আমরা বিস্তারিত গবেষণা চালাচ্ছি।”
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>