কোহিমা: তাঁর জন্ম হরিয়ানায়৷ সেখানেই বেড়ে ওঠা৷ পড়াশোনায় বরাবরই মেধাবী৷ স্কুলের পাঠ শেষ করে ভর্তি হন ডাক্তারিতে৷ তার পর দাঁতের চিকিৎসক হয়ে শুরু করেন রোগীর দেখভাল৷ বেশ কিছু দিন ডাক্তারিও করেন তিনি৷ কিন্তু মন সায় দিচ্ছিল না৷ সমাজের জন্য আরও বেশি কিছু করতে চাইছিলেন৷ তাই সব ছেড়ে শুরু করলেন অন্য লড়াই৷ নিজেকে তৈরি করেন ইউপিএসসি পরীক্ষার জন্য৷
আরও পড়ুন- ফের ১৩ হাজার পেরল দেশের দৈনিক আক্রান্ত! সুস্থতায় স্বস্তি কিছুটা
উত্তর পূর্বে অবস্থিত নাগাল্যান্ডের প্রত্যন্ত এক জেলা নোকলাক৷ বর্তমানে সেখানেই পোস্টিং আইপিএস অফিসার প্রীতপালের৷ তবে তিনি শুধু পুলিশের বড় কর্তাই নন৷ তিনি একাধারে চিকিৎসক, কাউন্সিলর এবং শিক্ষকও বটে৷ ২০১৬ সালে ইউপিএসসি পাশ করে প্রথম পোস্টিং নিয়ে নাগাল্যান্ডে চলে আসেন প্রীতপাল৷ তবে এমন প্রত্যন্ত জায়গায় চাকরি পেয়ে একবারও বদলির চেষ্টা করেননি তিনি৷ বরং নিজের সবটুকু উজার করে দিয়েছেন সেই জেলার মানুষগুলোর জন্যে৷ উন্নত পরিকাঠামোর জন্যেই শুধু নয়, প্রীতপাল লড়ে চলেছেন স্থানীয় কিশোর-কিশোরীদের ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসার যোগ্য করে তোলার জন্যে৷
স্থানীয় ছেলেমেয়েগুলোকে বড্ড ভালোবেসে ফেলেছেন প্রীতপাল৷ তাই তো পুলিশের কয়েকজন উচ্চপদস্থ অফিসার এবং প্রশাসনিক প্রধানকেও রাজি করিয়েছেন বিনামূল্যে তাঁদের পড়ানোর জন্যে৷ আপাতত জেলা পুলিশ সুপারের একটি ঘরে বসে প্রীতপালের ক্লাসরুম৷ নিজের বিদ্যা, পরিশ্রম আর ইচ্ছাশক্তি দিয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন নাগাল্যান্ডের ‘ঘরের মেয়ে’৷
প্রীতপালের কোচিং ক্লাসে ৩০ জন পড়ুয়া আছেন৷ তাঁর মধ্যে সাত পড়ুয়া রাজ্য সিভিল সার্ভিস-এর প্রথম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন৷ বাকিরা সকলেই ছোট খাটো কাজ করেন৷ সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত তাঁদের স্পেশাল ক্লাস করান প্রীতপাল৷ মায়ানমার সীমান্ত লাগোয়া ছোট্ট গ্রামে উন্নয়নের ছোঁয়া খুবই কম৷ প্রীতপাল নিজের বেতনের একটা অংশ দিয়েই এই ছেলেমেয়েদের পড়ান৷ শিক্ষার দিক থেকে পিছিয়ে পড়া নোকলাকের উন্নয়নে তাই নিরন্তর পরিশ্রম করে চলেছেন এই আইপিএস অফিসার৷
সীমান্ত লাগোয়া নোকলাক জেলায় আরও একটি সমস্যা রয়েছে৷ এখানে মাদকের রমরমা অত্যন্ত বেশি। খুব কম বয়সেই ছেলে-মেয়েরা মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। সেই অন্ধকার জগৎ থেকেও তাঁদের আলোয় নিয়ে আসাটা প্রীতপালের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ৷ নেশা ছাড়াতে তিনি নিজে কাউন্সেলিং করেন৷ ওষুধও লিখে দেন।