২১ দিনের লকডাউন: আদৌ জিতবে ভারত? নাকি থমকে যাবে দেশের গতি?

২১ দিনের লকডাউন: আদৌ জিতবে ভারত? নাকি থমকে যাবে দেশের গতি?

নয়াদিল্লি: সালটা ২০১৬৷ টেলিভিশনের মাধ্যমে দেশবাসীর সামনে উপস্থিত হয়ে রাতারাতি অধিকাংশ পুরনো নোট বাতিলের কথা ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ তাঁর এই সিদ্ধান্তে ঝড় উঠেছিল সারা দেশে৷ মঙ্গলবার রাতে আরও একবার বলিষ্ঠ পদক্ষেপ করলেন প্রধানমন্ত্রী৷ এদিন মধ্যরাত থেকে ২১ দিনের জন্য লকডাউন করলেন ১৩০ কোটির দেশ৷

নরেন্দ্র মোদীর রাজনৈতিক দক্ষতা বন্দিত হয়েছে বিশ্ব রাজনীতির আঙিনায়৷ তিনি এমন একজন রাজনীতিবিদ, যিনি ভোটারদের মন ছুঁতে সঠিক সময়ে নিজের দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন৷ গত রবিবার দেশে ‘জনতা কার্ফু’র ডাক দিয়েছিলেন তিনি৷ আর্জি জানিয়ছিলেন, সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করে চলা স্বাস্থ্যকর্মীদের উৎসাহিত করতে বিকেল পাঁচটায় নিজেদের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে হাতহাতি দিতে৷ কিন্তু দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তাঁর এই আবেদনকে হাস্যকর করে তোলে কিছু মানুষ৷ প্রশংসার হাততালি রাস্তায় উৎসবের রূপ নেয়৷ কাঁসর-ঘণ্টা বাজিয়ে বেড়িয়ে পড়েন আমজনতা৷ এর পরই আরও কড়া পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেন নমো৷ ২১ দিনের জন্য লকডাইন করেন গোটা দেশ৷ তিনি বলেন, বহু মানুষ পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে চাইছেন না৷ এই সময় কঠিন সিদ্ধান্ত না নিলে আগামী ২১ বছরের জন্য পিছিয়ে যাবে দেশ৷

পরিস্থিতি বিচার করেই এই সিদ্ধান্ত নিতে খানিকটা বাধ্য হন নরেন্দ্র মোদী৷ বিস্তৃত পরীক্ষা চালু হওয়ার পর দেখা গিয়েছে এই মারণ রোগ ক্রমেই গ্রাস করতে শুরু করেছে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তকে৷ একের পর এক রাজ্যে শুরু হয়েছে লকডাউন-কার্ফু৷ দেখা গেল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের আগেই বহু রাজ্য একাধিক বিধি নিষেধ আরোপ করে ফেলেছে৷ দীর্ঘ সময়ের জন্য লকডাউন জারি করা যথেষ্ট কঠিন কাজ৷ ভারতের মতো দেশ, যেখানে অধিকাংশ মানুষ দিন আনে দিন খায়, তাঁদের কাছে এই সিদ্ধান্ত সত্যিই চ্যালেঞ্জিং৷ তিন সপ্তাহের লকডাউন ইতিমধ্যেই বহু মানুষকে সমস্যায় ফেলেছে৷ পরবর্তী সময়ে ঘন ঘন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া কখনোই সম্ভব নয়৷ এখন প্রশ্ন হল ভারত কি খুব শীঘ্রই এই সিদ্ধান্ত নিল? নাকি অনেক দেরিতে৷

করোনা টেস্টের দিক থেকে অনেকটাই ধীর গতিতে চলছে ভারত৷ ভ্রমণকারীদের স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টাইনে থাকার ব্যবস্থাতেও রয়েছে বড় গলদ৷ যতদিনে নড়াচড়ে বসেছে দেশে, ততদিনে পাখা মেলতে শুরু করেছে নোভেল করোনাভাইরাস৷

সত্যি কথা বলতে, কেন্দ্রীয় সরকারকে এই বিষয়ে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী মনে হয়েছিল৷ ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকে কংগ্রেস শিবিরের নেতারা বলেছিলেন, ভাইরাস ‘নিয়ন্ত্রণে’ রয়েছে বলে কেন্দ্রীয় সরকার যে আশ্বাস দিচ্ছেন, তা অনেকটাই ‘ডুবন্ত টাইটানিক যাত্রীদের আতঙ্কিত হতে বারণ করার মতো শোনাচ্ছে’৷  এর জবাবে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ট্যুইট করে বলেছিলেন, ইতিহাসের ভয়ঙ্কর জাহাজডুবির ঘটনার সঙ্গে করোনাভাইরাসের তুলনা করা উচিত নয় বিরোধীদের৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-র পক্ষ থেকেও বলা হয়েছিল আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই৷ কিন্তু পাশা এখন অনেকটাই বদলে গিয়েছে৷

এই ২১ দিনের লকডাউন কতটা সফল হবে তা অনেকটাই নির্ভর করছে রাজ্য সরকারগুলির উপর৷ তাদের নজরদারির এবং রাজ্যের একটি বড় অংশের মানুষের কাছে প্রয়োজনীয় জিনিস কতটা পৌঁছে দিতে পারছেন তার উপর৷ এক শ্রেণির মানুষের হাতে প্রয়োজনীয় সামগ্রী না পৌঁছলে তাঁদের বেঁচে থাকাটাই দায় হয়ে দাঁড়াবে৷ যে দেশে একটি ঘরে ১২ জন পরিযায়ী শ্রমিক বাস করেন সেখানে লকডাউনের সিদ্ধান্তে প্রশ্নের মুখে পড়েছে রাজ্যগুলি? সংক্রমণের সম্ভাবনা উস্কে এই পরিযায়ী শ্রমিকদের কি রাজ্যে ফিরিয়ে আনা হবে? এর চেয়েও বড় প্রশ্ন ভারতের অধিকাংশ শ্রমিক শ্রেণি এই তিন সপ্তাহের লকডাউনে খাবে কি? এই অবস্থায় নীচু তলার এই মানুষগুলোর পাশে থাকতে হবে রাজ্যগুলিকেই৷

প্রধানমন্ত্রীর কাছে লকডাউন ছাড়া এই মুহূর্তে আর কোনও পথ খোলা ছিল না৷ তদুপরী বৃহত্তর পদক্ষেপ করার প্রবণতাও রয়েছে তাঁর মধ্যে ভরপুর৷ ২১ দিনের জন্য লকডাউন ১৩১ কোটির দেশ৷ এই জুয়া কতটা সফল হবে, সেই উত্তর মিলবে তিন সপ্তাহ পরই৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nine − 2 =