নয়াদিল্লি: সংবাদপত্র বেরচ্ছে ঠিকই কিন্তু তাতে কোনও সংবাদ নেই, শুধু কালো কালো ব্লক। এমনটাই ঘটেছিল ১৯৭৫ থেকে ’৭৭, জরুরি অবস্থার সময়ে। ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করে নেওয়া হয়েছিল, ফলে প্রতিবাদ স্বরূপ লেখা ছাড়াই কাগজ প্রকাশ করে একাধিক সংবাদমাধ্যম। ওই ২১ মাস ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে কালো দিন হিসেবে মনে করেন অনেকেই। আবার সেই কালো দিন মনে করাল প্রসার ভারতী। কেন্দ্র সরকার পরিচালিত এই সম্প্রচার সংস্থা সরাসরি ‘জাতীয়তা-বিরোধী’ বলে দাগিয়ে দেল দেশের সবথেকে পুরনো এবং বড় সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে। লাদাখ সীমান্তে চীনের অনুপ্রবেশ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন ও একটি সাক্ষাৎকার নিয়ে পিটিআই-এর ওপর ব্যাপক ক্ষুব্ধ প্রসার ভারতী।
প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া (পিটিআই)-কে রীতিমতো হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে প্রসার ভারতী। চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘এমন জাতীয়তা-বিরোধী খবরের পরে পিটিআইয়ের সঙ্গে আর সম্পর্ক রাখা সম্ভব নয়।’ সম্প্রচার মন্ত্রক থেকে পাওয়া সাবস্ক্রিপশনের টাকা দেওয়া বন্ধ করার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। অতি সম্প্রতি, নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছিলেন, লাদাখ সীমান্তে কোনও চীনা অনুপ্রবেশ হয়নি। তাহলে ২০ জওয়ানের মৃত্যু কী করে হল তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। গোটা বিষয়টাই ধোঁয়াশার মধ্যে। এর মধ্যে বেজিংয়ে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিক্রম মিস্রিকে উদ্ধৃত করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে পিটিআই। বিক্রম বলেন, ‘ভারতের আশা, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে শীঘ্রই পিছু হটবে চীনা সেনা।’ এ কথা থেকে পাঁচ বছরের শিশু বুঝতে পারবে, চীন ভারতে অনুপ্রবেশ করেছিল। এই বক্তব্য সরাসরি খণ্ডন করছে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতিতে।
এখানেই কোপ পড়েছে পিটিআই-এর ওপর। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরে, দেশের সাধারণ জনতা থেকে কত নেতা-নেত্রী সেলিব্রিটি ‘দেশবিরোধী’ বা ‘জাতীয় স্বার্থবিরোধী’ তকমা পেয়েছেন, তার হিসেব নেই। প্রায় সবক্ষেত্রেই ‘দোষ’ সরকার কিংবা মোদীর সমালোচনা করা। এবার রেহাই পেল না দেশের সর্ববৃহৎ সংবাদমাধ্যমও। অবশ্য, কয়েক বছর ধরেই স্বাধীন সংবাদ মাধ্যমগুলির কণ্ঠরোধের চেষ্টা চলেছে। সত্য প্রকাশ এবং সরকারের দিকে আঙুল তুললেই নেওয়া হচ্ছে ‘ব্যবস্থা’। ২০১৬-১৭ সালে প্রসার ভারতী থেকে পিটিআই-কে সাবস্ক্রিপশন বাবদ ন’ কোটি টাকার বেশি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরের বছরেই ২৫ শতাংশ কমিয়ে দেওয়া হয়। চীনা অনুপ্রবেশ সংক্রান্ত খবর প্রকাশের পর এবার পুরো টাকাটাই দেওয়া বাতিল হবে কি না সেটাই প্রশ্ন। মনে হচ্ছে জরুরি অবস্থার ‘কালো দিন’ ফিরে এল।